Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশ

হিমালয়ের কনকনে হাওয়া-ঘন কুয়াশা তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ৫.৫ চুয়াডাঙ্গায় ৫.৭, ঢাকায় ১০ ডিগ্রি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

অব্যাহত রয়েছে শীতের দাপট। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকের হিমালয় থেকে আসা ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে হিমেল কনকনে হাওয়ার সাথে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা মিলিয়ে মাঘের তীব্র শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে সারা দেশ। গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সিলেট অঞ্চলে শ্রীমঙ্গলে ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দক্ষিণ-পশ্চিমের চুয়াডাঙ্গায় পারদ নেমেছে ৫.৭ ডিগ্রিতে।
ঢাকায়ও বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঢাকার সর্বনিম্ন পারদ ১০ ও সর্বোচ্চ ২২.৪ ডিগ্রি সে.। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬.৭ ডিগ্রি সে.। রাত থেকে সকালের তাপমাত্রা হ্রাসের পাশাপাশি অনেক জায়গায় দিনের বেলায়ও পারদ কমে গেছে। স্থানভেদে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের সবক’টি বিভাগে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। গত ৪৮ ঘণ্টায় রাতের তাপমাত্রা কমেছে স্থানভেদে ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আবহ তৈরি করে উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে হিমালয় পাদদেশ হয়ে আসছে হিমেল কনকনে হাওয়া। মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার ঘোরও বেড়ে গেছে। দিনের বেলায় সূর্যের রোদের তেজ হ্রাস পেয়েছে। এরফলে শীতের কাঁপন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অধিকাংশ জেলায় তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। শীতবস্ত্রের অভাবে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠির কষ্ট-দুর্ভোগ অসহনীয়।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা ও মৌলভীবাজার জেলার উপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর ও খুলনা বিভাগের অনেক এলাকা, সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, স›দ্বীপ ও হাতিয়া এলাকাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
আজ সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে। অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় রাত ও দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ায় সামান্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে জেদ্দা থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে না পেরে চট্টগ্রামে নেমেছে। গতকাল সকালে ঘন কুয়াশার মধ্যে দৃষ্টিসীমা সঙ্কুচিত থাকায় ২৪০ জন যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকার আকাশে কয়েকবার চক্কর দিয়েও নামতে না পেরে সকাল পৌনে ১০টায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে কুয়াশা কমে এলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটটি ফের ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়ে।
কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান : কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত কুড়িগ্রামের জনপদ। হিম শীতের কারণে থমকে গেছে বোরো আবাদ। কর্মজীবীরা পরেছে চরম বিপাকে। জেলা প্রশাসন ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রত‚ল। ফলে দিনমজুর, নিম্ন আয়ের ও চরাঞ্চলের মানুষ রয়েছে চরম বিপাকে।
এদিকে সোমবার সর্বনিম্ন ৬.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফারাজী পাড়ার কৃষক আবুল হোসেন ও মোজাহার আলী জানান, তীব্র্র শীতের কারণে কাজে কর্মে বের হওয়া যাচ্ছে না। একই গ্রামের ফাতেমা বেগম, লাইলি ও আনোয়ারা জানান, ঠন্ডায় রাতে ঘুম হয় না। শিশুরা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরেছে চারদিক। রাতভর ছিপছিপ বৃষ্টির মত ঝরছে শিশির। প্রচন্ড ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে যারা কাজে বের হয়েছেন তাদের অবস্থা জবুথবু। প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বের হচ্ছে না মানুষ। ফলে কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে ভুগছেন তারা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, সরকারিভাবে শীতার্তদের জন্য ৫৭ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারিভাবে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে আলু ও বোরো চাষ নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা থাকলেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে আলু ক্ষেতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আগাম স্প্রের কারণে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে গেছে।
নওগাঁয় শীতে আর ঘনকুয়াশায় স্থবির জীবন
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের দাপট বাড়ছে দেশের উত্তরের জেলা নওগাঁতে। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের কামড়ে ইতোমধ্যে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে নিম্ন আয়ের মানুষরা। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষরা। দুবেলা কাজ না করলে অন্ন জোটে না এমন মানুষরা শীতের প্রকোপে কুঁকড়ে গেছেন।
দিন মজুররা জানান, ধান রোপনের সময়। এই ঠান্ডায় কাদাপানিতে কাজ করতে শীতে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কোনও কাজ করা যাচ্ছে না। তারপরও থেমে নেই কৃষি কাজ। শীতের তীব্রতা ও ঘনকুয়াশাকে উপেক্ষা করেই মাঠে এখন ইরি বোরো মৌসুমে ধান লাগানোর কাজ করছে কৃষক ও দিনমজুররা। নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে নওগাঁয় সর্বনিম্ম তাপমাত্রা ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীতের তীব্র কামড়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ