Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিশু ও গর্ভবতীরা পাচ্ছেন না করোনার টিকা

কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে : ড. মোশতাক হোসেন গবেষণা চলছে, কোনো জটিলতা না হলে তারাও টিকা পাবেন : ডা. জাহিদুর রহমান

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সরকার দেশে করোনার টিকা প্রদান করবে। বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠী পর্যায়ক্রমে করোনার টিকা পাবে। তবে এখনই করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পাচ্ছেনা না ১৮ বছরের নীচের বসয়ী বা শিশুরা। এমনকি এই টিকা পাবেন না দেশের বিপুল সংখ্যক গর্ভবর্তী মায়েরাও। প্রাথমিক পর্যায়ে কোন টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত টিকার গবেষণায় এই দুই জনগোষ্টির ওপর প্রয়োগ করেনি। এমনকি উদ্ভাবিত এসব টিকা এই দুই জনগোষ্টিকে দেয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে পরিচালিত গবেষণাও শেষ হয়নি। তাই আপাতত এই দুই জনগোষ্টি থেকে যাচ্ছেন টিকা দানের বাইরে। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য জনগোষ্টি যখন টিকা পাবেন তখন তাদের আরও সতর্কভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু পৃথিবীর কোথায় এই দুই ধরনের জনগোষ্টিকে টিকা দেয়া হচ্ছে না, তাই নতুন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা না আসা পর্যান্ত আরও কঠোরভাবে তাদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে এই দুই জনগোষ্টির জন্য যতদিন টিকা না আসে। তাছাড়া আমাদের দেশে এই দুই জনগোষ্টির করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুও হার খুবই সামান্য। তাই এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ তাদের।

রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও রোগতত্ত্ববিদ ড. মোশতাক হোসেন বলেন, শিশু ও গর্ভবতীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই তাদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য উন্নত দেশে এই দুই জনগোষ্টিকে টিকাদান কর্মসূচি থেকে বিরত রাখা হয়েছে, তাই আমাদের দেশেও তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে না। তবে টিকা উৎপাদনকারী দু’একটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেছে। এসব গবেষণা শেষ হলেই এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আগে টিকা দেয়া হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলো প্রাধান্য পাবে। তার সঙ্গে একই সময়ে টিকা দেয়া হবে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সেবা কর্মীদের টিকা দেয়া শেষ হলে তারপর পাবেন অন্যন্য শ্রেণী পেশার মানুষ। তবে বিশ্বের কোন দেশে শিশু ও গর্ভবতীদের টিকা দেয়া সংক্রান্ত গবেষণা শেষ না হলে অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা না দিলে তারা টিকা পাবেন না।

দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে প্রাধিকার ভিত্তিতে তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ নয় কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে। সাড়ে তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার।

চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে দেশে টিকা আসতে শুরু করবে। প্রথম চালানেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসবে ৫০ লাখ ডোজ। তারপর প্রতিমাসেই সমপরিমান চালানের মাধ্যমে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা দেশে আসবে। এছাড়া আগামী জুন নাগাদ কোভ্যক্স সুবিধার মাধ্যমে যে ৬ কোটি কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা সেটিও আসা শুরু করবে। এর কোন টিকাই পাবেন না এই দুই জনগোষ্টির মানুষ।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক ভাবে দেশে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার ৫ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্টিকে টিকার আওতায় আনা হলে দেশে প্রকৃত হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। তখন এমনতিই ভাইরাসের সংক্রমন হার হ্রাস পাবে। তাছাড়া আমাদের দেশের শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমন ও আক্রান্তের হার খুবই কম। এমনকি আক্রান্ত শিশুদের থেকে ছড়িয়ে পড়ার তথ্য তেমন নেই। তাছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সবসময় বিশেষ যত্মে রাখা হয়। তাই সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানলে তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশংকা নেই। এছাড়া উন্নত দেশগুলো এ সংক্রান্ত গবেষণা চলছে। সেখানে যদি এই দুই জনগোষ্টির ওপর টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে কোন জটিলতা না দেখা যায় তাহলে গবেষণা শেষে তারাও টিকা পাবেন।

তবে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ সভাপতি প্রফেসর ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভ্যাকসিনের একটি প্রাধিকার রুপরেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে সেক্ষেত্রে একটি জটিলতা দেখা দিয়েছে। যারা জীবিকার প্রয়োজনে মাঠে আছেন তাঁরা কবে এই ভ্যাকসিন পাবেন তা জানা যাচ্ছেনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ