Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দারিদ্রতা- কুড়িগ্রামে শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে দিলেন মা

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৬:৪৫ পিএম

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় অভাবের তাড়নায় ভরণ পোষণ দিতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের শারীরিক আর মানসিক অত্যাচারে বাধ্য হয়ে এক মা তার ১৫মাসের কোলের শিশু সন্তানকে ব্রিজ থেকে ফেলে দেবার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজে এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে। ব্রিজ থেকে প্রায় ২০ফুট নিচে অথৈ পানিতে ফেলে দেয় শিশুটির মা জামিলা বেগম। পানিতে ভাসতে থাকা শিশু জাহিদকে জীবিত উদ্ধার করে পথচারী ও স্থানীয়রা। এসময় মা জমিলা বেগম পালিয়ে যান। সুস্থ অবস্থায় শিশুটি বর্তমানে স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক রফিকুল ইসলাম-এলিনা দম্পতির হেফাজতে রয়েছে।

জমিলা বেগম জানান,এক বছর আগে এক মাসের কোলের সন্তান জাহিদকে নিয়ে স্বামী হাফিজুর রহমানের বাড়ি রংপুর থেকে বিতাড়িত হন তিনি। এরপর আশ্রয় জোটে পূর্ব কেদার গ্রামের দরিদ্র বাবা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে আসেন। দিনমুজুর বাবার বাড়িতে অভাব অনটন থাকায় তার সন্তানের ভরণ পোষণ নিয়ে প্রায় দ্বন্দ হতো পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে। সন্তানের খাবার এবং খরচ চালাতে মাঝে মধ্যে তাকে নানা নির্যাতন সহ্য করতে হতো। শুক্রবার আমি দু’কেজি চাল সবার আড়ালে বিক্রি করে বাঁচ্চার জন্য খাবার ও তেল-সাবান কিনে আনি। এজন্য বাবা রাগারাগি করে আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। মনের দুঃখে অবুঝ শিশুকে নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। শারীরিক আর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সন্তানকে পানিতে ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নেই।

জমিলার বাবা দিনমজুর জয়নাল মিয়া জানান,সকালে আমি ও আমার ছেলে মাটি কাটতে গিয়েছি। মাটিকাটার স্থানে অদূরে মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে সামনে এগিয়ে যাই। সেখানে জানতে পারি জমিলা তার ছেলেকে পানিতে ফেলে পালিয়েছে। কি কারণে এমনটি করেছে আমি জানি না। তিনি আরো বলেন,দুই বছর আগে রংপুরের মর্ডাণ মোড়ের ভর্ত কবিরাজের ছেলে হাফিজুরের সাথে জমিলার বিয়ে দেই। বিয়ের এক বছর পরেই দুই মাসের কোলের শিশুকে নিয়ে সংসার ভাঙ্গে জমিলার। এসময় জাহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে জমিলা। অন্যদিকে বড় মেয়ে জরিনার স্বামী তার খোজঁ খবর না রাখায় তিন সন্তান আমার সংসারে ফিরে এসেছে। একজনের শ্রমে পরিবারের ৯জন সদস্যের ভরণ পোষণ অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দিনমুজুরী করে এই বিশাল সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আমাকে।

জমিলার মা জোবেদা বেগম জানান, প্রায় জমিলার সন্তান নিয়ে পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকতো। তার খরচ চালাতে চাইতো না জমিলার বাবা। এনিয়ে ‘সংসারে ঝগড়া-কাজিয়া নাগি থাকে’।

জমিলার বৃদ্ধা নানী সুফিয়া বেওয়া বলেন, তার ভিক্ষাবৃত্তির চাল দিয়ে মাঝে মধ্যে জমিলার সন্তানের খরচ চলতো। অভাবের সংসারে জমিলা তার সন্তানকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়।
প্রতিবেশী রোকেয়া বেগম বলেন, প্রায় এই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকে। আজও জমিলার বাবা রাগারাগি করেন। এসময় জমিলাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন তার বাবা। মনের দুঃখে কোলের সন্তানকে নিয়ে হতাশাগ্রস্ত জমিলা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে মা হওয়া। এরপর অভাবের সংসারের চাপ নিতে না পেরে সন্তানকে পানিতে ফেলে দেবার ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন সন্তোষ বলেন,সকাল নয়টার দিকে বাড়ি থেকে তিনি ওই পথে বাজারে যাচ্ছেন। এসময় ব্রিজ দিয়ে যাবার সময় এক মহিলাকে কিছু পানিতে ফেলতে দেখি। কিছু পড়ার শব্দ শুনে নিচে তাকিয়ে দেখি একটি ছোট্ট শিশু পানিতে ভাসছে হাত-পা নাড়ছে। দ্বিগবিদিক না তাকিয়ে চিৎকার করি। এসময় চিৎকার শুনে স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম এবং একজন পথচারী এগিয়ে আসেন। ব্রিজ থেকে নেমে সাঁতরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন তারা। উদ্ধার করতে তাদের ১৫/২০মিনিট সময় লাগে। উদ্ধারের পর আগুন জ্বালিয়ে তাপ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করা হয়। ব্রিজের পাশেই বাড়ি রফিকুল ইসলাম-এলিনা বেগম দম্পতির হেফাজতে রাখা হয় শিশুটিকে।

এলিনা বেগম বলেন, উদ্ধারের পর শিশুটিকে তিনি বুকের দুধ খাওয়ান। শিশুটির মাসহ অন্যান্য অভিভাবকরা দত্তক দিলে তিনি নেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
পানিতে শিশু সন্তানকে ফেলার দেবার কথা স্বীকার করে বলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, শিশুটি আপাতত সুস্থ আছে। বর্তমানে রফিকুল-এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হবে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান,বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তবে খোঁজখবর নিয়ে ওই পরিবারকে সব ধরণের সহযোগিতা আশ^াস দেন তিনি।



 

Show all comments
  • Jack+Ali ২৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৯:৫০ পিএম says : 0
    If our country rule by Qur'an then mother don't have to throw her child in the water.. The enemy of Allah government looting our money and sending to foreign countries. O'Allah appoint a Muslim Leader who will rule by Qur'an so that there will be no criminal in our Beloved Country and also there will be no poor people.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুড়িগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ