Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুড়িগ্রাম জেলা সমবায় কর্মকর্তার ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

সরকারি নির্দেশ অমান্য করেই অফিসেই থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা কর্মকর্তার

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৪৬ এএম

দিনের পর দিন কুড়িগ্রামে অফিসে রাত্রিযাপন করে বাড়িভাড়া উত্তোলন করছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলম। ভুয়া বিল ভাউচারসহ অধিক মূল্যে অফিসের আসবাবপত্র ক্রয় এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে কর্মকর্তার রোষানলে পড়েন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। সংগৃহীত মোবাইল ভিডিওতে দেখাযায়, জেলা সমবায় কার্যালয়ের কক্ষে রয়েছে লাল চাদর বিছানো একটি খাট, টেবিল-টিভি ও চেয়ার। অন্য কক্ষে র‌্যাকের উপর সাজানো অফিসের জরুরি ফাইল পত্র। আর নিচে চাল ভর্তি কন্টেইনার, রাইস কুকার,লবণ,হলুদ,আলু-পিয়াজ-রসুন,সবজিসহ রান্নার সরঞ্জামাদি। এই দৃশ্য দেখে যে কারোরই মনে প্রশ্ন জাগবে এটি অফিস না বাসা। খোদ কুড়িগ্রাম জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলম সরকারি অফিসকে বানিয়েছেন নিজের আবাসস্থল।

অনুসন্ধানে জানাযায়, ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেবার পর থেকেই তিনি অফিস কার্যালয়েই রাত্রিযাপন করাসহ খাওয়ার সুব্যবস্থা করছেন। আবাসিক কিংবা বেসরকারি ভাড়া বাসাতে না উঠেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করছেন এই অসাধু কর্মকর্তা। প্রধান কর্মকর্তার এমন কর্মকান্ডে বিব্রতকর পরিস্থিতেই দীর্ঘদিন ধরে অফিস করতে হচ্ছে অন্যান্য স্টাফদের। বদলী আর শাস্তির ভয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তার কান্ডের প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেনা। অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর জেলা সমবায় কার্যালয়ে রাত্রি যাপন না করতে সমবায় কর্মকর্তাদের রংপুর বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ আবুল বাশার স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। সরকারের এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অফিস কার্যালয়ে রাত্রিযাপন করছেন দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সমবায় সমিতি অনুমোদনে উৎকোচ গ্রহণ,ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি,অধিক মূল্যে অফিসের আসবাবপত্র ক্রয়, প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা না দেয়াসহ লক্ষ-লক্ষ টাকা আতœসাতের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে কোন ধরনের মন্তব্য করতে কিংবা তথ্য প্রদানে রাজি নন এই কর্মকর্তা। উল্টো সংবাদকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে তার কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

রংপুর বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ আবুল বাশার তার স্বাক্ষরিত চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অফিসে রাত্রিযাপন করার কোন নিয়ম নেই। ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরেও কেউ থাকলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলমের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার কক্ষে প্রবেশ করতেই তিনি ক্যামেরা, মোবাইল দেখে তেলে বেগুনে জ¦লে ওঠেন। বলতে শুরু করেন আমার ছবি তুলবেন না। গেট আউট,গেট আউট বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান তিনি। এসময় বেল টিপে অফিসের অন্যান্য স্টাফদের ডাকতে থাকেন। এসময় প্রশ্নের জবাবে বলেন,আমি কোন কথা বলব না। সমবায় সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে তথ্য অধিকারে আবেদন দেন।

বদলী এবং শাস্তির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের একাধিক স্টাফ জানান, স্যার এখানে যোগদানের পর থেকে অফিসেই রাত্রিযাপন করছেন। এখানেই তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। অফিসের কেউ ছুটি নিতে চাইলে স্যারকে সাবান,শ্যাম্পুসহ তরিকারীসহ প্রসাধনী উপহার দিতে হয়। না দিলে তার ছুটি হয় না। এছাড়াও অফিসের আসবাবপত্র ক্রয়,বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে ভাতা,খাবার টাকা না দিয়েই তিনি নিজেই পকেটস্থ করেন। তিনি যে রুমটিতে থাকেন বের হয়ে আসার পর তালাবন্ধ করে রাখেন সবসময়। অফিসের কোন স্টাফ সেখানে যেতে পারে না। শুধু বুয়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। অথচ অফিসের এই কক্ষটি সহকারী জেলা সমবায় অফিসারের কক্ষ। এই পদে কেউ না থাকায় তিনি তার বাসস্থান করেছেন যা সরকারি বিধি বহির্ভূত।

প্রায় ১৭বছর ধরে আয়ার কাজ করা মেহরে বানু জানান,‘স্যার অফিসত থাকে। মুই মাঝে মধ্যে ধোওয়া মোচা করি দেং বাহে। স্যারের জন্য রান্নাবান্নাও করি দেং। বেশির ভাগ সময় আরেকজন ছুটা বুয়া রান্নার করি দেয়।’

ভূরুঙ্গামারীর সূর্যোদয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি মমিনুল ইসলাম বলেন, জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম শহীদুল আলম সমবায় সমিতি অনুমোদন নিতে কমপক্ষে ৫হাজার হতে ২০হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেন। যার কাছে যেমন পান তেমন টাকা নেন। অর্থাৎ টাকা ছাড়া সেবা মেলেনা এ অফিসে।

একই সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বলেন,সমিতি অনুমোদন নিতে সরকারের ফি সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করেনি। সমিতির ব্যাংক ড্রাফট কত টাকা এবং এর কোন রশিদ আমাদেরকে দেয়ানি। উপজেলা সমবায় অফিসের এক লোকের মাধ্যমে ‘ভূরুঙ্গামারীর সূর্যোদয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির’ অনুমোদন নিতে জেলা-উপজেলা সমবায় অফিসে খরচ গেছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু জানান, জেলা সমবায় কর্মকর্তা দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। তিনি ট্রেজারি চালানে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দিনের পর দিন সরকারের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করছেন। অফিসে থাকার সুযোগে প্রায় সময় লুঙ্গি-গেঞ্জি পড়ে অফিস করেন।সরকারি নিয়মনীতি ভঙ্গ করে অফিসের অন্যান্য স্টাফদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দিনের পর দিন অনিয়ম আর দুর্নীতি করে যাচ্ছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা। এরকম অনিয়মের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারন উর রশীদ বলেন,সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে কর্মকর্তাদের রাত্রিযাপন করা নিন্দনীয় বিষয়। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়টি ধিক্কার জানাই। সরকারের উন্নয়ন এরকম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারনে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুড়িগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ