Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডাক্তাররা চিকিৎসা বাদ দিয়ে ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত : ক্ষমা চাইলেন সিভিল সার্জনসহ আট ডাক্তার

হাইকোর্টের মন্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বাদ দিয়ে সরকারি ডাক্তারগণ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারা হাসপাতালে আসেন শুধু হাজিরা দিতে। এ মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার মেডিকেল রিপোর্ট এবং একটি ‘ছাড়পত্র’র অসঙ্গতি বিষয়ক রিটের শুনানিকালে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন এবং বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট এবং ছাড়পত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। ওই রিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন, তিন ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। গতকাল তারা আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে আনীত অভিযোগের বিষয়ে দোষ স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
চিকিৎসরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল হবে না এবং দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক থাকবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন। পরে আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, এসপিসহ ১১ জনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেন। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশ আমরা মেনে চলব। আদালতে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুটির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. শাহ পরান চৌধুরী। সরকারপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম।
গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে হাজির হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ ১১ কর্মকর্তা। হাজির হওয়া ব্যক্তিগণ হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আরিফুল হক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. একরামুল রেজা, ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য ডা. ফাহমিদা আক্তার, ডা. তোফায়েল হক, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন এবং নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ মো. শাহরিয়ার, ডা. তাসনিম তামান্না ও ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের এক ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ ১১ জনকে তলব করেন আদালত।
সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এ ঘটনায় নাসিরনগর থানায় দায়ের করা মামলা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে কোনোরকম হয়রানি করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন আদালত।
এ মামলায় হাইকোর্ট ভুক্তভোগী শিশুর ডাক্তারি পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না, তা উদঘাটনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারা তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম, অবহেলা বা গাফিলতি হয়েছে কি না, তা উদঘাটনের জন্য পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারা তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেয়া ছাড়পত্রে বলা হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। সেখান থেকে দেয়া আরেক রিপোর্টে বলা হয়, শিশুটির বাহ্যিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরই আরেকটি তথ্য বলছে, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন হয়েছে।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত বলেছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ৬ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিশুটি নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চার সদস্যের চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতন হয়েছে, বিষয়টি প্রশ্নবোধক।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টায় প্রথম শ্রেণীতে পড়–য়া শিশু (৭) ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা গত ১১ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর থানায় এক শিশুর (১২) বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় শিশুটি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত বছরের নভেম্বর শিশুটিকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একই সঙ্গে তদন্ত কাজ শেষে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত। এ ধারাবাহিকতায় তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলার সিডি (কেস ডকেট) আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসবের ওপর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেয়া হয়।

 

 



 

Show all comments
  • সাদ্দাম ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:২৯ এএম says : 0
    ডাক্তারীর মহান পেশাটা এখন কুলসিত হয়ে যাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাক্তার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ