Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সুবিচারের প্রতীক শ্বেতশুভ্র অট্টালিকার গায়ে যেন কোনো কালিমা না লাগে

বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের আশাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

সুবিচারের প্রতীক শ্বেতশুভ্র অট্টালিকাটির গায়ে কোন কালিমা লাগে, এমন কিছু যেন আমরা না করি। অবসরোত্তর সংবর্ধনায় বিচারপতি,আইনজীবী তথা বিচারাঙ্গন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে এ মন্তব্য করেছেন অবসরে যাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। গতকাল রোববার ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তার বিদায় উপলক্ষে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী (বার অ্যাসোসিয়েশনের) সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক এবং অন্য আইনজীবীরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আরও বলেন, সাংবিধানিকভাবে বিচারবিভাগ স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবে কতটুকুন স্বাধীন তা, আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি। রাষ্ট্রের তিনটি (নির্বাহী, আইন ও বিচার) বিভাগের চৌহদ্দি সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ২২ বছরের ওকালতি জীবনের ইতি টেনে ২০০১ সালে বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করি। সেদিন থেকেই আমার জীনের মোড়টা ঘুরে যায়। সেদিন থেকেই মনে হয়, সত্য যে কঠিন, সেই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।
বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি সবার যৌথ প্রয়াসেই বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা আরও পরিণত ও উন্নত হবে। সমষ্টিগ প্রয়াস ও প্রচেষ্টায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেরই নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। সুবিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচারালয়ের সর্বনিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পদাধিকারীর ঐক্যবদ্ধ থাকা একান্ত প্রয়োজন।
বিচারবিভাগ স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে বিচারবিভাগ স্বাধীন, কিন্তু বাস্তবে কতটুকুন স্বাধীন তা, আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি। রাষ্ট্রের তিনটি (নির্বাহী, আইন ও বিচার) বিভাগের চৌহদ্দি সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যেখানে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে থাকার নির্দেশনাও আছে। নিজ নিজ পরিধির মধ্যে থেকে কে কতটুকুন কাজ করবে তা সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে যাতে কেউ রেখা অতিক্রম করতে না পারে।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, বিচার ব্যবস্থা তার নিজস্ব গতিতেই চলে। শত চেষ্টা চালিয়েও কেউ তার গতি রোধ করতে পারে না, পারবে না। যত বাধা বিপত্তি কিংবা ঘাত-প্রতিঘাতই আসুক না কেন আমাদের ঐকান্তিক ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বিচারবিভাগের গতি কেউ রোধ করতে পারবে না।
আইনের তত্ব, তথ্য-উপাত্ত পরিষ্কারভাবে না জেনে আদালতের রায়কে কেউ যেন বিতর্কিত না করেন সেই আহবান জানাচ্ছি। অনেক সময় বিচারবিভাগ প্রদত্ত আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে বিচারক ও বিচারব্যবস্থাকে এক করে ফেলা হয়। আমরা ভুলে যাই যে বিচারকও একজন মানুষ।
বিদায় বেলায় সবার প্রতি অনুরোধ রেখে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার বলেন, সুবিচারের প্রতীক শ্বেতশুভ্র অট্টালিকাটির গায়ে কোন কালিমা লাগে, এমন কিছু যেন আমরা না করি।
প্রসঙ্গত: ১৯৫৪ সালের ১ মার্চ মির্জা হোসেইন হায়দারের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে জেলা আদালত, ১৯৮১ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে প্রাক্টিস করেন। ২০০১ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০০৩ সালের ৩ জুলাই স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচারপতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ