Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনাকালে মানবিক কর্মকান্ডে প্রশংসিত এক জনপ্রতিনিধি ছিলেন এমপি কয়েছ

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২১, ৫:১৯ পিএম

‘‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’’ জীবনধর্মী এ আপ্তবাক্যের বাস্তবতা ষোল আনাই যেন পূর্ণ হয়েছে সিলেট ৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছের জীবনে। করোনার ভয়াল আক্রমণ ভীতি নস্যি ভেবে, সেই মুর্হুতে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সাধারণ মানুষের পাশে তিনি। তার কর্ম-তৎপরতা সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু মৃত্যু ভীতি এড়িয়ে মানব সেবায় নিয়োজিত এ মানবিক জনপ্রতিনিধি অবশেষে করোনা আক্রমণে অসহায় আতœসর্মপন করে বিদায় নিলেন চিরদিনের জন্য। তার এমন বিদায়ে অশ্রসিক্ত আমজনতা। কাঁদছে রাজনীতিক সহযোদ্ধারা। একই সাথে অনুসারীদের চোখ জুড়ে অশ্রুর ফোঁটা। অথচ করোনাকালীন সময়ে তার এ ‘ব্যতিক্রমী’ সেবা দৃষ্টান্তে অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা হয়েছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্ভিক। এক মুর্হুতের জন্য সাধারন মানুষের পাশ ছেড়ে যাননি। দেশব্যাপী সাধারন ছুটিতে তখন ছিল বাংলাদেশ। নিম্ন আয়ের মানুষেরা অপেক্ষায় ছিলেন সরকারি ত্রাণ সাহায্যের অপেক্ষায়। দুর্যোগকালীন এ সময়ে নিজ এলাকায় থেকে এই সাংসদ সরকারি ত্রাণ সহায়তা বণ্টন নয়, নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ, তিনটি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করা, স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ নানা কাজে সরাসরি নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন সারাদিন। সে সময় মানবিক কর্মকান্ডে ব্যাপক প্রশংসিতও হয়েছিলেন ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই এলাকায় ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস। প্রতিদিনই নিজ সংসদীয় এলাকার সংকটে পড়া মানুষদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। নিজে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদেরও নামিয়েছিলেন মাঠে। দুর্যোগকালীন সময়ে এই সংসদ সদস্যের এমন উদ্যোগ প্রশংসায় ভাসেন সর্বস্তরের মানুষের। দক্ষিণ সুরমা ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে সিলেট-৩ আসন। এই আসনের টানা তিন বারের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। সরকারী ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠান ও নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগেও করোনাভাইরাস সঙ্কটে পড়া মানুষদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন তিনি। গত বছরের ২২ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগেই ঢাকা থেকে এলাকায় চলে আসেন মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস। তখন করোনাকালীন অন্ধকারের পুরো সময়ই এলাকাই থেকেছেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা গেছে এই সাংসদকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সাংসদ কয়েস নিজ এলাকার জনগণকে সচেতন করতে প্রচারাভিযানও শুরু করেন। এ সময় করনীয় নির্ধারণে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠক করেন তিনি। লকডাউন ঘোষণার পর বিপাকে পড়া মানুষদের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন তিনি। ক্ষণজন্ম এ জনপ্রতিনিধি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৫ সালের ৩ জানুয়ারি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। করোনা সংক্রমণের শুরুতে নিজ সংসদীয় এলাকার মানুষজনকে সহযোগিতা করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন কয়েস। ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান শুভ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে ৮ মার্চ ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে করোনা পরীক্ষায় কোভিড ১৯ সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তাকে প্রথমে কোভিড কেবিন ও পরে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদ বলেন, তাকে ৭ মার্চ (রোববার) রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন সকালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন তিনি। বিকালে তার ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে টিকা নিয়েছিলেন সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছ। তবে ছিল না কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থতা বোধ করতে থাকেন তিনি। এরপর ৭ মার্চ সিলেট থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হন কয়েস। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন ( দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ একাংশ) থেকে প্রথমবারের মত সংসদ নির্বাচিত হন তিনি। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি । এদিকে, এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় তারা এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। এদিকে, সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রথশ জানাযা অনুষ্টিত হবে শুক্রবার সকাল ১০ টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। তারপর বেলা ১১ টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের নুরপুরস্থ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে তার লাশ । পরে ঐ দিন বিকাল ৫টায় ফেঞ্চুগঞ্জে বাড়ির পাশে জানাযা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে চিরদিনের জন্য সমায়িত করা হবে তাকে। মৃত্যু কালে স্ত্রী ্ও এক পূত্র সন্তান সহ অসংখ্যগুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ