Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এবার জমজমাট লড়াই আশা করা হচ্ছে রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে, লড়াই হবে দ্বিমুখি

রাঙামাটি থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:২৩ পিএম

রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের উত্তাপ এবং প্রচার প্রচারণা ততই বাড়ছে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে এক জমজমাট লড়াই আশা করছে পৌরবাসী। কারণ মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে যে দুই প্রার্থী নিজ নিজ দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা উভয়ই রাঙামাটি শহরের অত্যন্ত পরিচিত এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মোট পাঁচজন প্রতিদ্ব›দ্বী থাকলে শেষ পর্য লড়াই হবে দ্বি-মুখি। ভোটারদের সাথে কথা বলে এবং প্রার্থীদের পক্ষে মাঠের প্রচার প্রচারণা দেখে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন পর্যবেক্ষক মহল।

পর্যটন শহর রাঙামাটির জেলা সদরের এই পৌরসভাটি দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভাগুলোর মধ্যে একটি। শহর ঘিরে পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনা থাকায় মেয়রদের কাছে ভোটারদের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। তা ছাড়া এই পৌরসভায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব মিলিয়ে অন্তত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। তাই এখানে রাজনৈতিক হিসাব নিকাশের বাইরেও ভোটের হিসেবে নানা সমীকরণ রয়েছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল। তবে এবারের নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলোর কোনো প্রার্থী না থাকায় মেয়র পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী প্রার্থীরা অনেকটা নির্ভার রয়েছেন। কারণ বিগত দুই নির্বাচনেই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতির প্রার্থী থাকায় ভোটের হিসেবে আঞ্চলিক নেতা সন্তু লারমার একটি প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। এমনকি তারাই ছিল প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে ঁজানা যায় জন সংহতি এবার প্রার্থী দিচ্ছে না। এ নিয়ে নানা মত থাকলেও তা প্রকাশ্যে বলার মতো কোনো প্রমাণ কারো হাতে নেই।

শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দেন পাঁচ প্রার্থী, বাছাইয়ে একজন বাদ পড়লে তিনি আপীলে টিকে আসেন। মেয়র পদে মনোনয়ন জমাদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন, ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রাঙামাটি জেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মামুনুর রশীদ, জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক প্রজেশ চাকমা। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অমর কুমার দে এবং বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল মান্নান রানা। অমর কুমার দে প্রতীক পান মোবাইল; তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ইতোমধ্যে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। ওয়ার্কাস পার্টি প্রার্থী কোদাল প্রতীক এবং জাতীয় পার্টির পার্টির প্রাথী তার লাঙ্গল প্রতীকই পেয়েছেন। সবাই প্রচার প্রচারণা চালালেও নৌকা এবং ধানের শীষের প্রচারনাই তুঙ্গে এবং স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে লড়াই হবে এই দুই জনের মধ্যেই।

মনোনয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন দলের ১১ নেতা। কিন্তু দল শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়রের উপরই আস্থা রাখে। মনোনয়ন পান আকবর হোসেন চৌধুরী।

আকবর হোসেন চৌধুরীঃ
তিনি ২০১৫ সালের নির্বাচনে জিতে বর্তমান পৌর মেয়র। রাঙামাটি জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী তার রাজনৈতিক জীবনে রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে আওয়ামীলীগের রাজনীতি শুরু করেন। এরপর ধাপে ধাপে ছাত্রলীগের কালিন্দিপুর আঞ্চলিক শাখা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর বণরূপা ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি, শহর শাখা ছাত্রলীগের সদস্য, রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করার পর তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি আকবর হোসেন চৌধুরী বিভিন্ন অরাজনৈতিক জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আছেন। তিনি রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব রাঙামাটির সাবেক প্রেসিন্ডেন্ট, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সাবেক সেক্রেটারী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি, এফপিএবি রাঙামাটি জেলা শাখার আজীবন সদস্য, কার্যনির্বাহী সদস্য রাঙামাটি পাবলিক কলেজ, আজীবন দাতা সদস্য রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য। এছাড়াও তিনি ১০টিরও অধিক সামাজিক সংগঠনের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গে আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, আমি পৌরসভাকে নিয়ে যে স্বপ্ন গুলো নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম তার জন্য ৫বছর খুবই কম সময়। এছাড়া ২০১৭ সালে পার্বত্যঞ্চলে ঘটে যাওয়া স্বরণাতীত কালের সর্ববৃহৎ দুর্যোগ পাহাড়ধ্বসের ফলে পৌর এলাকায় অবকাঠামোগত যেসকল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা সংস্কার করতেও আমার দায়িত্বপালন কালীন দীর্ঘ সময় ব্যয় হযেছে। এদিকে বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের ফলে সারা বিশ্ব যেমন থমকে আছে তেমনি আমাদেরও একই অবস্থা এরফলে আমি এখনও অনেক কাজ বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তাই পৌর বাসী যদি আমাকে আবারও একবার সুযোগ দেয় তবে নাগরিকদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে পর্যটন নগরী হিসেবে পৌরবাসীকে একটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক পৌরসভা উপহার দিতে পারবো। তিনি বলেন, শুধু দল নয় আমি সকল সম্প্রদায়ের ভোট পাবো এবং জয়ের ব্যাপারে শতভাব আশাবাদী।

এডভোকেট. মামুনুর রশিদ মামুন
বিএনপি থেকেও সাবেক মেয়রসহ ১২ নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে দল শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন পুত্র এডভোকেট মামুন কে বেছে নেয়। তিনি রাঙামাটি জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও সদর থানা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রথমেই এডভোকেট. মামুনুর রশিদ মামুন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে পৌর এলাকাবাসীর উদ্দেশ্য লিখেন- “পৌর পিতা নয় পৌর এলাকার সেবক হয়ে কাজ করতে চাই। ‘সিনিয়র সকল স¤প্রদায়ের নাগরিকগণ আমার মাথার মুকুট’ স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। স্বপ্ন দেখেছি আধুনিক পরিচ্ছন্ন রাঙামাটি পৌরসভার। আমার মত আরো যারা এমন স্বপ্ন দেখে তেমন স্বপ্নবাজ তরুণ প্রজন্মদের সাথে নিয়ে আগামী পৌর নির্বাচনে রাঙামাটির নতুন ভোটারদের ভোটে নতুন স্বপ্ন পূরণের রাস্তায় এগিয়ে যেতে চাই”।
দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন, ভোটারদের কাছে তার ইমেজও ক্লীন। তবে নিজ দলেই কিছুটা অন্তঃকোন্দল ছিল যা তিনি ইতোমধ্যেই সারিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করেছে দলীয় সূত্রগুলো।

মামুন বলেন, পৌরসভার কাছে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তা দিয়ে আমি সুন্দরভাবে জীবনা চালাতে পারি। তবে পৌরবাসী সেবা করে বাঁচতে চাই। আর তার জন্য প্রয়োজন ভোটারদের সমর্থন। তিনিও বলেন, শুধু দল নয় আমি সকল সম্প্রদায়ের ভোট পাবো এবং জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

দুই প্রধান দলের প্রার্থী জয়ের ব্যপারে শতভাব আশাবাদী হলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না। কারণ তিনি একজন উপজাতীয় প্রার্থী, আর এ পৌর এলাকার অন্তত ৪০ ভাগ ভোটার উপজাতীয়। তবে জয় কার ভাগ্যে আছে তা ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত বোঝ মুশকিল হবে বলেই মনে করছে ভোটাররা। তা ছাড়া ভোটকেন্দ্রে যাওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারার মতো পরিবেশ শেষ পর্যন্ত কতটা নিশ্চিত হবে এ নিয়ে ভোটারদে মাঝে বেশ দ্বিধাদ্ব›দ্ব রয়েছে। এই আশংকা থেকে বিএনপি প্রার্থী মামুন সেনা মোতায়েনেরও দাবি জানিয়েছেন ইতোমধ্যে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে আ’লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন চৌধুরী মেয়র নিবার্চিত হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই পৌরসভায় এবার ইলেক্ট্রনিক্স ভোটিং মেশিনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এখানে মোট ভোটার ৬২ হাজার ৯০২জন, এর মধ্যে পুরুষ ৩৪,২৪২ এবং মহিলা ২৮.৬৭১ জন। এ পৌরসভার মোট ৩১টি কেন্দ্রের ২০১ টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাঙ্গামাটি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ