Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হিজড়া-৪ : প্রযোজ্য বিধানাবলি

মুফতী মোঃ আবদুল্লাহ্ | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

আল্লামা শামী (র)-এর উক্ত বর্ণনা থেকে এটিও বোঝা যাচ্ছে, যে-ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হিজড়া পুরুষরূপে চিহ্ণিত হবে সে-ক্ষেত্রে সে পুরুষ হিসাবে নামায-রোযা পালন করবে; উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবে। আর যে-ক্ষেত্রে নারী হিসাবে চিহ্ণিত হবে সে-ক্ষেত্রে তার ওপর একজন নারীর অনুরূপ নামায-রোযা, উত্তরাধিকারের বিধান প্রযোজ্য হবে।

“হিজড়া হচ্ছে সে ব্যক্তি যার নারী ও পুরুষ উভয়সুলভ গুপ্তাঙ্গ বিদ্যমান; কিংবা তেমন কোনোটিই নেই। সে যদি পুরুষাঙ্গ দিয়ে পেশাব করে, তা হলে পুরুষ; আর যদি নারীসুলভ গুপ্তাঙ্গ দ্বারা পেশাব করে তা হলে সে নারী বলে গণ্য। আর যদি এমন হয় যে, উভয় অঙ্গ দ্বারাই পেশাব করে; তা হলে সেক্ষেত্রে প্রথমে যেটি দিয়ে পেশাব বের হবে সেটিই মূল হিসাবে ধর্তব্য হবে; অন্যটি হবে অতিরিক্ত ও অনুগামী। আর যদি উভয়টি দিয়ে একই সময়ে পেশাব বের হয় তা হলে সেক্ষেত্রে তাকে বলা হবে ‘জটিল হিজড়া’। কারণ, তার ব্যাপারে (আপাতত) নারী বা পুরুষ কোনো একদিক নির্দিষ্ট করা গেল না। আর এমনটি হয়ে থাকে সাবালক হওয়ার পূর্বে” (শামী: খ-১০, পৃ-৪৪৬, যাকারিয়া বুক ডিপো, দেওবন্দ, ভারত + আল-বাহরুর রায়িক: খ-৮, পৃ-৩৩৪; যাকারিয়া বুক ডিপো, ইউ. পি. ভারত)।

“পরে যখন সাবালক হলো এবং তার দাঁড়ি গজালো অথবা সে কোনো নারীর সঙ্গে সহবাস করতে সক্ষম হলো অথবা তার পুরুষের অনুরূপ স্বপ্নদোষ হলো, তা হলে সে পুরুষ বলে গণ্য হবে। আর যদি তার স্তন প্রকাশ পায় বা দুধ বের হয় বা মাসিক হয় বা গর্ভ সঞ্চারিত হয় বা তার সঙ্গে সহবাস করা সম্ভব হয়; তা হলে তাকে নারী বলে গণ্য করা হবে।

আর যদি তার (সাবালক হওয়ার পরেও) উক্ত কোনো নিদর্শনই প্রকাশ না পায় কিংবা নিদর্শনগুলো পরস্পর বৈপরিত্যের প্রমাণ বহন করে এবং কোনো একদিকের নিদর্শনকে প্রাধান্য দেওয়া না যায়; তা হলে সেক্ষেত্রে তাকে ‘জটিল হিজড়া’ বলা হবে” (গায়াতুল-আওতার: খ-৪, পৃ-৪৯৬; এইচ.এম.সাঈদ কোং, করাচী )।

(এক)
শরীয়া আইন গবেষণা ও সাজানো-গোছানো এবং অনারব-আরব বিশ্বে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য আরেকটি প্রাচীন ফিকাহ গ্রন্থ ইমাম আলাউদ্দীন আবূ বকর ইবন সাউদ আল-কা‘ছানী হানাফী র. এর ‘বাদায়েউছ-ছানায়ে‘ ফী তারতীবেশ-শারায়ে‘, ষষ্ঠ খন্ড, ৪১৮-৪২১ পৃষ্ঠায় গ্রন্থকার লিখেছেন-

এক. “অনুচ্ছেদ: ‘জটিল হিজড়া’ বিষয়ে শরীয়তে কয়েকটি বিধান রয়েছে: -তার ‘খাতনা’ এর বিধান, মৃত্যু-পরবর্তী গোসলের বিধান, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিধান এবং আরও অনুরূপ বিধানাবলী।

তার খাতনা’র বিধান হল, পুরুষের পক্ষে তাকে খাতনা করাতে যাওয়া জায়েয হবে না; কেননা হতে পারে সে একজন নারী; অথচ একজন পুরুষের পক্ষে তার গুপ্তাঙ্গের প্রতি তাকানো বৈধ নয়। আবার (বৈধ স্ত্রী ব্যতীত) একজন ভিন্ নারীর পক্ষেও তাকে খাতনা করাতে যাওয়া বৈধ হবে না; কেননা হতে পারে সে একজন পুরুষ.... যে-কারণে বিষয়টির বেলায় সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। ....কারও কারও গবেষণা মতে সরকার প্রধান তাকে একজন খাতনা বিষয়ে অভিজ্ঞ নারীর সঙ্গে বিবাহের ব্যবস্থা করে দেবেন। কেননা সেক্ষেত্রে সে যদি পুরুষ হয় তা হলে ওই নারী স্ত্রী হিসাবে তার স্বামীর খাতনা করতেই পারে। আর সে যদি একজন নারী হয়, তা হলে সেক্ষেত্রে একজন নারী তো প্রয়োজন ক্ষেত্রে আরেকজন নারীর খাতনাও করতে পারে” (বাদায়ে‘: খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪১৮-৪১৯; যাকারিয়া বুক ডিপো, ইউ. পি. ভারত, সংস্করণ-১৯৯৮খ্রি)।

দুই. “আর তেমন জটিল হিজড়া’র মৃত্যু-পরবর্তী গোসল বিষয়টির ক্ষেত্রে কোন পুরুষ তাকে গোসলদান বৈধ হবে না; কারণ হতে পারে সে একজন নারী। আবার কোন নারীর পক্ষেও তাকে গোসলদান বৈধ হবে না; তার কারণ হতে পারে সে একজন পুরুষ। তবে হ্যাঁ, তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দেয়া হবে; হোক সেই তায়াম্মুম করিয়ে দাতা কোন পুরুষ বা নারী। অবশ্য, ওই তায়াম্মুম যিনি করিয়ে দিবেন তিনি যদি তার স্বজন-মাহরাম হয়ে থাকেন তা হলে সেক্ষেত্রে নেকড়া পেঁচানো ব্যতীতই তায়াম্মুম করিয়ে দিতে পারেন; আর যদি তেমন স্বজন-মাহরাম না হয়ে ভিন্ন কেউ হন, সেক্ষেত্রে তাকে নেকড়া পেঁচিয়ে তায়াম্মুম করিয়ে দিবেন এবং দৃষ্টি তার নিজ হাতের দিক থেকে (মৃতের সতর হতে) ফিরিয়ে রাখবেন” (প্রাগুক্ত)।

তিন. “তার বেলায় জামাতের ক্ষেত্রে সালাতের কাতারে দাঁড়ানো বিষয়টির বিধান হল, তেমন জটিল হিজড়া পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের কাতারের পিছনে এবং মহিলাদের কাতারের সামনে তাকে দাঁড়াতে হবে। এটা আমরা ইতোপূর্বে ‘সালাত পর্বে’ যে সতর্কতা অবলম্বনের কথা উল্লেখ করেছি; সেই বিবেচনা সামনে রেখেই” (প্রাগুক্ত)।
চার. “আর তেমন হিজড়া’র সালাতে ইমামতি করার বিষয়-বিধানও একইরূপ, যা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ সে পুরুষ মুসুল্লীদের ইমামতি করতে যাবে না; কারণ হতে পারে সে একজন নারী; অবশ্য (প্রয়োজনে) সে নারীদের ইমামতি করতে পারে” (প্রাগুক্ত)।

পাঁচ. “আর তেমন জটিল হিজড়া’র লাশ জানাযা সম্পাদনের ক্ষেত্রে ক্রমানুসারে/ সারিবদ্ধভাবে (যখন একই সঙ্গে পুরুষ, নারী ও জটিল হিজড়াকে জানাযা দেয়া হবে সেক্ষেত্রে) রাখা’র বিধান হল, তার লাশ রাখা হবে উপস্থিত নারী লাশের পূর্বে এবং পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের লাশের পরে; যা অত্র গ্রন্থের সালাত পর্বেও আলেচিত হয়েছে” (প্রাগুক্ত)।

১। উক্ত বিজ্ঞ গ্রন্থকার আল্লামা কা‘ছানী র. তাঁর অত্র গ্রন্থের শুরুর দিকে প্রথম অনুচ্ছেদে ‘হিজড়া’ এর সংজ্ঞা, প্রকার, সাবালক পূর্ববর্তী অবস্থা ও বিধান এবং সাবালক পরবর্তী অবস্থা ও বিধান সাধারণভাবে বর্ণনা’র পর বিশেষভাবে কেবল জটিল হিজড়াদের বিষয়-বিধানগুলো পৃথকভাবে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন।
সুতরাং আমাদের পক্ষে, যে দু’শ্রেণির হিজড়া অর্থাৎ যারা আলোচিত নিদর্শনাবলী’র নিরীখে পুরুষ কিংবা নারী হিসাবে চিহ্ণিত হয়ে গেছে, তাদেরকে এবং অপর তৃতীয় শ্রেণির (সাময়িক) ‘জটিল হিজড়া’কে একাকার করে ফেলা এবং ‘সাধারণ’ ও ‘জটিল হিজড়া’-সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানকে পৃথকভাবে উপস্থাপন না করে তালগোল পাকিয়ে ফেলা -অবশ্যই সঠিক হবে না; বরং দুঃখজনক হবে। (চলবে)
লেখক : ইসলামি ফাউন্ডেশন, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিজড়া-৪
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ