Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঈমান হলো আন্তরিক বিশ্বাসের নাম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রকৃত পক্ষে আন্তরিক বিশ্বাসকেই ঈমান বলে শনাক্ত করা হয়। এই দুনিয়াতে কারো ওপর ইসলামী বিধান কার্যকরী করার জন্য তার মৌখিক স্বীকারোক্তি শর্ত। কারণ মানুষ অন্তরের খবর জানে না। এজন্য মৌখিক স্বীকৃতির মাধ্যমেই তার মুসলমান হওয়ার বিষয়টি জ্ঞাত হওয়া যায়। কোনো ব্যক্তি যদি জরুরিয়াতে দ্বীনের ওপর আন্তরিক বিশ্বাস রাখে কিন্তু মৌখিক স্বীকৃতি দেয় না, সে দুনিয়ার বিচারে মুসলিম হিসেবে বিবেচিত না হলেও আল্লাহপাকের আদালতে মুসলিম বলেই বিবেচিত হবে।

এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহপাক তাদের অন্তরে ঈমানকে বদ্ধমূল করে দিয়েছেন। (সূরা মুজাদালাহ : আয়াত ২২)। রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন : হে অন্তরের পরিবর্তন সাধনকারী আল্লাহ! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর সুদৃঢ় করে দাও। (মোসনাদে আহমাদ)।

উল্লেখিত দুটি বাক্যে ঈমানকে অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই দৃঢ়তাপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের পর বান্দাহর জন্য ‘আমানতু বিল্লাহ’ বলা অবশ্য কর্তব্য। তবে, এক্ষেত্রে শর্ত হলো তার মৌখিক স্বীকৃতি ও উক্তি অন্তরের মূল ভাব বিশ্বাসের অনুরূপ হতে হবে। এতে এই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মৌখিক একরার বা স্বীকৃতি কোনো কোনো মুজতাহিদের মতে ঈমানের অংশ বলে বিবেচিত। তবে তা কখনো কখনো লুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন হতে পারে। কারো মতে মৌখিক ইকরার পৃথিবীতে ঈমানের হুকুম প্রয়োগ করার জন্য শর্ত। জনসাধারণ্যে এটাই স্বীকৃত। (শরহে ফিকহে আকবার)।

এটা নিশ্চিত যে অন্তরের তাসদীকের নাম ঈমান। তবে দুনিয়াতে কারো ওপর ঈমানের আহকাম প্রয়োগ করার সাথে সাথে তার জানমালের নিরাপত্তা দান করা, তার ওপর যানাজার সালাত আদায় করা, মুসলমানদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা ইত্যাদির জন্য মুখে স্বীকার করা শর্ত। কাজেই যে ব্যক্তি অন্তরে বিশ্বাস করে, কিন্তু মুখে স্বীকার করে না, সে আল্লাহর আদালতে মুমিন হিসেবে গণ্য হবে, যদিও দুনিয়ার বিচারে মুমিন বিবেচিত হবে না। (নিবরাস: পৃষ্ঠা ২৫০; ফাতহুল মুলহিম : ১/৪৩৪)। কোরআনুল কারীমে চল্লিশেরও অধিক স্থানে ঈমানের সাথে আমলে সালেহ বা নেক আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, আমলে সালেহ অর্থাৎ সালাত, সাওম ইত্যাদি ঈমানের মৌলিক অংশ নয়। মোটকথা, নেক আমলসমূহ ঈমানের এমন অংশ নয় যে আমল না করলে মুমিন ব্যক্তি কাফিরে পরিণত হবে। বরং আমলে সালেহ তথা সালাত, সাওম ঈমানের পূর্ণতা ও সৌন্দর্য বর্ধক অংশ মাত্র। অর্থাৎ আমলের দ্বারা ঈমান সৌন্দর্য মন্ডিত ও উজ্জলতা প্রাপ্ত হয়। ঈমানের পরিপূর্ণতা সাধিত হয়। এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনের ইরশাদ হয়েছে : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ করে (সূরা হুযুরাত : আয়াত ৯)।

এই আয়াতে কারীমায় ঈমান এবং আমলে সালেহকে পৃথক পৃথক বিষয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : যদি মুমিনদের দুটি দল দ্ব›েদ্ব। (মারামারিতে) লিপ্ত হয়, তবে তোমরা তাদের মাঝে মিমাংসা করে দাও। (সূরা হুযুরাত : আয়াত ৯)।

দু’দল মুমিনের মারামারিতে লিপ্ত হওয়া কবিরা গোনাহ। এই আয়াতে কবিরা গোনাহ করার পরও তাদেরকে মুমিন আখ্যা দেয়া হয়েছে। মোটকথা, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, আদব আখলাক ইত্যাদিতে শরীয়ত প্রণেতার অনুসরণ করাই হলো পূর্ণ ঈমানের পরিচায়ক। (মারামুল কালাম ফী আকাঈদিল ইসলাম : পৃষ্ঠা ৫২)।

তাই, একথা স্পষ্টতঃই বলা যায় যে, নেক আমল হাকীকতে ঈমানের অন্তর্ভূক্ত নয়। কেননা, অন্তরের তাসদিককেই ঈমান বলা হয়। (শরহুল মাকাসিদ : ৩/৪২৩)। বস্তুত : নেক আমলের কম বেশি অনুযায়ী মানুষের ঈমানের স্তর বিভিন্ন হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, ঈমানী স্তরের বিভিন্নতা ঈমানের নূর জ্যোতি ও পূর্ণতার বিচারেই হয়ে থাকে। অন্যথায় মূল ঈমানে কোনো ব্যবধান নেই বা হয় না।

কেননা, মূল ঈমান হলো ‘তাসদিক’ তথা আন্তরিক বিশ্বাস। মূলত: আন্তরিক বিশ্বাস সকলেরই সমান হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ইমাম আযম আবু হানীফাহ (রহ:) ‘আলওয়াছিয়্যাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন যে, জানা উচিত আমল ঈমান হতে ভিন্ন ও ঈমান আমল হতে ভিন্ন, পৃথক বস্তু। এর প্রমাণ এই যে, অনেক সময় মুমিন হতে আমল তিরোহিত হয়। তাই বলে তার থেকে ঈমান তিরোহিত হয়েছে বলা যায়েজ হবে না। অনুরূপভাবে ঋতুবতী মহিলা হতে সালাতের হুকুম সাময়িকভাবে উঠে যায়। এজন্য তার থেকে ঈমান উঠে গেছে বলা সিদ্ধ হবে না। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ৮৯)।



 

Show all comments
  • তানবীর ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
    মানুষ কি মনে করে যে, তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে (এজন্যে) যে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না। এবং অবশ্যই আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম, এবং আল্লাহ্‌ অবশ্যই জেনে নিবেন (স্পষ্ট করবেন) যারা সত্য বলেছে তাদেরকে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নিবেন মিথ্যাবাদীদেরকে। (সূরাহ্‌ ‘আনকাবূত ২৯:২-৩)
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২৭ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ্‌ সা. ইরশাদ করেন, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ওই বৈশিষ্ট্যগুলো কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। সে বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- ক. যারা নিকট আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল সা. অন্য সবকিছু হতে সর্বাধিক প্রিয় হবে। খ. যে ব্যক্তি কোনও বান্দাকে কেবল আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে। গ. যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে কুফ্‌র হতে মুক্তি লাভের পর পুনরায় কুফ্‌রীতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করে, যেভাবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (সহীহ্‌ বুখারী: ২১, সহীহ্‌ মুসলিম:৪৩)
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২৭ এএম says : 0
    ঈমান বা বিশ্বাসের মূল্য আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে দামি। তাইতো মুসলমানের কাছেও ঈমানের চেয়ে মহামূল্যবান আর কিছুই নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • পারভেজ ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২৮ এএম says : 0
    ঈমানের উপর ভিত্তি করে মানুষের দুনিয়া ও পরকালের সব হিসাব-নিকাষ চূড়ান্ত হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদ ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের অমূল্য নেয়ামত লাভ করার তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবির ঘোষণায় ঈমানের অমূল্য নেয়ামত লাভে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১৩ জানুয়ারি, ২০২১, ৬:৪৫ পিএম says : 0
    Unfortunately, Muslims are concentrating hard on Amols ( to show off) rather than Iman. That is why, number of Munafiqs are increasing rapidly in the society.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন