Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দানবাক্সে কোটি টাকার রহস্য : ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ

মোহাম্মদ আবদুল অদুদ | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২১, ১০:১৫ পিএম

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে দান মিলেছে প্রায় আড়াইকোটি টাকা। মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফ আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকেই তিনি এই মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত। দান সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা মহান আল্লাহর মেহেরবানী। দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ মহান আল্লাহকে রাজিখুশি করার জন্য এবং তারই রেজামন্দি হাসিলের জন্য দান করে থাকেন।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইনকিলাবের এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। এসময় মুছল্লীদের উদ্দেশে কথা বলেন কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক। বেশ কয়েকজন মুছল্লী এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় এই কোটি টাকার রহস্য। স্থানীয় বাসিন্দা আরশাদ আলী জানান, ৮টি সিন্দুকের মধ্যে শুধু টাকাই নয়, জমা পড়ে গহনা ও ডলারসহ বিদেশী মুদ্রা। রফিকুল ইসলাম নামে আরেক মুছল্লি বলেন, স্থানীয়দের চেয়ে কিশোরগঞ্জের বাইরের জেলা থেকে বেশি অনুদান আসে। মসজিদ দেখতে আসা ফরহাদ হোসেন ভুইয়া জানান, এই মসজিদে বিশেষ বিশেষ দান করা হয়। তিনি বলেন, কেউ কেউ মানত করেন যে, তার ছেলের চাকরি হলে এই পরিমাণ টাকা বা বিশেষ বস্তু দান করবেন। চাকরিটা হয়ে গেলে তারা বিশ্বাস থেকে মানতের টাকা বা গহনা বা বিশেষ বস্তুটি দান করেন। এইরকম আরও নানা কারণে তারা মানত করেন।

প্রতি তিন মাস পর পর সিন্দুকগুলো খোলা হয়। তবে সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি ২০২১ করোনা পরিস্থিতিতে ৫ মাস ৪ দিন পর খোলা হয় ৮টি সিন্দুক। সিন্দুকে মিলেছে নগদ ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো.আব্দুল্লাহ আল মাসউদ গণমাধ্যমকে জানান, ২২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি সিন্দুক খোলা হয়। প্রথমে দানসিন্দুক থেকে টাকা বস্তায় ভরা হয়। এবার সবচেয়ে বেশি ১৪ বস্তা টাকা জমা হয়েছে সিন্দুকে। পরে বস্তা খুলে শুরু হয় টাকা গণনার কাজ। এসময় নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। টাকা গণনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদ মাদরাসার ৬০জন ছাত্র-শিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন। এর আগে ২০২০ সালের ২২ আগস্টে সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন এক কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭১ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। নগদ টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দান করেন।

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ সম্পর্কে জানা যায়, আড়াইশ বছরের প্রাচীন এই মসজিদটি কিশোরগঞ্জ-তো বটেই, বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ সারা দেশেই যার রয়েছে আলাদা পরিচিতি। কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্তের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত মসজিদটি । যার দূরত্ব জেলার রেল স্টেশন কিংবা বত্রিশ বা গাইটাল বাস স্টেশন থেকে এক কিলোমিটার। মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে পাঁচতলা উঁচু দৃষ্টিনন্দন মিনার। মহিলাদের আলাদা নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রিয়েছে মসজিদটিতে। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত মসজিদটি শুধু মুসলিমদের কাছেই নয়, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কাছেও পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত। মসজিদটির প্রতিষ্ঠা নিয়ে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। বীর ঈশা খানের অধস্তন পুরুষ দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা আধ্যাত্মিক সাধনায় জীবন যাপন করতেন। আধ্যাত্মিক এই পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিত হন এবং তাকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্ত সমবেত হন। পরে তার এবাদতের জন্য দেওয়ান পরিবারের পক্ষ থেকে নদীর মাঝখানে টিলার ওপর একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। কালের পরিক্রমায় যেটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। জনশ্রুতি রয়েছে, হয়বতনগরের প্রতিষ্ঠাতাদের পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগমকে জনগণ ‘পাগলা বিবি’ বলে ডাকত। দেওয়ানবাড়ির এ বেগম নরসুন্দার তীরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে ‘পাগলা বিবির নামে পরিচিতি পায়। এরকম আরো অসংখ্য জনশ্রুতি মিলে এলাকার লোকমুখে। বর্তমানে মসজিদের প্রায় ৪ একর জায়গা রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ১০ মে ওয়াকফ স্টেটে চলে যায় মসজিদটি। জেলা প্রশাসক সভাপতি হিসেবে মসজিদটি পরিচালনা করে আসছেন।

মসজিদটি বর্তমানে ব্যাপক আলোচনায় আসে মূলত দানবাক্সের জন্য। মুসলিম-অমুসলিম সবাই এ মসজিদে দুই হাত খুলে দান করেন। এলাকায় প্রচলিত আছে; বিশ্বাস ও একনিষ্ঠ মনে এখানে মানত বা দান করলে রোগবালা-মসিবত দূর হয়। শুধু টাকা-পয়সা নয় দানবাক্স খুললেই পাওয়া যায় স্বর্ণালঙ্কার, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভুইয়া ইনকিলাবকে জানান, দানবাক্সে দৈনিক প্রায় দু’লাখ টাকা জমা পড়ে। এই টাকায় শুধু পাগলা মসজিদের নয় অন্যান্য মসজিদের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হচ্ছে। অনুদান দেওয়া হয় এলাকায় দরিদ্র অসহায়, অসুস্থ এবং অসচ্ছল পরিবারকে। চলে লেখাপড়া, চিকিৎসা, অভাবী নারীদের বিয়েতে সাহায্যসহ নানা গণমুখী কার্যক্রম। মসজিদের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে নুরুল কুরআন এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদরাসা। মসজিদ নির্মাণ উপ-কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে ৫০ হাজার মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন। মহান আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ অনেক মানুষ ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদটির দানসিন্দুকে গোপনে বড় অংকের টাকা, গহনা বা বিদেশী মুদ্রা দান করেন, যা সারাদেশের মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করছে।



 

Show all comments
  • Bongo... ১২ মার্চ, ২০২১, ১১:২৬ পিএম says : 0
    Mizoram and Meghalaya are now 94% christian. If they were able to convert only 500square miles of Bangladesh near the Mayanmar border this christian belt will reach the Bay of Bengal. Once this christain belt reach the Bay of Bengal, making a christain country will become feasible. US-EU will and is supporting this scheme. Our scholars and imams and politicians are sleeping. This should be a major security concern of Bangladesh and Bangladesh should have a counter plot to curb this. Unfortunately we do not acknowledge this. Bangladesh has to be an Islamic Republic and its main mission should be to bring the seven sisters and Asam and West Bengal under the fold of Islam and Bangla language.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ