Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সচেতন লোকদের প্রতি নসিহত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

জেনে রাখা দরকার যে, ইসলামী বিধি বিধান অনুযায়ী বিচার মিমাংসা সম্পাদনকারীকে শুধু ইসলামী বিধান অনুযায়ী খেদমতের কারণে লঞ্ছনা, অবমাননা, হাসি-তামাসা ও বিদ্রুপের লক্ষ্য স্থলে পরিণত করা কিংবা শত্রুতা বশতঃ হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে তাঁকে অন্যায়ভাবে বিপদ-আপদের সম্মুখে ঢেলে দেয়া কুফরী কাজ। এর দ্বারা কুফরের গোনাহ লাজেম হবে। কিন্তু এ সকল কর্মকান্ডের দ্বারা যদি ইসলামী বিধি বিধানের অবমাননা, বিরোধীতা, বিদ্রুপ ও তাচ্ছিল্য উদ্দেশ্য না হয়, বরং তা’ নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বিদ্রুপের উদ্দেশ্যে হয় তবে একে কুফর বলে গণ্য করা যাবে না।

এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আপনি বলুন : তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত, ও তাঁর রাসূলের সাথে উপহাস করছ? এ ধরনের কাজের পরে কোনো ওজর আপত্তি উত্থাপন করো না। এটা নিশ্চিত যে, তোমরা ঈমান আনয়্নের পর কুফুরী করছ।’ (সূরা তাওবাহ : আয়াত ৬৫-৬৬)। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী শরীয়তের কোনো হুকুমের প্রতি উপহাসও বিদ্রুপ করা কুফরী কাজ। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ১৭৬)।

যে ব্যক্তি কোরআন মাজীদের কিরাআত শোনার পর বিদ্রুপের স্বরে বলে যে, এতো কবি তোরফার কবিতা তুল্য তবে সে, কাফির বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ কোরআনের বাণী শ্রবণ করার পর উপহাস ও বিদ্রুপের ইচ্ছায় যে বলে, কত সুন্দর সঙ্গীত, তাহলে তা’ কুফুরী বলে বিবেচিত হবে। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ১৬৮)। ইসলামী শরীয়তের প্রতি তাচ্ছিল্য ও বিদ্রুপ করা কুফরী। কারণ এই জাতীয় উক্তি ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ইসলামী শরীয়তকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার শামিল ও নির্দশন। এই নীতি ও বিধানের ওপর ভিত্তি করেই বলা যায় যে, হালালকে হারাম সাব্যস্তকারী বা হারামকে হালাল জ্ঞানকারী এবং শরীয়তের বিদ্রুপকারীর ওপর কুফুরীর হুকুম আরোপিত হবে। (নিবরাস : পৃষ্ঠা ৩৩৯)।

যদি কোনো ব্যক্তি কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামী শরীয়াতের বিধিমালা থেকে অনৈসলামিক বিধিমালাকে উত্তম ও অধিক উপযোগী বলে জ্ঞান করে, তবে সে ইসলামী গন্ডির বহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে। যেমন যদি কেউ বলে, চোরের শাস্তি একমাস বন্দি জীবন যাপন করা অথবা ব্যভিচারের শাস্তি দশটি বেত্রাঘাত করা ইসলামের আইন অপেক্ষা অধিক যুক্তি সঙ্গত, তাহলে সে ইসলামী সীমারেখা হতে বের হয়ে গেছে, এটা সুনিশ্চিত।

খুলাসাসহ অন্যান্য আকর গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, যখন কারো ও একটি মাসআলাতে বা ব্যাপারে একাধিক এমন দিক বিদ্যমান থাকে যার একটিতে কুফুরীর হুকুম বহন করে এবং অপরদিকটি এমন যা কুফুরীকে প্রতিহত করে, তাহলে মুসলমানদের প্রতি ‘হুসনে জন অর্থাৎ সুধারণা রাখা উচিত’ নীতির ভিত্তীতে মুফতীর জন্য ঐ দিকটি বা অর্থটি গ্রহণ করা উচিত যা কুফরীকে প্রতিহত করে।

এতে করে কুফরীর ছোঁয়াচ মুক্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশ তৈরির পথ সহজতর হয়ে উঠবে। আর ফতোয়ায়ে ‘বাযযাযিয়াতে’ এ কথাও উল্লেখ আছে যে, তবে যদি সে ব্যক্তির ইচ্ছা ও আচরণে কুফরীর দিকটি সুস্পষ্ট হয়েই যায়, তাহলে এমতাবস্থায় অন্য কোনো অর্থ-গ্রহণ করা কাজে আসবে না। (বাহরোর রায়েক : খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৫)।

আর ‘যখীরা’ কিতাবের বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উদ্ভূত মাসআলা বা বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি একাধিক দিক সম্বলিত উক্তি এমন অর্থ-গ্রহণের নিয়তে বলে থাকে যাতে কুফুরী প্রমাণিত হয় না, তাহলে সে মুসলিম বলে গণ্য হবে। কিন্তু যদি কুফরীর হুকুম আরোপকারী অর্থের নিয়তেই সে উক্তি করে থাকে, তবে মুফতীর ফতোয়া তার কল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং তাঁকে উক্ত উক্তি হতে প্রত্যাবর্তনসহ তাওবার নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাঁর বিবাহ নবায়নের হুকুম প্রদাণ করা হবে। (শারহু ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা-১৯২)।

এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার সার কথা হলো এই যে, কোনো ব্যক্তির কাজ ও কথায় কুফরীর প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা জরুরিয়াতে দ্বীনের কোনও বিষয়ের ওপর তাঁর ইনকার বা অস্বীকৃতি বিদ্যমান থাকলে, তাকে নিশ্চিত রূপেই ইসলাম বহির্ভূত বলে সাব্যস্ত করা হবে।



 

Show all comments
  • তাওহীদ ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করার তৌফিক দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মান্নান ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২৯ এএম says : 0
    যদি কোনো ব্যক্তি কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামী শরীয়াতের বিধিমালা থেকে অনৈসলামিক বিধিমালাকে উত্তম ও অধিক উপযোগী বলে জ্ঞান করে, তবে সে ইসলামী গন্ডির বহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩০ এএম says : 0
    অত্যান্ত সময় উপযোগী একটি লেখা
    Total Reply(0) Reply
  • জসিম ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩০ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী ও দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • বান্নাহ ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৩১ এএম says : 0
    আশা করি যাদের জন্য এই লেখাটি লেখা হয়েছে তারা বিষয়টি বুঝবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন