Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

দেশে ওয়াজ মাহফিলে কিছু বক্তা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ উস্কে দিচ্ছেন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:৫৫ পিএম

বাংলাদেশের ধর্মীয় সমাবেশ তথা মাহফিলগুলোতে প্রচুর লোকসমাগম হয়ে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের গ্রামে-গঞ্জে, এমনকি ইউটিউবসহ সামাজিক নেটওয়র্কের মাধ্যমে কিছু বক্তা ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদে উৎসাহ দিচ্ছেন। একইসাথে এই বক্তারা নারী অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্বেষ বা হিংসা ছড়াচ্ছেন, সে কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এমন ১৫ জন বক্তাকে চিহ্নিত করে ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছয় দফা সুপারিশও করেছে। তবে ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি ইতিমধ্যেই এই পদক্ষেপকে ইসলাম প্রচারে বাধা হিসেবে বর্ণনা করেছে। -বিবিসি বাংলা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশসহ ওয়াজ মাহফিল নিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে বলা হয় কিছু বক্তা যেমন সাম্প্রদায়িক এবং জঙ্গীবাদে উৎসাহ দিচ্ছেন, একইসাথে তারা নারী অধিকার, বাংলা নববর্ষ এবং শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করাসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, ধর্মের নামে বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং শোবিজ তারকাকে নিয়ে বিষোদগার করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের গ্রাম গঞ্জে এই বক্তারা যাচ্ছেন এবং তারা এখন ইউটিউবসহ সামাজিক নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করেও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এসব অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াজ মাহফিলের ১৫ জন বক্তাকে যে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের একজন মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন বলছিলেন, ঢালাওভাবে অভিযোগ তোলা হয়েছে। "প্রতিবেদনটি ঢালাওভাবে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়াজ মাহফিল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যারা কোনো বিদ্বেষ ছড়ায় বা উস্কানি দেয়, আমরাই কিন্তু মাহফিলগুলোতে তাদের প্রতিবাদ করি। যারা তাদের দাওয়াত দেয়, আমরা তাদেরকেও সচেতন করি। যতদিন আমরা লোকজনকে বোঝাতে না পারবো, ততদিন আইন করেও কোনো কাজ হবে না।" তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েকজন বক্তার কারণে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে যাতে ভ্রান্ত কোনো ধারণার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য বিভিন্ন সুপারিশ এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ওয়াজ মাহফিলে বক্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। মাদ্রাসায় উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্য থেকে ওয়াজের জন্য বক্তা হিসেবে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করার সুপারিশও এসেছে। এছাড়াও একটি সুপারিশে বলা হয়েছে, ওয়াজ মাহফিলে বক্তাদের যারা হেলিকপ্টারে করে গিয়ে বড় অংকের অর্থ নেন, তারা আয়কর দেন কিনা, তা আয়কর বিভাগ খতিয়ে দেখতে পারে।

ওয়াজে কোনো বক্তা উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিলে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সতর্ক করতে পারে। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে তাদের ওয়াজ করার অনুমতি না দেয়ার ব্যবস্থা নিতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশও করা হয়েছে। ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এসব পদক্ষেপকে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে এক ধরণের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করছেন। কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মো: ফয়জুল্লাহ বলছিলেন, বিষয়টিতে আগে ধর্মীয় নেতাদের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে তারা মনে করেন। তিনি বলেছেন, "ওয়াজ মাহফিল মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করার বড় একটা মাধ্যম। সেই ইবাদতকে যদি কেউ বিনোদনের মাধ্যম বানিয়ে নেয়, অথবা অশ্লীল অথবা অশালীন কোনো ব্যঙ্গবিদ্রুপ করে অথবা আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো অবস্থা হয়,আমি মনে করি ওলামাদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ টিম বা সেল গঠন করে এর একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে।" স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সুপারিশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের কোনো চিন্তা সরকারের নেই। বক্তাদের সতর্ক করে বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে ওয়াজের মান উন্নত করার ব্যাপারে সুপারিশগুলোতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনীতি বিষয়ক অতিরিক্ত সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলছিলেন, বিদ্বেষ যাতে না ছড়ায়, শুধু সেজন্যই মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। "ইদানিং আমাদের কিছু কিছু ওয়াজ মাহফিলে কিছু বক্তব্য আসে যেগুলোতে ধর্মীয় অনুশাসন বা ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচারের পাশাপাশি কিছু সামাজিক বিদ্বেষ সৃষ্টির বা রাজনৈতিক কথাবার্তা আসে।" "সেগুলো আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় মনিটর করে থাকে। সেইভাবে কয়েকজন বক্তার বক্তব্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আমাদের নজরে এসেছে। সেগুলোর ব্যাপারে আমরা আমাদের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে বলেছি সতর্ক থাকতে, যাতে কোনো বিদ্বেষ বা হিংসা না ছড়ায়।" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক সুরাইয়া আকতার বলেন, ওয়াজ মাহফিলে কিছুটা তদারকি থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন। "এগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই আমার মতে, কিছু বিদ্বেষ ছড়ানোর বিষয়তো আছে। কারণ ওয়াজের অনেক বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে তর্ক বিতর্ক আছে।"



 

Show all comments
  • MD.Uzzal Hossain ২০ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:৫৫ এএম says : 0
    Al Korwan ar Kotha Bolle Uskani Deya Hoy.........................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ