Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

আদালতে নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন কিশোর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

আদালতে হাজির হয়ে হেফাজতে থাকাকালে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলার আসামি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। গতকাল ঢাকার মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে তিনি এ বর্ণনা দেন। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস কিশোরের বক্তব্য রেকর্ড করেন এবং দু-একদিন পর আদেশ দেবেন বলে জানান।

এছাড়াও নির্যাতনের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন তিনি। আবেদনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এসব তথ্য জানিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর গ্রেফতার হন। কিন্তু তার তিনদিন আগে ২ মে বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে বাসা থেকে সাদা পোশাকধারী ১৬/১৭ জন লোক তাকে মুখোশ পরিয়ে হাতকড়া লাগিয়ে নির্জন অচেনা জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর ২ মে থেকে ৩ মে পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগে কিশোর বলেন, গত বছরের ২ মে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাসার কলিং বেলে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললেই অপরিচিত এক লোক আমাকে বলেন দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে নেন। সাথে একটা ভালো শার্ট পরেন। আমি পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে পরিচয় দেয় নাই। আলাপ-আলোচনায় তাদের একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকেই তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেনি। বাসা থেকে আমার মোবাইল ফোন, সিপিইউ ও পোর্টেবল যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন প্রচন্ডভাবে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু তারা গাড়িতে অনেক জোরে জোরে শব্দ করে গান বাজনা বাজাচ্ছিল। হয়তো আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে পুরনো একটি স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির রুমে নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রজেক্টরের মাধ্যমে একটির পর একটি কার্টুন আমাকে দেখানো হচ্ছিলো। সেগুলোর মর্মার্থ আমার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে। করোনা নিয়ে আমার কিছু কার্টুন দেখিয়ে বলে কেন এগুলো আঁকছস? কার্টুনের চরিত্রগুলোর বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। একপর্যায়ে আমার কানে প্রচন্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার পায়ের হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।
কিশোর বলেন, এভাবে কয়েক দফা আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক টর্চার অত্যাচার চালায় তারা। পরবর্তীতে আমি নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পাই। র‌্যাবের কার্যালয়ে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। মুশতাক আহমেদ আলাপের সময় আমাকে জানান তাকেও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ৬ মে আমাদের রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, কিশোরের ভাই লেখক ও অভিনেতা আহসান কবির ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ৫০ নং আইন) এর ৪/৫/৬/৭ ধারা মোতাবেক অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিতে আবেদন করেছেন কিশোর। আদালত আবেদন গ্রহণ করে আদেশের জন্য দুই দিন সময় নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ২০২০ সালের ৫ মে থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর চলতি বছরের ৫ মার্চ দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ছয় মাসের জামিনে কারাগার থেকে বের হন তিনি।



 

Show all comments
  • Jack+Ali ১১ মার্চ, ২০২১, ১২:০৮ পিএম says : 0
    Why we liberated our country from barbarian pakistan army??? our ruler become more barbarian than Pakistani Army.... O'Allah rescue us from this ruler and appoint a muslim leader who will rule our country by Qur'an then all the crime will flee from our Beloved Mother Land. O'Allah punish these people who are torturing us.
    Total Reply(0) Reply
  • Jack+Ali ১১ মার্চ, ২০২১, ১২:১০ পিএম says : 0
    O'Allah destroy these Government and curse them.............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ