Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুবর্ণ বাদ লাল সবুজে পারাবত ও তিস্তা

প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চালু হচ্ছে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ পাল্টে যাচ্ছে দ্রুতযান ও একতা
নূরুল ইসলাম : বাংলাদেশের সেরা ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসে লাল সবুজ কোচ যুক্ত হয়নি। নতুন করে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানী করা এই কোচ পাচ্ছে ঢাকা-সিলেট রেলপথের পারাবত ও ঢাকা-জামালপুরের তিস্তা এক্সপ্রেস। আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন কোচ নিয়ে এ দুটি ট্রেন চলাচল শুরু করবে। অন্যদিকে, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ নামে একটি নতুন ট্রেন চালু হচ্ছে। সেই সাথে ঢাকা-দিনাজপুর রেলপথের দ্রুতযান ও একতা এক্সপ্রেসকে মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে ব্রডগেজের হয়ে চলা শুরু করবে ট্রেন দুটি। এরই মধ্যে ঢাকা-খুলনা রেলপথের চিত্রা এক্সপ্রেসে ভারত থেকে আনা এলএইচবি কোচ সংযোজন করা হয়েছে। শিগগিরি একই রেলপথের সুন্দরবন এক্সপ্রেসেও লাল সবুজ কোচ যুক্ত হবে। খবর রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রের। রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ২৪ আগস্ট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সুবর্ণ এক্সপ্রেসে লাল সবুজ কোচ যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। এর কয়েকদিন আগে সুবর্ণ’র রেক হিসাবে চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়তলী পর্যন্ত লাল সবুজ কোচের লোড ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়। কিন্তু রেলভবনে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক সভায় সুবর্ণকে আপাতত লাল সবুজ কোচ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। লাভজনক ও বাংলাদেশের সেরা ট্রেন হওয়া সত্ত্বেও সুবর্ণকে কেনো লাল সবুজ কোচ দেয়া হলো না, এ প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নতুন ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের কারণেই মূলত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ। সোনার বাংলা এখনও কাক্সিক্ষত যাত্রী পাচ্ছে না। এখনও প্রায়ই এক বা একাধিক কোচ খালি যায়। তার উপর নতুন কোচ লাগানোর পর নানা অভিযোগ লেগেই আছে। সুবর্ণতে ত্রুটিপূর্ণ কোচ যুক্ত করলে ওই ট্রেনেরও বদনাম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সে কারণেই আপাতত সাদা কোচ দিয়ে চলবে সুবর্ণ।
নতুন করে লাল সবুজ কোচ পাচ্ছে ঢাকা-সিলেট রেলপথের পারাবত ও ঢাকা-জামালপুর রেলপথের তিস্তা এক্সপ্রেস। সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট রেলপথে লাল সবুজ কোচ দেয়ার জন্য সিলেটবাসীর পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সুপারিশ করেছেন। আর তিস্তাকে নতুন কোচ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এর যাত্রী সংখ্যার কথা বিবেচনা করে। দীর্ঘদিন ধরেই তিস্তা চলাচল করছে উপচেপড়া যাত্রী নিয়ে। এমনকি এই ট্রেনের দাঁড়ানো (স্টান্ডিং) টিকিটও বিক্রি হয় অনেক।
ঢাকা-সিলেট রেলপথে এক সময় জনপ্রিয় ট্রেন ছিল পারাবত এক্সপ্রেস। শুরুতে এই ট্রেন চলতো ইরানী ১৫টি সাদা কোচ দিয়ে। ২০১১ সালের শেষ দিকে যখন পারাবত থেকে ইরানী কোচ খুলে নেয়া শুরু হয়। তখন থেকেই যাত্রী সেবায় পিছিয়ে পড়ে পারাবত। পরে ১৩টি ভ্যাকুয়াম ব্রেক কোচ দেওয়া হলেও ২০১৩ সালে ঢাকায় এসি কোচ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পর থেকে পারাবতে আর কোনো এসি কোচ ছিল না। বর্তমানে এই ট্রেনটি অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাত্র ১০টি কোচ নিয়ে চলছে। যাত্রীরা জানান, মাঝে মাঝে ৯ টি কোচ নিয়ে চলতে দেখা গেছে পারাবতকে। যাত্রীরা জানান, শুরুতে ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিটে যেখানে পারাবত ঢাকা-সিলেট রেলপথে যাতায়াত করতো সেটি এখন সাড়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় নেয়। সূত্র জানায়, আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন ১৬টি কোচ নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটের দিকে ছুটবে পারাবত। কোচগুলোর মধ্যে থাকবে ২টি এসি সিøপার কোচ, ২টি এসি চেয়ার, ১টি প্রথম শ্রেণি, ৮টি শোভন চেয়ার এবং ২টি ডায়নিং ও নামাজের কোচ।
অন্যদিকে, ঢাকা-জামালপুর রেলপথে আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেসও পাচ্ছে নতুন লাল সবুজ কোচ। গতকাল রোববার তিস্তার জন্য নতুন কোচ পাহাড়তলী থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৬ সালের ১৬ মার্চ চালু হয় আন্তঃনগর ট্রেন তিস্তা এক্সপ্রেস। উত্তরবঙ্গের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগের এটিই ছিল প্রথম উদ্যোগ। দিনাজপুর থেকে পার্Ÿতীপুর ও রংপুর হয়ে গাইবান্ধার তিস্তামুখঘাট পর্যন্ত চলতো ট্রেনটি। এরপর যমুনায় ফেরি পারাপারের মাধ্যমে যাত্রীদের আনা হতো বাহাদুরাবাদ ঘাটে। সেখানে অপেক্ষা করতো তিস্তার আরেক অংশ। সেই তিস্তা সরাসরি আসতো ঢাকায়। তিস্তা এক্সপ্রেস চালু করার পর যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যাত্রীর চাহিদা দেখে রেল কর্তৃপক্ষ একই রুটে আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস চালু করে। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ২৫ জুলাই তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলওয়ে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। তিস্তা দিনাজপুর অংশের নামকরণ করা হয় দোলনচাঁপা। ঢাকার অংশকে ঢাকা-জামালপুর রেলপথে তিস্তা নামেই এটি চালু থাকে। জানা গেছে, ২০১৫ সালে তিস্তার দুটি বগি খুলে নেয়া হয়। ঢাকা থেকে জামালপুর চলাচলকারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রেন এমনিতেই যাত্রীবোঝাই থাকে। দেশের সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহনকারী ট্রেনও বলা হয় তিস্তাকে। আর পুরাতন বগির কারণে যাত্রাপথে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় এই ট্রেনের যাত্রীদের। তিস্তাতে লাল সবুজ কোচ দেয়া হবে ১৮টি। এতে করে এই ট্রেনের যাত্রী সেবার মান অনেকাংশে বাড়বে।
অপরদিকে, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ রুটে অতিরিক্ত যাত্রী ও হাওরাঞ্চলের মাছসহ উৎপাদিত পণ্য সরাসরি রাজধানীতে পৌঁছে দিতেই এই আন্তঃনগর ট্রেন চালু করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে নেত্রকোনার উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সাজ্জাদুল হাসানের কাছে ঢাকা-মোহনগঞ্জ-ঢাকা রেলপথে আরেকটি নতুন ট্রেন সংযোজনের দাবি জানান নেত্রকোনাবাসী। ঢাকায় ফিরে তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন একটি ট্রেনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। পরে তার অনুরোধে রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন গত মে মাসে ঢাকা থেকে হাওর অঞ্চলের শেষ স্টেশন মোহনগঞ্জ পর্যন্ত রেলযোগে পরিদর্শন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রেলপথ মন্ত্রণালয় ঢাকা- মোহনগঞ্জ-ঢাকা রুটে নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনার প্রস্তাব পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এছাড়া, ঢাকা-দিনাজপুর রেলপথের একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেসকে মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজে নেয়া হচ্ছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন রূপে চলতে শুরু করবে এই দুটি ট্রেন। এই দুই ট্রেনে কোচ থাকবে ১২টি করে।



 

Show all comments
  • আরজু ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৫০ এএম says : 0
    খুব ভালো খবর
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুবর্ণ বাদ লাল সবুজে পারাবত ও তিস্তা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ