Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশে

পাহাড়ের ফুলঝাড়

মো. ইব্রাহিম শেখ, খাগড়াছড়ি থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

খাগড়াছড়ির পাহাড়ে উৎপন্ন ফুলঝাড়– বিক্রি করে ভাগ্যবদলের চেষ্টা করছে খাগড়াছড়ির দরিদ্র ও শ্রমজীবী পরিবারগুলো। এ ফুলঝাড়– দরিদ্র মানুষের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হয়ে উঠেছে, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ফুলঝাড়– শ্রমজীবী মানুষকে এনে দিয়েছে কর্মসংস্থান। আর এ ঝাড়– এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।
ঘরদোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে জুড়ি নেই পাহাড়ি ফুলঝাড়–র। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহর বন্দরের প্রায় সর্বত্রই রয়েছে এর কদর। জানুয়ারি-এপ্রিল খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড় থেকে স্থানীয় নারী ও পুরুষরা এ ফুলঝাড়– সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসে বিক্রির উদ্দেশ্যে। জুমে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার কৃষি পণ্যের সঙ্গে এই ফুলঝাড়– হয়ে ওঠেছে তাদের বাড়তি উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। এদিকে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফুলঝাড়–র ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষজন।
এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আবুবকর বলেন, প্রতিবছরই আমরা ৩/৪ মাস ফুলঝাড়–র কাজে জড়িত হই এবং দৈনিক ৫০০ টাকা বেতনে কাজ করি। শ্রমিক আবুবকর আরো বলেন, এই মৌসুমটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভালো, কেননা এই জানুয়ারি-এপ্রিল মাস আমাদের প্রতিদিনই কাজ করতে হয়, আর টাকাও ভালো পাওয়া যায়।
ফুলঝাড়– শ্রমিক লোকমান বলেন, এ কাজে আমাদের তেমন কষ্ট হয় না। আমরা ফুলঝাড়–গুলো নেড়ে নেড়ে রোদে শুকাই আর পরে আটি বেঁধে ট্রাকে বোঝাই করি। জেলা সদর ছাড়াও, পানছড়ি, দিঘিনালা, মাটিরাঙা মহালছড়ি, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকেও পাইকাররা ভিন্ন ভিন্ন দামে সংগ্রহ করে থাকেন গৃহস্থালি কাজের অন্যতম প্রয়োজনীয় এই ফুলঝাড়–। আর সংগ্রহের পর খোলা আকাশের নিচে রাখা হয় শুকানোর জন্য। তারপর ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা করে কাটা ১০ থেকে ১২টি ফুল দিয়ে তৈরি করা হয় প্রতিটি ঝাড়–। এরপর জিপ কিংবা ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারদের কাছে।
এদিকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের ঢালে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফুলঝাড়– এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশর নানা প্রান্তে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি বিদেশেও হচ্ছে রপ্তানি। তাছাড়া ফুলঝাড়– সংগ্রহ ও বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরা।
খাগড়াছড়ির ফুলঝাড়– ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতি বছরই এ ফুলঝাড়–র ব্যবসা করে থাকি। এই ব্যবসা করে আমাদের সংসার বেশ ভালো চলে। আমরা প্রথমে পাহাড় থেকে বিভিন্নজনের কাছ থেকে এই ফুলঝাড়– সংগ্রহ করি, তারপর সব এক জায়গায় সংগ্রহ করে শুকিয়ে আটি বেঁধে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। এক ট্রাক ফুল ঝাড়–র বিক্রি করে আমাদের ২০-২৫- হাজার টাকা লাভ হয়। পাহাড়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা এই ফুল ঝাড়– সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের নেই কোনো পরিসংখ্যান, তবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ আর পরিচর্যা করা গেলে পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখতে পারে এ প্রাকৃতিক সম্পদটি-জানালেন কৃষি ও বন কর্মকর্তারা।
খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুন্সি রশিদ আহাম্মেদ বলেন, এ ফুল ঝাড়–র সঠিক তথ্য কোনো বিভাগের কাছে নেই। প্রতিবছর এ সময়ের দুই-তিনমাস খাগড়াছড়ির কয়েকজন ব্যবসায়ী খাগড়াছড়ির থেকে এই ফুলঝাড়– দেশের নানান প্রান্তে সরবরাহ করে লাভবান হয়। তিনি আরো বলেন, এই ঝাড়– খাগড়াছড়ির পাহাড়ে কোনো যতœ ছাড়াই বেড়ে ওঠে, আর পাহাড়ের কিছু জনসাধারণ তা সংগ্রহের পর বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন, এ শুকনো মৌসুমে খাগড়াছড়ির ফুলঝাড়–র দেখা মেলে। প্রাকৃতিগতভাবে এ ফুলঝাড়– উৎপাদিত হয় খাগড়াছড়ির। বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম আরো বলেন, খাগড়াছড়ির থেকে এ ঝাড়– পরিবহন করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নেয়া হয়। আর এই পরিবহনের অনুমতি জন্য সরকারিভাবে আমরা রাজস্ব গ্রহণ করে থাকি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়ের ফুলঝাড়
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ