শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শনিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক : শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার লক্ষ্যে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক
চুক্তি ছাড়াই রেলের টিকিট বিক্রি করছে সিএনএস লিমিটেড। গত বছরের মার্চে রেলের সাথে সিএনএস-এর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারপরেও মৌখিক অনুমোদনের ভিত্তিতে কোটি কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করে চলেছে সিএনএস। বৈধ কোনো চুক্তি না থাকায় সিএনএসকে এ-সংক্রান্ত কোনো বিল দিতে পারছে না রেলওয়ে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড.বাবরুল আমীন বলেন,এমনটি হয়ে থাকলে এতে সরকার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৈধ চুক্তি না থাকায় সরকার এবং যাত্রী উভয়েই অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়ছে। যাত্রীরা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাতো রয়েছেই। এতে করে যাত্রী দুর্ভোগও বাড়বে। সর্বোপরি বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবার মান নিম্নমুখি হবে। সরকারের ভাব-মর্যাদাও ক্ষুন্ন হবে।
২০০৭ সাল থেকে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পালন করছে সিএনএস লিমিটেড। রেলওয়ে সূত্র জানায়, সে সময় সিএনএসের সঙ্গে যে চুক্তি হয়, সেখানে রেলের নিজস্ব লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা করেনি তারা। ২০১২ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে সময় বাড়াতে আবেদন করে সিএনএস। এতে আপত্তি জানালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করে তারা। নানা কৌশলে এ সময় তিন মাস করে প্রায় ছয় মাস মেয়াদ বাড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নতুন করে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। কিন্তু তা মাত্র ছয় মাস বৃদ্ধি অনুমোদন করে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। যা ২০২০ সালের মার্চে শেষ হয়ে গেছে। তার পর থেকে চুক্তি ছাড়াই রেলের টিকিট বিক্রি করছে সিএনএস।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলের টিকিট বিক্রির সুবাদে সিএনএস-এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে ঈদের সময় ট্রেনে যাত্রীর চাপ বাড়লেই অজ্ঞাত কারণে সিএনএস-এর সার্ভার বিকল হয়ে যেতো। এ ছাড়া টিকিট বিক্রিতেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়ে। বর্তমান রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন দায়িত্ব নেয়ার পর এসব অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিএনএস-এর চুৃক্তির মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলে ঘোষণা দেন।
সে হিসাবে সিএনএস-এর সাথে চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়িয়ে নতুন করে দরপত্র আহবান করে রেলওয়ে। ২০১৯ সালে রেলের টিকিট বিক্রির জন্য নতুন অপারেটর নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করা হয়। করোনার কারণে তা কিছুটা পিছিয়ে গেলেও গত বছর শেষ দিকে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে কাজ পায় ‘সহজ’। কিন্তু দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি-অভিযোগ এনে এর বিরুদ্ধে সিপিটিইউতে (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) আবেদন করে সিএনএস। এছাড়া হাইকোর্টে রিট করলে পুরো প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। এ কারণে নতুন অপারেটরও নিয়োগ দিতে পারছে না রেলওয়ে। এ অবস্থায় অবৈধভাবে চুক্তি ছাড়াই শুধু মৌখিক অনুমোদন দেয়া হয় সিএনএস-কে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে রেলের টিকিট বিক্রিতে প্রথম দফা সিএনএসের সঙ্গে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। ৬০ মাস মেয়াদি এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালে। তবে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, স্টপেজ বৃদ্ধি, কোচ ও আসন বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ৬০ মাস শেষে চুক্তি মূল্য দাঁড়ায় ১৩ কোটি আট লাখ টাকা। তবে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনক্রমে চুক্তির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে দরপত্র আহ্বান করা হলে আবারও কাজ পায় সিএনএস। ২০১৪ সালের অক্টোবরে ৬০ মাসের জন্য এ-সংক্রান্ত চুক্তি করা হয়। সে সময় চুক্তিমূল্য ছিল ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। যদিও ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, স্টপেজ বৃদ্ধি, কোচ ও আসন বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে ৬০ মাস শেষে চুক্তি মূল্য দাঁড়ায় ৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। নতুন অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সে সময়ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ২০ শতাংশ বা ১২ মাস চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠায় রেলওয়ে। কিন্তু এ প্রস্তাব নিয়েই তৈরি হয় জটিলতা। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি মতামত দেয়, চুক্তির ক্ষেত্রে মেয়াদের পরিবর্তে মূল্য বিবেচনা করতে হবে। এতে চুক্তিমূল্য ৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ৪২ মাস তথা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে গেছে। তাতে চুক্তিমূল্য সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ তথা ১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার আনুপাতিক চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে বর্ধিত চুক্তির মূল্য দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে অবশিষ্ট চুক্তিমূল্য ছিল পাঁচ কোটি আট লাখ টাকা। বর্ধিত এ চুক্তিমূল্য দিয়ে আর মাত্র ছয় মাস চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যায় বলে মতামত দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। যা গত বছর মার্চে শেষ হয়ে গেছে। এরপর থেকেই চুক্তি ছাড়া রেলের টিকিট বিক্রি করে যাচ্ছে সিএনএস। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে এ কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।