Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশে গম আবাদ সম্প্রসারণের পরিবর্তে এবার পেছালো

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৭:২৪ পিএম

গত কয়েক বছরের ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগের প্রভাবে চলতি রবি মৌসুমেও দেশে গমের আবাদ লক্ষ্যে পৌছা সম্ভব হলনা। চলতি মৌসুমে দেশে গম আবাদের পরিমাণ গত বছরের চেয়ে ৪ হাজারের হেক্টর কম। অথচ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসলের আবাদ ও উৎপাদনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে দেশে। স্বল্প সেচ এবং সহজ বালাই ব্যবস্থাপনা সহ উৎপাদন ব্যায় তুলনামূলক ভাবে কম এবং ভাল দাম পাওয়ায় নিকট অতীতে দেশে গমের আবাদ দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটলেও ২০১৭ সালে আকস্মিকভাবেই ৫টি জেলায় ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ সংক্রমণে বিপুল গমের আবাদ বিনষ্ট হয়। এমনকি কয়েকটি এলাকায় গমের জমিতে আগুন জ¦ালিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে কৃষি বিভাগ। যেসব এলাকায় ব্লাষ্ট এর সংক্রমণ দেখা দেয় পরবর্তী ৩ বছর সে জেলায় গমের আবাদ নিরুৎসাহিত করারও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ ফসল আবাদ সম্প্রসারণের পরিবর্তে তা ক্রমশ পেছাতে শুরু করেছে। তবে বিগত দুটি বছরেও অতি সীমিত কিছু এলাকায় ব্লাষ্টের সংক্রমণ হলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

চলতি রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গমের আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৬ হেক্টরে। তবে গত বছর দেশে গমের আবাদ হয়েছিল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩শ হেক্টরে। আর উৎপাদন ছিল ১২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩০ টনের মত। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যনুযায়ী গমের আবাদ সম্প্রসারণের পরিবর্তে ৪ হাজার হেক্টর পেছালেও উৎপাদন গত বছরের কাছে পৌছার ব্যাপারে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। তবে এবার পৌষের মধ্যভাগের পর থেকেই শীতের আধিক্য হ্রাস পাওয়ায় গমে উৎপাদন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদদের মধ্যে। কারণ শীতপ্রধান দেশের এ দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন তাপমাত্রা হ্রাসের ওপর বাহুলাংশে নির্ভরশীল। যদিও আমাদের গম গবেষণা ইন্সটিটিউট তাপ সহিষ্ণু একাধিক উচ্চ ফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু তা এখনো মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি এর আবাদ প্রযুক্তিও কৃষকের কাছে পৌঁছেনি।

আমাদের দেশে গম আবাদ ও উৎপাদনের ইতিহাস খুব দীর্ঘদিনের না হলেও খাদ্য ফসল হিসেবে তা ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করেছে। সারা বিশ্বে গম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। সত্তরের দশকে আমাদের দেশে মাত্র ১ লাখ হেক্টর জমিতে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত ‘খেরী,আইপি-৫২ ও আইপি-১২৫’ জাতের গম বীজ-এর আবাদ হত। উৎপাদন পরিস্থিতি অনুকূল ও কৃষকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে তখন বিদেশ থেকে ‘কল্যাণ সোনা’ ও ‘সোনালিকা’ জাতের মধ্যম মানের ফলনশীল গমবীজ অমদানী করে এর আবাদ সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। স্থনীয়জাতের তুলনায় এসব গমের উৎপাদন প্রায় ৩গুন বেশী হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে গমের আবাদ ও উৎপাদন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৮৫ সালে আমাদের দেশে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১২লাখ টন গম উৎপাদন সম্ভব হয়। কিন্ত এর পর থেকে গমের আবাদ সম্প্রসারণের পরিবর্তে তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। অনেকে এলাকাতেই গমের জমিতে এখন ভ’ট্টার আবাদ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। ফলে দেশে গমের আবাদ এখন সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে। অথচ তা ১০ লাখ হেক্টরে সম্প্রসারণের মাধ্যমে উৎপাদনও প্রায় ৪০ লাখ টনের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন।

আমাদের কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও গম গবেষণা ইন্সটিটিউট ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবেশ উপযোগী একাধিক গম-এর জাত উদ্ভাবন করেছে। এমনকি আমাদের দেশের মত কম শীত প্রধান অঞ্চলের জন্য ‘শতাব্দী’ নামের গম বীজও উদ্ভাবন করেছে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট-বারি’এর বিজ্ঞানীগন। বারি উদ্ভাবিত গম বীজের মধ্যে ‘কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রানী , শতাব্দী ছাড়াও সৌরভ-বারি-১৯, ও গৌরব-বারি-২০’ নামেরও উচ্চ ফলনশীল গম বীজও রয়েছে। এসব বীজ থেকে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩টন থেকে সাড়ে ৪ টন পর্যন্ত গম উৎপাদন সম্ভব বলে কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।

চলতি মৌসুমে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে প্রায় ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ফরিদপুর অঞ্চলেল ৫টি জেলাতেই প্রায় ৫২ হাজার হেক্টরে এ দানাদার ফসলের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে প্রায় ১.৮৮ লাখ টন। অপরদিকে বরিশাল অঞ্চলের ৬টি জেলাতেও প্রায় ৬ হাজার হেক্টরে এবার গমের আবাদ হয়েছে। তবে ভোলা সহ দক্ষিনাঞ্চলের বিস্তির্ন নদী তীরবর্তি অলাকায় গম আবাদের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও ডিএই’র সঠিক উদ্যোগের অভাবে সম্ভবনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসলের আবাদ সম্প্রসারন ঘটছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গম

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ