Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ায় নতুন করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা রাশিয়ার

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উত্তর আফগান সীমান্তে অবস্থিত সাবেক সোভিয়েত-শাসিত মধ্য এশিয়ায় বিদ্যমান জঙ্গি কর্মকা- নিয়ে অনেকটা দুশ্চিন্তায় আছে রাশিয়া। যদিও ওই অঞ্চলে এখনো শক্ত সামরিক উপস্থিতি ধরে রাখতে পেরেছে দেশটি। তাছাড়া আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর সামরিক কার্যক্রম হ্রাস এবং পুনরায় তালিবান গোষ্ঠীর উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রভাব বিস্তারের ভূমিকায় নতুন করে দেখা যেতে পারে রাশিয়াকে। এসব সত্ত্বেও চলতি মাসে বহনযোগ্য রুশ অস্ত্রের প্রথম চালান আফগানিস্তানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আফগানিস্তানের চলতি নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে মস্কোর পক্ষ থেকে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে নতুন করে তালিবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে দেশটির প্রশাসনের বিরুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আফগানবিষয়ক বিশেষ দূত জামির কাবুলভ জানান, হাতে বহনযোগ্য ছোট অস্ত্রের বাইরে অন্য কোনো অস্ত্র আপাতত দেশটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা নেই মস্কোর। ফেব্রুয়ারি মাসেই রুশ অস্ত্রের প্রথম চালান আফগানিস্তানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আপাতত এসব অস্ত্রই যথেষ্ট। আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। সন্ত্রাসবাদ ও মাদক সমস্যা নিরসনে দেশটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে রুশ সহযোগিতা পাবে তারা। ২০০১ সালে নাইন-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানে অভিযান চালায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী। কারণ, তৎকালীন আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালিবান প্রশাসন আল-কায়েদার মিত্রগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত ছিল। এখনো তাই। এরপর এক যুগ পার হয়ে যায়। এই বিশাল সময় ধরে তালিবানবিরোধী অভিযান চালিয়েছে ন্যাটো। কিন্তু অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা না হলেও ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ দেশটি থেকে পশ্চিমারা সিংহভাগ সেনা সদস্য ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র প্রত্যাহার করে নেয়। এমন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের বর্তমান প্রশাসনও নতুন নিরাপত্তা অংশীদারের সন্ধানে ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রাশিয়া হয়তো এই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান অভিযানের পর থেকেই দেশটির বিমানবাহিনীর পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে রাশিয়া। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক মাসে তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠীর পুনরায় কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে সেখানে রাশিয়ার সহায়তা বৃদ্ধির জন্য আমন্ত্রণ জানান আফগান কর্মকর্তারা। গতবছর হেলিকপ্টার গানশিপ ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র পেতে কিছু আফগান কর্মকর্তা রাশিয়া সফরও করেন। আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী মাসের আগেই রাশিয়ার কাছ থেকে ১০ হাজার একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল পেতে যাচ্ছেন তারা। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার এক মুখপাত্র জানান, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে মস্কো-কাবুল উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং মস্কো-কাবুলে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে যৌথ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গত অক্টোবরে পুতিন বলেছিলেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তীব্র সংকটের খুব কাছাকাছি। সে সময় দেশটিতে রুশ প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তিনি। তবে ১৯৮০’র দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর ব্যর্থ অভিযানের কারণে হয়তো সরাসরি কোনো সংঘাতে রাশিয়া এখনই জড়াতে চাইবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ওই অভিযানে সাড়ে ১৪ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়, আহত হয় ৫০ হাজারের ওপর। উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে নুর মোহাম্মাদ তারাকির প্রশাসন। সোভিয়েতপন্থী এই প্রশাসন আফগান সমাজে তড়িত ধর্মীয় রীতির পরিবর্তন ও আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নিলে ক্রমেই জনবিমুখ হয়ে পড়ে। সে সময় প্রায় ২৭ হাজার ইসলামপন্থী রাজনৈতিক বন্দির মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এর প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সালে দেশটির সিংহভাগ অঞ্চলই সোভিয়েতপন্থী আফগান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর তার প্রতিক্রিয়ায় সেখানে অভিযান চালায় সোভিয়েত বাহিনী। মূলত আফগান মুজাহিদিন উৎখাতেই তখন অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত বাহিনী। আর স্নায়ুযুদ্ধকালীন দ্বন্দ্বের কারণে তখন পশ্চিমাদের আর্থিক ও সামরিক মদদ পেয়েছিল মুজাহিদিনরা। ওয়াশিংটন পোস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তানসহ মধ্য এশিয়ায় নতুন করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা রাশিয়ার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ