Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদ্রাসায় পড়েও ‘সফল’ নারী যারা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:৫৫ এএম

মাদ্রাসায় যারা পড়ালেখা করেন তাদের দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতমুখী হতে দেখা যায় বেশি। দুনিয়ার লোভ-ললসা তাদেরকে বিপদঘামী করতে পারে না। সততার সীমার মধ্যে থেকে অনেকে সফলতাও অর্জন করেন। বাংলাদেশের মেয়েরাও এখন মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে অনেকে এগিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগের মতো মেয়ে৷ তবে লেখাপড়া শেষে তাদের জন্য কাজের সুযোগ মাদ্রাসায় পড়া ছেলেদের তুলনায় কম৷ তবে সীমিত সুযোগ কাজে লাগিয়েই কর্মজীবনে সফল হচ্ছেন অনেকে৷

শিদ কামাল রাইয়ান পল্লী বিদ্যুতের সহাকারী পরিচালক৷ পড়েছেন যাত্রাবাড়ির জান্নাতুল বানাত মহিলা মাদ্রাসায়৷ তিনি সেখান থেকে আলিম পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে৷ অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন৷ এরপর যোগ দেন সরকারি চাকরিতে৷

মাদ্রাসায় লেখাপড়ার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘‘শুরুতে যখন মাদ্রাসায় পড়তাম তখন কেউ কেউ মনে করতেন এখানে লেখাপড়া হয় না৷ এখানে পড়ে কোনো চাকরি পাওয়া যায় না৷ কিন্তু পরে তাদের ভুল ধারনা কেটে গেছে৷’’ তিনি জানান, মাদ্রাসায় তার মানসিক বিকাশে কোনো সমস্যা হয়নি৷ তাদের মাদ্রাসায় গিয়ে তারকা শিল্পীরাও অনুষ্ঠান করেছেন৷ তিনি নিজেও অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন৷ পেয়েছেন সাফল্য৷ তার কথা, ‘‘সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আমি মাদ্রাসায় পড়ার কারণে ইসলামি শিক্ষাও পেয়েছি৷ এটা আমার জীবন গঠনে সহায়তা করেছে৷ আমি তো মনে করি মাদ্রাসায় পড়ার কারণে আমি অনেক বেশি সহনশীল৷’’

নাশিদ কামাল রাইয়ান যে মাদ্রাসার পড়েছেন সেই জান্নাতুল বানাত মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহসেনা আক্তার৷ তার পুরো শিক্ষাই মাদ্রাসায়৷ আলিম পাসের পর তিনি ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তা না পড়ে মাদ্রাসা থেকেই সর্বোচ্চ কামিল ডিগ্রি নিয়েছেন৷ সেটা মাস্টার্স সমমান হিসেবে স্বীকৃত৷ তিনি জানান, তার মাদ্রাসার অনেক মেয়ে সরকারি চাকরি পেয়েছেন৷ এমবিবিএস ডাক্তারও হয়েছেন৷ মাদ্রাসার সাবেক ছাত্রী আমেনা খাতুন এখন আসগর আলি হাসপাতালের চিকিৎসক বলেও জানালেন তিনি৷

মোহসেনা আক্তার বলেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-র বই ও সিলেবাস অনুসরণ করা হয়৷ বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান সবই পড়ানো হয়৷ ফলে তারা সবই শিখছে৷ এসবের পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষাও নিচ্ছে৷ তাছাড়া চাকরির ক্ষেত্রেও তাদের সঙ্গে কোনো বৈষম্য করা হয় না’’

নরসিংদির লাখপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় ছাত্রীদের জন্য নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ নিয়মিত শরীর চর্চাও করানো হয় সেখানে৷ শরীর চর্চার জন্য নারী শরীর চর্চা শিক্ষকও আছেন বলে জানান মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হোসাইন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখান থেকে ছাত্রীরা পাস করে কেউ সাধারণ উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে৷ সরকারি ও বেসরকারি চাকরি করছে৷ অধ্যাপক হয়েছেন, শিক্ষক হয়েছেন৷ অনেকে নার্স হয়েছেন৷ একজন দেশের বাইরেও চাকরি পেয়েছেন৷’’ আর মাদ্রাসায় চাকরির বড় একটি সুযোগ আছে সবার৷ এটা বাড়তি৷ তিনি জানান, তিনি নিজেই মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষা নিয়ে আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেননি৷ পরে সাধারণ শিক্ষা নিয়ে বিএড ও এমএড করেছেন৷

এই যে সাফল্য আর বৈষম্যহীনতার কথা, এগুলো সব আলিয়া ধারার এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার৷ এগুলো পরিচালিত হয় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে৷

বাংলাদেশে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাত্র তিনটি৷ ১. মাদ্রাসা -ই-আলিয়া, লালবাগ, ঢাকা ২. সিলেট সরকারি কামিল মাদ্রাসা এবং ৩. সরকারি মুস্তাফাবিয়া কামিল মাদ্রাসা, বগুড়া৷

এছাড়া আলিয়া ধারায় এমপিওভুক্ত মাদ্রাসাও আছে৷ তার মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর এবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে তিন হাজার ৪৩৩, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর দাখিল মাদ্রাসা ছয় হাজার ৪৯৩, একাদশ ও দ্বাদশ শেণি পর্যন্ত পড়ানোর আলিম মাদ্রাসা এক হাজার ৫৫৮ এবং স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়ানোর কামিল মাদ্রাসা ২১৮টি৷ এই মাদ্রাসাগুলো বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে, অর্থাৎ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন৷

এর বাইরে সারাদেশে ২৫ হাজারের মতো কওমি মাদ্রাসা আছে৷ এই মাদ্রাসাগুলো পুরোপুরি বেসরকারি৷ বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া (বেফাক)-এর অধীনে পরিচালিত হয়৷ সিলেবাস ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার৷ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ ডয়চে ভেলে



 

Show all comments
  • Jack+Ali ২৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:৫১ এএম says : 0
    Qur'an and Hadith is the source of most modern source of Knowledge. In the past Muslim were the best in Science and Technology because they used to research the Qur'an and Hadith as such they come Doctors/Mathematician /Oceanography / Astrophysicist/ biology and many more things.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ