Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:১৬ পিএম

অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসায় সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জানি তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) দারুনভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন যে চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। এমন কি যে হাসপাতালে তিনি ছিলেন সেখানেও সম্ভব হয় নাই। প্রয়োজনে সুচিকিৎসার জন্য তার বাইরে যাওয়া দরকার হবে। এই ব্যাপারে সরকারেরে একটা নিষেধাজ্ঞা আছে। আমরা দাবি জানাবো, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক যেন তিনি তার চিকিৎসার প্রয়োজনে যখন যেখানে যেতে চান তিনি যেতে পারেন।

সরকারের আরোচিত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যদিও এই নিষেধাজ্ঞাটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। কারণ এদেশের ইতিহাস বলে যে, অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে যাওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি জেলে থাকা অবস্থাও বাইরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে। এই অযৈাক্তিক ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা দরকার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বার বার বিরোধী দলীয় নেত্রী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে যে, কখন কোথায় চিকিৎসার জন্য যেতে চান। এবং যেটাই প্রয়োজন হবে সেটা যাতে বিঘ্নিত না হয় সরকারের উচিত সেটা নিশ্চিত করা।

সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। এটা রাজনৈতিক বিষয় না, এটা তার চিকিৎসার বিষয়। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতাদেশের দ্বিতীয় দফা মেয়াদেও শেষ প্রান্তে পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির চাওয়া কি জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার, আমরা তো বরাবর বলেছি- আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি তাকে সাজাই দেয়া হয়েছে অন্যায়ভাবে, বিনা অপরাধে। যারা অপরাধে দন্ডপ্রাপ্ত হয়েছে এবং বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি দন্ডপ্রাপ্ত তাদেরকেও মুক্তি দেয়া হয়েছে। কেনো দেয়া হয়েছে সেটা আপনারাও জানেন। কারণ এটা খালেদা জিয়ার জন্য প্রযোজ্য না। তিনি সরকারের আপনজন না, প্রতিপক্ষ। সরকার তার প্রতি যে আচরণ করছে যেটা প্রতিপক্ষের না, শত্রুর আচরণ।

তিনি বলেন, সরকার সকলের সরকার হওয়া উচিত। যেটা প্রমাণ করার জন্য হলেও অবিলম্বে তাকে নিশঃর্ত মুক্তি দেয়া এবং তিনি যাতে স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারেন, সুচিকিৎসা নিতে পারেন এবং নাগরিক হিসেবে তার যে অধিকার সেই অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

খালেদা জিয়া বর্তমানে কেমন আছে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই ব্যাপারে তার যারা চিকিৎসক টিম এবং তার আত্মীয়স্বজনদের বক্তব্য আপনারা বিভিন্ন সময়ে জানছেন এবং প্রকাশও করছেন। এর বাইরে তো বলার কিছু নাই। কারণ আমরা তো তার সাথে দেখাই করতে পারি না। আমরা আপনাদের মতো যতটুকু জানি তিনি দারুনভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন।

গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাস স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়ার পর থেকে তিনি গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজায়’ আছেন। প্রথম দফার পর পরিবারের আবেদনের আরো ৬ মাস সাজা মওকুফ করা হয় যার মেয়াদ আগামী ২৪ মার্চ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার ভাই-বোন ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউই দেথা করতে পারেন না। দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া ‘গৃহবন্দি’ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে এটর্নি জেনারেল পদকে নিরপেক্ষ করার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি সাংবিধানিক পদে দলীয় পদে নিযুক্ত করা দেশের ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা এবং নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার কার্যালয়কে নগ্ন দলীয় করণের অপচেষ্টা ও একটি অত্যন্ত মন্দ দৃষ্টান্ত। দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার পদের নিরপেক্ষতা যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটর্নি জেনারেলের ‍উচিত হয় দলীয় পদ কিংবা এটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করা। যারা তাকে নিয়োগ দিয়েছে তাদেরও উচিত অনৈতিক এই বিষয়টির গুরুত্ব ও জনমনে এর অনিবার্য বিরুপ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দলের উপ-কমিটি থেকে অবিলম্বে এটর্নি জেনারেলকে বাদ দেয়া।

গত ২০ ফেব্রæয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ভার্চুয়াল এই বৈঠকে সিঙ্গাপুর চিকিৎসাধীন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ খন্দকার মোশারররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুক্ত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ