Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্বজুড়ে সমলোচনার মুখে ফেসবুক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৩৪ পিএম

অস্ট্রেলিয়ায় সংবাদসংশ্লিষ্ট কনটেন্ট নিষিদ্ধ করায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। অস্ট্রেলিয়ায় প্রস্তাবিত একটি নতুন আইনকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে বিরোধের জেরে দেশটির ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো নিউজ কনটেন্ট দেখা বা শেয়ার করার সুযোগ আটকে দেয় ফেসবুক। আইনটি পাস হলে নিউজ কনটেন্ট প্রকাশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিতে বাধ্য হবে ফেসবুক।

আইনটির তীব্র বিরোধিতা করছে ফেসবুক। ফেসবুক বলছে, তারা অস্ট্রেলিয়ায় তাদের কার্যক্রম থেকে সংবাদ আধেয় প্রদর্শন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা আইনটি পাস করার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বাজার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বলছে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ও প্রকাশকদের মুনাফায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই তারা এ রকম একটি আইনের রূপরেখা তৈরি করেছে।

ফেসবুকের পদক্ষেপের ফলে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঢুকে দেশি-বিদেশি সংবাদ সাইটগুলোর ফেসবুক পেজ বন্ধ পাচ্ছেন। তারা কোনো দেশি-বিদেশি খবর ফেসবুকে দেখতে পাচ্ছেন না। খবর শেয়ারও করতে পারছেন না। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো তাদের ফেসবুক পেজে কোনো খবর শেয়ার বা লিংক পোস্ট করতে পারছে না।

ফেসবুকের এই পদক্ষেপের সমালোচনা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ার বাইরেও সমালোচনা বাড়ছে। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, গণমাধ্যম প্রকাশক ও মানবাধিকার গোষ্ঠী এই সমালোচনায় যোগ দিচ্ছে। কেউ কেউ ফেসবুকের আচরণকে ‘বুলি’ হিসেবেও আখ্যায়িত করছে। একই সঙ্গে তারা তথ্যে প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ফেসবুকের পদক্ষেপ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি ফেসবুকের এই পদক্ষেপকে ‘আনফ্রেন্ড অস্ট্রেলিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই পদক্ষেপকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও হতাশার বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

ফেসবুক ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন চাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ফেসবুকের এই পদক্ষেপে অস্ট্রেলিয়ার সরকার ভয় পাবে না।

প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশটির অন্য কর্মকর্তারাও ফেসবুকের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া দেশটির সাধারণ মানুষও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অস্ট্রেলিয়ার পরিচালক বলেছেন, তথ্যের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে ফেসবুক। একে ভয়ানক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বাইরেও ফেসবুকের বিরুদ্ধে সমালোচনা জোরদার হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অর্থমন্ত্রী জোস ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, সংবাদ নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তে কম্যুনিটির ওপর নিদারুণ প্রভাব ফেলবে। প্রতি মাসে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ফেসবুক ব্যবহার করেন। দেশটিতে সংবাদের জন্য ফেসবুকের ওপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেন নাগরিকরা।

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্ক ম্যাকগোয়ান বলেছেন, ফেসবুক যেন ‘উত্তর কোরিয়ার একনায়কে’র মতো আচরণ করছে। অন্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করায় ভুল তথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্ব আরও বেশি হারে ছড়াবে ফেসবুকে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অস্ট্রেলিয়া পরিচালক বলেন, ফেসবুক অবাধ তথ্য প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আরেক বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, একটি বেসরকারি কোম্পানি মানুষের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে—এই বিষয়টি উদ্বেগজনক।

অস্ট্রেলিয়ার বাইরে বৃটেনের গণমাধ্যম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান জুলিয়ান নাইট ফেসবুকের এই আচরণকে ‘বুলিয়িং’-এর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি মারাত্মক দায়িত্বহীন কাজ, বিশেষ করে আমরা যখন কোভিড টিকা নিয়ে ভয়াবহ ভুল তথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্বের মুখোমুখি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিষয় নয়। ফেসবুক যেন পুরো বিশ্বকে বলছে যে, যদি তোমরা আমাদের ক্ষমতকে খর্ব করতে চাও, আমরা তাহলে মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনকেই সরিয়ে দিতে পারি।’

বিশ্বব্যাপী সংবাদ প্রকাশকরাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা বলছে, ফেসবুকের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জার্মানির সংবাদ প্রকাশকদের সংস্থা বলেছে, সময় এসেছে বিশ্বের সকল সরকার মিলে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর বাজার-ক্ষমতা সীমিত করার। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেসবুক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ