Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ডিএমপি’র প্রতিবাদ

প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গত শনিবার শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী খালেদা জিয়া বলেছেন “সরকারের নানা অপকর্ম থেকে জনদৃষ্টি সরিয়ে দিতেই এখন শুরু হয়েছে জঙ্গি জঙ্গি। কিছুদিন আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটনা ঘটলো, এটারও কিন্তু তদন্ত সেরকম কিছু হয়নি। জনগণের কাছে পরিষ্কার করেনি, কে জড়িত, কিভাবে ঘটনাটি ঘটলো। কোনো কিছু জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়। এটা যেতে না যেতে কিছুদিন পরে দেখা গেলো আরেকটা ঘটনা কল্যাণপুরে। সেটার ছবি পত্রপত্রিকায় দেখেছেন। সবাই মারা গেলো এরা অল্প বয়েসি শিক্ষিত ইয়াং ছেলেপেলে। এটা বুঝাই যায় যে, এটা সাজানো ঘটনা। কিন্তু যে কথাটা তারা (সরকার) বলতে চায়, আমরা জঙ্গি নির্মূল করার জন্য তাদের হত্যা করেছি। আমরা বলবো, আজকে কেনো সত্যিকারের জঙ্গি ধরে, তাদের জীবিত কেনো ধরা হলো না? জীবিত ধরা হলে সত্যিকারের তথ্য পাওয়া যেতো তাদের কাছ থেকে।” ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি অভিযান সম্পর্কে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে।

প্রতিবাদে বলা হয়, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গিদের হামলায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা আত্মোৎসর্গ করেছেন এবং ২০ জন দেশী বিদেশী মানুষ নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় যৌথ বাহিনীর সফল অভিযানে সকল জঙ্গি নিহত হয় ও ৩২ জন দেশি বিদেশী জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র-গুলি, গ্রেনেড, ছোরা ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত আলামত বিশ্লেষণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে গুলশান হামলার ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন বাসস্থানের অবস্থান, অর্থদাতা, অস্ত্রদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। উক্ত বাসস্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন পোষাক ও গ্রেনেড সংরক্ষণে ব্যবহৃত বালু ভর্তি বস্তাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। হামলায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যই ছিল আত্মস্বীকৃত জঙ্গি। তারা তাদের পরিবার থেকে দীর্ঘ দিন যাবৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। জঙ্গিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ এ মামলায় জড়িত মাস্টারমাইন্ডদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে সোয়াটের সাথে গুলি বিনিময়ে নিহত হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

প্রতিবাদ লিপিতে আরো বলা হয়, কল্যাণপুরে জঙ্গিদের সাথে গুলিবিনিময়ে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে কল্যাণপুরে তাদের আস্তানা থেকে অস্ত্র-গুলি, গ্রেনেড, ছোরা ইত্যাদি আগ্নেয়াস্ত্র ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত আলামত ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আত্মস্বীকৃত জঙ্গিদের বিভিন্ন ধরনের অডিও, ভিডিও ও স্থির চিত্র পাওয়া গেছে। যা এ ঘটনায় তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে জড়িত থাকার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত। তদন্তে জানা যায়, এ জঙ্গিরা দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ছিল। এ অভিযানে জীবিত আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছে। যেকোন ঘটনায় পুলিশের উদ্দেশ্য থাকে সকল আসামিকেই জীবিত গ্রেফতার করা। কিন্তু যখন কোন অভিযানে পুলিশের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় ও সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি/বোমা ছুঁড়ে তখন অবশ্যই পুলিশ আইনগতভাবে আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে বাধ্য হয়। ঘটনায় পুলিশ জান-মাল রক্ষার্থে সন্ত্রাসীদের প্রতি গুলি ছুঁড়েছে যাতে ৯ সন্ত্রাসী নিহত ও ১ জনকে জীবিত গ্রেফতার করা হয়েছে। যদি ঘটনা সাজানো হতো তাহলে রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানকে জীবিত রাখা হতো না। ইতোমধ্যে রিগ্যানকে অনেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এছাড়াও ঘটনাস্থলের চারপাশের অনেক বাসিন্দা ঘটনা সম্পর্কে তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
গুলশান, কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জে তিনটি অভিযানই দিনের আলোতে সংঘটিত হয়েছে। এজন্য এসকল অভিযানের কার্যক্রম স্থানীয় জনগণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। পুলিশকে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন। দেশি/বিদেশী বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশের কার্যক্রমকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার্থে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেখানে আত্মোৎসর্গ করেছেন সেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের মত দায়িত্বশীল একজন নাগরিকের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য শুধু পুলিশকেই নয় বরং সমগ্র জাতিকে হতাশ করেছে। যেখানে নিহত জঙ্গিদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন তাদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার নিন্দা জ্ঞাপন করে লাশ গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করছেন সেখানে এমন শতভাগ সফল অভিযান সম্পর্কে মনগড়া, বানোয়াট তথ্য প্রদান করে অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা জঙ্গিদের কার্যক্রমকে সহায়তা তথা আশ্রয়-প্রশ্রয়ের সামিল। বিএনপি চেয়ারপার্সনের এধরনের কুরুচিপূর্ণ, দূরভিসন্ধিমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে ডিএমপি’র প্রতিবাদলিপিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ডিএমপি’র প্রতিবাদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ