Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তাওবা সম্পর্কে আল্লাহওয়ালাগণের উক্তি

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

তাওবাহ আল্লাহ প্রীতি ও ভীতির সোপান। মানুষ মাত্রই কম অথবা বেশী পাপ হওয়া স্বাভাবিক। পাপ আল্লাহ প্রাপ্তির অন্তরায়। সওয়াবের কাজ কম হলেও পাপ থেকে বেচে থাকা জরুরী। পাপ হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা চাওয়া আল্লাহ তায়ালার নিকট খুবই প্রিয় কাজ। তওবা সম্পর্কে অতীত জীবনের আল্লাহ ওয়ালাগন অনেক উক্তি করেছেন। তাদের মূল্যবান উক্তি সমূহ আমাদের চলার পথে আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে।

গুনাহ করে আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমার সুযোগ পাওয়া খুবই ভাল কথা কিন্তু সে সুযোগ পাবে এর নিশ্চয়তা কোথায়। হযরত আলী রাঃ।

নির্জনে গুনাহ করতে ভীত হও কেননা যিনি তোমার বিচার করবেন তিনিতো দেখছেন। হযরত আলী রাঃ।
যারা শুকুর করতে জানে বরকতের দ্বার তাদের জন্য কখনো বন্ধ হয় না। যারা তওবা করতে থাকে ক্ষমার দ্বার কখনো তাদের জন্য রুদ্ধ হয় না। হয়রত আলী রাঃ।

যদি কারো পক্ষে পাপ করা কঠিন হয়ে পড়ে তবে বুঝতে হবে সে ব্যক্তি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের ছায়ায় রয়েছে। হয়রত আলী রাঃ।
সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্যের আলামত হল গুনাহ করার পরও নিজেকে আল্লাহর মকবুল মনে করতে থাকা। খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী রঃ।

আল্লাহ তায়ালা জমিনে দুটি নিরাপত্তার রক্ষাকবচ দিয়েছেন। এ দুটির উপস্থিতিতে কোন আজাব-গজব আসতে পারেনা। প্রথমটি খোদ রাসুল সাঃ আর দ্বিতীয়টি তওবা ইস্তেগফার। রাসুল সাঃ যদিও আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তওবা ইস্তেগফার করার মওকা এখনও আছে। কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, হে রাসুল যতক্ষন আপনি তাদের মাঝে রয়েছেন ততক্ষন আমি তাদেরকে আজাব দিতে পারিনা এবং যতক্ষন তারা তওবা ইস্তেগফার করতে থাকবে ততক্ষন তাদের উপর আজাব হবে না। কুড়ানো মানিক।

যদি তুমি অন্যের অপরাধ ক্ষমা করতে না পার তবে আল্লাহর নিকট ক্ষমার আশা করোনা। হযরত ঈসা আঃ। পাপ স্বীকার করে অনুতাপ করলে ক্ষমার পাত্র হয়। তর্ক করলে হয়না। হযরত আলী রাঃ।

যতবড় পাপী হোক না কেন, আল্লাহর ক্ষমা লাভে নিরাশ হওয়া উচিত নয়। কেউ হয়তো অনেক পাপ করে শেষে এমন এক কাজ করে যাতে তার সব পাপ মার্জনা হয়ে যায়। আবার কেউ চিরকাল পাপ না করে শেষে এমন কাজ করে যে চিরজীবনের জন্য পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়। হযরত আলী রাঃ।

আয় আল্লাহ যদি তুমি আমাকে মাফ করে দাও তা হবে তোমার সীমাহীন মহত্ত্ব। আর যদি তুমি আমাকে শাস্তি দাও তাও ইনসাফ বৈ কিছু হবেনা। হযরত ওমর রাঃ।

এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তি তওবার বাক্য উচ্চারণ করতে শুনে বলেছিলেন, হতভাগা মুখে মুখে তওবা করলেই তওবা হয়না। যখন কেউ তওবা করতে চায়, তখন তাকে ৬টি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। ১. অতীত কু কর্মের জন্য আšতরিক অনুশোচনা ২. ভবিষ্যতে আর অন্যায় না করার দৃঢ় অঙ্গীকার ৩. অন্যের হক থেকে থাকলে তা এমন ভাবে পরিশোধ কর, যেন আল্লাহর সামনে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন অবস্থায় হাজির হতে পার ৪. যে সমস্ত ফরজ তরক করেছ, সেসব পূর্ণ করার আপ্রাণ চেষ্টা ৫. হারাম সম্পদ খেয়ে শরীরে যে মেদ মাংসের জন্ম হয়েছে, জাহান্নাম ভীতির আগুনে সেগুলো জ্বালিয়ে একেবারে গলিয়ে দেওয়ার পর হালাল রোজগারের দ্বারা নতুন গোস্ত তৈরী করা। এর পর জবানে উচ্চারণ কর, আস্তাগফিরুললাহ। কুড়ানো মানিক।

দ্বীন ও দুনিয়ার উভয়বিধ সমস্যাদি দূর করা এবং প্রয়োজন পুরা করার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে ইস্তেগফার করতে থাকা। হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহঃ।

তওবা ব্যতিত ইবাদত পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়না। কেননা আল্লাহ তায়ালা তওবাকে ইবাদতের আগে উল্লেখ করেছেন। ইমাম জাফর সাদেক রাহঃ।

গোনাহ সামান্য হলেও তা অনেক ইবাদতের তুলনায় বড় দুশ্চিন্তার কারন। ইমাম জাফর সাদেক রাহঃ। তওবা করা সহজ, কিন্তু পাপের অভ্যাস ছাড়া খুবই কঠিন ব্যাপার। ইমাম জাফর সাদেক রাহঃ। তওবা হচ্ছে মন থেকে সবকিছু ঝেড়ে মুছে একমাত্র আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভুলিয়ে দেয় এমন সব কিছু থেকে দূরে সরে যাওয়া। আহমাদ বিন খাজরাবিয়্যা রাহঃ।

৫টি কারণে ইবলিস চির দুর্ভাগ্যের গহবরে পতিত হয়েছে। ১. সে স্বীয় পাপের কথা স্বীকার করেনি। ২. কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়নি। ৩. নিজের প্রবৃত্তির শাসন করেনি। ৪. কৃত পাপের জন্য আল্লাহর নিকট মাফ চায়নি। ৫. সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গিয়েছিল।

অপর দিকে আদম আঃ ঠিক তার বিপরিত আমল করেছেন। অর্থাৎ ৫টি পন্থা অবলম্বন করে তিনি সৌভাগ্যবান হয়েছেন। ১. আদম তার কৃত ভুল স্বীকার করেছেন। ২. ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন। ৩. নিজের প্রবৃত্তিকে শাসন করেছেন। ৪. তাৎক্ষনিকভাবে তওবা করেছেন। ৫. আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হননি। আবু মোহাম্মদ মারওয়াযী রাহঃ।

আল্লাহ পাক তাঁর যে বান্দাকে গুনাহের আবর্জনা থেকে মুক্ত করে দেন, তিনি যেন পার্থিব কোন সহায় সম্পদ ছাড়া ধনাঢ্য হয়ে যান। তার কেউ না থাকলেও সবার চাইতে বেশী সম্ভ্রান্ত ও সম্মানিত হন। তাকে জিজ্ঞেস করার কেউ না থাকলেও তিনি চির উৎফুল্ল হয়ে যান। হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মদ রাহঃ। হযরত মালেক ইবনে দিনার রাহঃ বসরা থেকে পায়ে হেটে হজ্জ করতে রওয়ানা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে লোকেরা তাকে সোয়ারীর পিঠে আরোহণ করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেছিলেন, যে কৃতদাস তার মালিকের নিকট থেকে পালিয়ে গিয়েছিল সেকি মালিকের নিকট প্রার্থনা করতে যাওয়ার সময় সওয়ার হয়ে যেতে পারে ? আল্লাহর কসম যদি আমাকে জ্বলন্ত আঙ্গারের উপর দিয়ে হেটে মক্কায় যেতে হতো তবুও তা আমার জন্য কম হতো। (চলবে)
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ