Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

মিয়ানমারের অনীহার কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কটের গ্রহণযোগ্য ও রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে না। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। সকলেই স্বীকার করেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার অচলাবস্থার বরফ গলিয়ে দেয়া চীনের পক্ষে সবচেয়ে সহজ। মিয়ানমারের রাখাইনে চীনের বড় বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক স্বার্থ থাকলেও চীনও বরাবরই এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশও পশ্চিমাদের নানা রকম প্রস্তাব ও উস্কানিমূলক তৎপরতার ফাঁদে পা না দিয়ে চীন ও মিয়ানমারকে আস্থায় রেখে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ফলে দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর চীনের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত হল ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। গত মঙ্গলবার মিয়ানমার, চীন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের ভার্চুয়ালি অংশগ্রহনে দেড়ঘন্টার বৈঠকে সংকটের বরফ গলেনি। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে না পারলেও প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানা গেছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাঁড়া না দিলেও তারা তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানও করেনি বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রস্তাবে চীনের দ্বিমত নেই বলেও জানা গেছে।

এক সময়ের আরাকান বা রাখাইন অঞ্চলে শত শত বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাস করছে। মূলত বৃটিশদের বৈষম্যমূলক আচরণের কারণেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দাবা খেলা ও উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার হয়। ষাটের দশকে রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো মাথ্যাব্যথা কখনোই দেখা যায়নি। অথচ এর চেয়ে গৌণ মাত্রার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের জোরালো সামরিক-কূটনৈতিক ভূমিকা পূর্ব তিমুর, দক্ষিণ সুদানের মত স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটে গত চার বছরেও পশ্চিমাদের ইতিবাচক ভূমিকার কোনো বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। তারা মূলত চীনের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিষয়টির একটি রাজনৈতিক ও কৌশলগত ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে বলে ধরে নেয়া যায়। তবে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার বাহিনীর বর্বর নির্যাতন, এথনিক ক্লিনজিং ও গণহত্যার বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গোচরে নিয়ে আসা এবং আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহিতার মুখোমুখী দাঁড় করানোর প্রক্রিয়াকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সংকটের কথা সব পক্ষই স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে এবং এই ধারাবাহিকতায় সমাধানের পথে গিয়ে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পৌছানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করাই এখনকার বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে তার প্রচেষ্টা আরো জোরালোভাবে অব্যাহত রাখতে হবে।

আমরা চীনের সমর্থন এবং মিয়ানমারের সদিচ্ছার উপর আস্থা রাখতে চাই। মিয়ানমার এবং চীন আমাদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ ক্ষেত্রে কারো পাতা ফাঁদে পা দিয়ে যেমন সম্ভাবনাকে নষ্ট করা যাবে না, আবার একইভাবে এ ধরনের সম্পর্ক ও স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র মিয়ানমার ও চীনের ইচ্ছার প্রতি শর্তহীন আত্মসমর্পনও কাম্য নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমাদের দুর্বল অবস্থান, নিকটতম বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত এবং ওআইসিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর অসহযোগিতার কারণেই রোহিঙ্গা সংকটের ন্যায়সঙ্গত সমাধান বিলম্বিত হচ্ছে। বিশেষত সউদি আরবের মত প্রভাবশালী আরব দেশ সঠিক ভ‚মিকা রাখার বদলে যুগযুগ ধরে সউদি আরবে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশী নাগরিক আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার বিষ্ময়কর ভূমিকা পালন করছে। এহেন বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক ও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। চীন ও মিয়ানমারের সাথে কৌশলগত স্বার্থ ও অবস্থানের বিষয়টিকে নিশ্চিত করা, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি পালন নিশ্চিত করা এবং জাতিসংঘসহ পশ্চিমাদের নীতিগত অবস্থানকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে মূল কুশীলব ও অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রথম ত্রিপক্ষীয় ভার্চুয়াল বৈঠকে ঐকমত্য না হলেও এ বৈঠকেও কিছু ইতিবাচক অর্জন রয়েছে। আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে চীনের মধ্যস্থতাকারির ভূমিকা আরো ইতিবাচক ও জোরালো হবে বলে আমরা আশা করি। এ কামনাও করতে চাই যে, বিশ্বমানবতা ও বৃহত্তর আঞ্চলিক উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও কৌশলগত স্বার্থে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও স্থায়ী সমাধানের পথে এগিয়ে আসবে মিয়ানমার।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন