Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে সার কারখানায় বিস্ফোরণ চরম অব্যবস্থাপনাই দায়ী

প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিপজ্জনক স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও পূর্বপ্রস্তুতির অভাব
চট্টগ্রাম ব্যুরো : কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় ডাই অ্যামোনিয়া ফসফেট (ড্যাপ-১) সার কারখানার ট্যাংকে বিস্ফোরণ ও বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পুরো ঘটনার পেছনে সংশ্লিষ্টদের চরম অব্যবস্থাপনাই দায়ী। সেইসাথে কারখানার অ্যামোনিয়া প্লান্টের মতো বিপজ্জনক ও স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতির ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রাক-প্রস্তুতির অভাব ছিল প্রকট। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান এবং প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির তদারককারী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন গতকাল (রোববার) সাংবাদিকদের একথা জানান।
তারা উভয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও নিয়মিত রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণেই আনোয়ারার ড্যাপ কারখানায় অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর পেছনে কারখানার ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ত্রুটি ও অবহেলা ছিল। দায়িত্বহীনতার পরিচয় না দিলে এমন ঘটনা ঘটতো না। ঘটনায় অবহেলা ও জড়িতদের তদন্তে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে গত ২২ আগস্ট সোমবার ড্যাপ-১ কারখানার বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল, বিধ্বস্ত অ্যামোনিয়া ট্যাংক ও ড্যাপ প্লান্ট গতকাল পরিদর্শন করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ১২ সদস্যের চীনা কারিগরি প্রতিনিধিদল। ২০০৬ সালে চায়না কমপ্ল্যান্ট নামক চীনা প্রতিষ্ঠানটি ড্যাপ কারখানা নির্মাণ করে। তখন অ্যামোনিয়া প্লান্টের জন্য ২৫ বছরের ওয়ারেন্টি (আয়ুষ্কাল) দেয়া হলেও মাত্র ১০ বছরের মাথায় সেটি বিস্ফোরণে অচল হয়ে পড়লো। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান আরও বলেন, অবশ্যই এ দুর্ঘটনার পেছনে কারখানার ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ছিল। এর পাশাপাশি গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পর তা মোকাবিলায় তাদের পূর্বপ্রস্তুতিরও অভাব ছিল। এসময় কারখানার নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাও কোনো কাজে আসেনি। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে এভাবে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে তা নিঃসরণ ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দ্রুতই পানি ছিটানো হয়। কিন্তু ওই সময় ড্যাপ-১ কারখানার পানি ছিটানোর সিস্টেমটি কাজ করেনি। এতে করে গ্যাস খুবই দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
বিস্ফোরণ-পরবর্তী সময়ে বাতাসের গতিবেগ পশ্চিমমুখী হওয়ায় বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, আমাদের সৌভাগ্য ঘটনার সময় বাতাসের গতিবেগ পশ্চিমমুখী ছিল। এর জন্য গ্যাস কর্ণফুলী নদীর দিকে উড়ে চলে যায়। এর ফলে আরও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব কারখানার শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে আরও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার দিকও তুলে ধরেন।
তিনি জানান, এ শোচনীয় দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের ৩০ জন সুদক্ষ কর্মী কাজ করেন। তারা সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা আমাদের জন্য বড় ধরনেরই শিক্ষা ছিল। কিন্তু আমাদের কর্মীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা মোকাবিলা করেছেন। তারা যথেষ্ট দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করেন। অথচ কারখানার নিজস্ব দুর্ঘটনা মোকাবিলা টিমের সবাই আগেই ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়ে গেছে। তদন্ত করে কারখানার যথেষ্ট ত্রুটি পেয়েছি। দায়িত্বহীনতার পরিচয় না দিলে এমন ঘটনা ঘটতো না। আমরা স্থানীয়দের বক্তব্য সংগ্রহ করেছি। সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা জড়িতদের চিহ্নিত করেছি। তবে আমরা চাইছি বিসিআইসি’র টেকনিক্যাল দল তাদের প্রতিবেদন আগে জমা দিক। তারপর ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে সার কারখানায় বিস্ফোরণ চরম অব্যবস্থাপনাই দায়ী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ