Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাসুল (সা.) এর মাঝেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ

জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাসুল (সা.) এর মাঝেই রয়েছে- সর্বোত্তম আদর্শ। রাসুল (সা.) এর আদর্শ অঁাঁকড়ে ধরার মাধ্যমেই দুনিয়া আখেরাতে মুক্তি রয়েছে। আল্লাহ প্রত্যেক মুমিনকেই দুনিয়াতে ঈমানী পরীক্ষা নিবেন। মুমিনের জীবনে ঈমানী পরীক্ষা আসাটাই স্বাভাবিক। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নগরীর মসজিদগুলোতে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিববুল্লাহ হিল বাকি নদভী গতকাল জুমার খুৎবার বয়ানে বলেন, ইসালাম একটি মানবতার ধর্ম। ইসলাম নিজস্ব মানবিক গুণাবলী, সার্বজনীন আদর্শ ও সৌন্দর্য দিয়ে মানবসমাজে নিজের স্থান করে নিয়েছে। ইসলামের প্রচার, প্রসারে জোর জবরদস্তি ও জঙ্গিবাদের কোনো ভূমিকা নেই। মুসলমানের নৈতিক অবক্ষয় ও আধ্যাত্মিক বিপর্যয়ের সুযোগে ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের জঙ্গি বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম সমাজে জঙ্গিবাদের যে দৃশ্য মঞ্চায়িত হচ্ছে তার মূল রহস্য হলো ইসলামের উত্থান ও অগ্রগতিকে রোধ করার জন্য।

ইসলামের প্রচার, প্রসারে জঙ্গিবাদ তো দূরের কথা সাধারণ চাপাচাপির সুযোগও ইসলামে নেই। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আপনি কি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষকে বাধ্য করবেন? অথচ আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।’ পেশ ইমাম বলেন, আমাদের সজাগ থাকতে হবে, যাতে করে ইসলামের বদনামের জন্য কোনো নামধারী মুসলমান বা আহম্মককে ব্যবহার করে মুসলমানদের মধ্যে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে না পারে! আল্লাহ তায়ালা আমাদের যেন ইসলামের সৌন্দর্য বিশ্বের কাছে তুলে ধরার তৌফিক দান করেন- আমীন!

ঢাকার চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতিব শাইখুল হাদিস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, মুমিনের জীবনে ঈমানী পরীক্ষা আসাটাই স্বাভাবিক। ঈমানের মৌখিক দাবিটুকুই যথেষ্ট নয় বরং কার ভেতরে কতটুকু ঈমান আছে এবং ঈমানদার হওয়ার দাবিতে- কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী এটা বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা যাচাই করবেন এটাই তো যুক্তিসঙ্গত। সৃষ্টি হয়ে আমরা যদি প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করার ক্ষেত্রে খাঁটি-অখাঁটি যাচাই করার বিভিন্ন নীতি অবলম্বন করতে পারি তাহলে স্রষ্টা হয়ে আল্লাহ কেন ঈমানের দাবিতে সত্য-মিথ্যা যাচাই করবেন না? হাদিসের ভাষায় যে যত বড় সৎকর্মশীল হবে তাকে তত বেশি ঈমানের পরীক্ষা দিতে হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু নবীগণের চেয়ে বড় সৎকর্মশীল আর কেউ নেই তাই তাদেরকেই সবচয়ে বেশি কঠিন থেকে কঠিন ঈমানী পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর এ পরীক্ষাগুলো তিন প্রকারে বিভক্ত। এক আল্লাহর হুকুম-আহকাম মান্য করার মাধ্যমে। দুই রোগ ও কষ্টে পতিত হওয়ার মাধ্যমে। তিন কাফের-মুশরিকদের থেকে আসা নির্যাতন-নীপিড়নের মাধ্যমে। সুতরাং শুধু মৌখিকভাবে দাবি করেই খাঁটি ঈমানদার হতে চাওয়া হাস্যকর।

পবিত্র কোরআনের সূরা আনকাবূতের শুরুতেই আল্লাহ তায়ালা এরশাদ ফরমান ‘মানুষ কি ভেবেছে যে, তারা বলবে আমরা ঈমান এনেছি অথচ তাদের পরীক্ষা করা হবে না? এরকম পরীক্ষা আমি পূর্ববর্তীদের থেকেও নিয়েছি।’

মিরপুর বাউনিয়াবাদ ই-বøক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী জুমার খুৎবা পূর্ব আলোচনায় বলেন, আমরা আজ রাসুল (সা.) এর আদর্শ ভুলে গিয়ে বিজাতীয় কৃষ্টি কালচারকে নিজেদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার কারণে পদে পদে লাঞ্চিত, বঞ্চিত পদদলিত হয়ে ধংসের দার প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছি। অথচ রাসুল (সা.) এর আদর্শের মাঝেই রয়েছে মানুষের ইহকালিন শান্তি, সমৃদ্ধি ও পরকালিন মুক্তি। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, রাসুল (সা.) এর মাঝেই রয়েছে তোমাদের জন্যে সর্বোত্তম আদর্শ। (সূরা আহজাব, আয়াত :২১)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার সুন্নত আদর্শ পালন করবে, সে আমাকেই ভালোবাসবে। আর যে আমাকে ভালোবাসবে, সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ২৬০২)। তাই আসুন সমাজের সর্বক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সর্বাঙ্গনে রাসুল (সা.) এর মহান আদর্শ পালনে সচেষ্ট হই। প্রকৃত শান্তির স্বাদ গ্রহণ করি। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন- আমীন!

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বর্ণনা থেকে জানা যায়, গিবত ও পরনিন্দা করার কারণে মানুষ কবরের আজাবের উপযুক্ত হয়। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) এর সঙ্গে হাঁট ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরে ছিলেন। অপর একজন ব্যক্তি তার বামপাশে ছিল। হঠাৎ আমরা দুটি কবরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ালে হুজুর বলেন, এই দুই কবরবাসীর শাস্তি হচ্ছে। বড় কোনো অপরাধে তাদের শাস্তি হচ্ছে না। কেউ কি আমাকে একটি ডাল এনে দেবে? আমরা নির্দেশ পালনার্থে সবাই দৌড় দিলাম। আমি সর্বাগ্রে ডাল নিয়ে এলাম। তিনি ডালটি দু’টুকরো করে দুই কবরের উপর রাখলেন এবং বললেন, এই ডাল দুটি যতদিন তরতাজা থাকবে, ততদিন তাদের আজাব লঘু করা হবে। তাদের শাস্তির কারণ হলো, প্রস্রাব ও গিবত (তথা প্রস্রাবের ছিটা থেকে না বাঁচার ও গিবত করা)। (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল)।

তিনি আরো বলেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.) এর খেদমতে হাজির ছিলাম। এমতাবস্থায়, মসজিদ থেকে এক ব্যক্তি অন্যত্র চলে গেলে অপর এক ব্যক্তি তার গিবত করল। রাসুল (সা.) তার গিবত বাক্য শুনে তাকে দাঁত খিলাল করার নির্দেশ দেন। সে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো গোশত খাইনি! তবে কেন খিলাল করব? তখন রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, তুমি (গিবত করার মাধ্যমে) তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছে। (আত তারগিব ওয়াত তারহীব)। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে গিবত ও পরনিন্দা মতো কবিরা গোনাহ থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন- আমীন!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জুমার খুৎবা

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ