Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ কি ইরানকে দুর্বল করেছে?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

দ্বিতীয় কারাবাখ যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ইরান এখন নিজের সীমান্তের উত্তরে তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মাধ্যমে আঙ্কারা আর্মেনিয়ান অঞ্চল দিয়ে একটি করিডোর অর্জন করেছে, যার মাধ্যমে তারা অবাধে ক্যাস্পিয়ান অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারবে। এটি ইরানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিতে পারে।
জটিল সম্পর্ক সত্ত্বেও, আজারবাইজান ইরানকে পার্সিয়ান উপসাগর থেকে বাল্টিক সাগর পর্যন্ত প্রসারিত উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোরের জন্য ট্রানজিট দিয়েছে। বর্ধিত সামরিক প্রভাব ছাড়াও তুরস্কের অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি বাকুর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে ইরানের ক্ষমতা সীমিত করবে। তুরস্কের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিস্তৃত আগ্রহ নিয়ে ইরানের দ্বিধাও জটিল। তেহরানের সাথে আঙ্কারার সম্পর্ক জটিল এবং কুর্দি ইস্যু এবং সিরিয়া নিয়ে দুই পক্ষই সহযোগিতা এবং বিরোধিতার ভূমিকা পালন করছে।

একরকমভাবে, কারাবাখ যুদ্ধের সমাপ্তি তেহরানের জন্য কিছু ইতিবাচক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। সেখানকার স্থলভাগের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভিযোজিত হতে পারে। অঞ্চলটি থেকে পশ্চিমাদের রাজনৈতিক পশ্চাদপসরণ ইরানের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উপযুক্ত - তবে এটি তুরস্ক ও রাশিয়াকে শূন্যস্থান পূরণ করার জন্যও প্রস্তাব দেয়, যা ইরানের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, দক্ষিণ ককেশাসের তিন দেশের সাথে রাশিয়া, তুরস্ক এবং ইরানকে নিয়ে ছয় দেশীয় চুক্তির জন্য আঙ্কারার সাম্প্রতিক প্রস্তাব ভূ-রাজনৈতিক প্রবণতা পরিবর্তনের লক্ষণ যা, ইরানের পক্ষে কাজ করবে না।

ইরানের প্রতিকূল অবস্থান কূটনৈতিক ফ্রন্টে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল। যুদ্ধ চলাকালীন, দেশটির রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-মন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি যুদ্ধ শেষ করতে সহায়তার জন্য বাকু, মস্কো, ইয়েরেভেন এবং আঙ্কারা সফর করেছিলেন। ৪ নভেম্বর আরাগচি শান্তি পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছিলেন ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তবে তাতে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। যুদ্ধরত দুই পক্ষের সাথে তুরস্ক ও রাশিয়া কেউই এই পরিকল্পনায় কোনও আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

তেহরান ১৯৯০-এর দশক থেকে যে ভারসাম্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে, যুদ্ধটি তা ব্যাহত করেছে। আজারবাইজান শক্তিশালী হওয়া ও আর্মেনিয়া দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় ইরানের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে - তবে ক্ষমতার বিদ্যমান ভারসাম্য আর টেকসই ছিল না, কারণ ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির সময় দক্ষিণ ককেশাসের ভূ-রাজনৈতিক ভূদৃশ্য এখনকার মতো ছিল না। আজারবাইজানের সাথে সামরিক ও অর্থনৈতিক তুরস্ক জড়িয়ে পড়ায় ভারসাম্যে পরিবর্তন হয়েছে। তেল ও গ্যাসের রাজস্ব দ্বারা চালিত আজারবাইজানের অর্থনৈতিক শক্তিও এই পরিবর্তনগুলোতে অবদান রেখেছিল। কারাবাখের আশপাশের স্থিতাবস্থা আর টিকিয়ে রাখা যায়নি। নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য কী করা যেতে, সে বিষয় নিয়ে ইরান চিন্তিত হয়ে পড়ে।

প্রকৃতপক্ষে, তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি রোধ করতে ইরান খুব বেশি কিছু করতে পারেনি। দীর্ঘকাল তুরস্ককে বিরত রাখার জন্য, মস্কো এবং তেহরানকে নিশ্চিত করতে হয়েছিল যে, হারানো অঞ্চল ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে আজারবাইজান তার সামরিক সাফল্যের জন্য পুরস্কৃত হয়েছে। এটি যুদ্ধের সময় ইরানের পরিবর্তিত বক্তৃতা ব্যাখ্যা করতে পারে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে, তেহরান তাদের শীর্ষনেতার চার প্রতিনিধি নেতাকে উত্তর সফর করতে পাঠিয়েছিল এবং এ বিষয়ে জোর দিয়েছিল যে, ‘নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ’ এবং দখলকৃত অঞ্চলটি মুক্ত করার জন্য ইসলামিক আইনের অধীনে বাকুর সব অধিকার রয়েছে।
তুর্কি ফ্যাক্টারের বাইরেও রয়েছে রাশিয়ান ফ্যাক্টর। প্রায় ২ হাজার রাশিয়ান শান্তিরক্ষী এখন নাগর্নো-কারাবাখে অবস্থান করছেন। ইরানের সীমানা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে তাদের উপস্থিতি তেহরানের জন্য উত্তেজনার আরেকটি উৎস, যার ফলে নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য তাদেরকে আরও সময় ও সংস্থান এবং সম্ভবত শক্তি ব্যয় করতে হবে।

ইরানের জন্য আরও বড় সম্ভাব্য সমস্যা হ›ল উত্তর ইরানে প্রভাব বিস্তারের জন্য আজারবাইজান বিদেশী শক্তিগুলোর জন্য একটি জাম্পিং পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। তুরস্কের বাইরেও, আমেরিকার সাথে আজারবাইজানের সম্পর্ক ২০২০ সালের যুদ্ধের আগে থেকেই ইরানের জন্য উদ্বেগের বিষয়। ওয়াশিংটন প্রায়শই বাকুর সমালোচনা করলেও দুই দেশের স্বার্থ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে একত্রিত হয়। তারা ইউরোপীয় শক্তি সুরক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, এবং সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তঃদেশীয় হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একসাথে কাজ করে। আমেরিকান সংস্থা ব্ল্যাকওয়াটারের (এখন একাডেমি নামে পরিচিত) ভাড়াটেরা আজারবাইজানের সামুদ্রিক প্রশিক্ষণ দেয় এবং আমেরিকা আজারবাইজান নৌবাহিনীর জন্য জাহাজ সরবরাহ করেছিল।

তেহরানের জন্য বড় ভয় হ›ল ইসরাইলি প্রভাবের সম্ভাব্য বৃদ্ধি। কারাবাখ যুদ্ধ দেখিয়েছিল যে বাকু ইসরাইলের প্রযুক্তিতে কতটা নির্ভরশীল। বিভিন্ন দিক থেকে তাদের সমর্থন জয়ের জন্য অবদান রেখেছে। আজারবাইজান-ইসরাইল সম্পর্ক এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে মধ্যস্থতায় বাকুর আগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে। তবে বাকু তেহরানের স্বার্থকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানাবে এমন সম্ভাবনা নেই। তুরস্ক, ইসরাইল এবং ইরানের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বিচক্ষণ কূটনীতির প্রয়োজন হবে। সূত্র : আলজেমেইনার।

 



 

Show all comments
  • হুমায়ূন কবির ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩২ এএম says : 0
    কিছুটা তো হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • জব্বার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৪ এএম says : 0
    সকল ভেদাভেদ ভুলো সকল মানুষদেরকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানিয়া ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৪ এএম says : 0
    আগামী বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি হবে তুরস্ক
    Total Reply(0) Reply
  • মিনহাজ ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৫ এএম says : 0
    তুরস্ক, ইসরাইল এবং ইরানের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বিচক্ষণ কূটনীতির প্রয়োজন হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হেদায়েতুর রহমান ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৩৫ এএম says : 0
    নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য কী করা যেতে, সে বিষয় নিয়ে ইরান চিন্তিত হয়ে পড়ে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজারবাইজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ