Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভোগান্তিতে খুলনা মহানগরবাসী

উন্নয়ন কাজে ধীরগতি

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২১, ১২:০৫ এএম

একটু বৃষ্টি হলেই খুলনা মহানগরজুড়ে সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের কারণে অধিকাংশ রাস্তাই চলাচলের অনুপযুক্ত। রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্ত। কোনোরকম পিচ ঢেলে মেরামত করা হয়েছে রাস্তাগুলো। একেকটা ড্রেন যেন ময়লার ভাগাড়। খুলনার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ ও রাস্তা সংস্কার করতে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নগরীতে শুরু করেছে উন্নয়ন কাজ। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলমান এই উন্নয়ন কাজ এখন চরম ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে নগরবাসীকে।

সূত্র জানায়, কোথাও রাস্তার উন্নয়ন কাজ, কোথাও রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি আর কোনো কোনো রাস্তায় ড্রেন প্রশস্তকরণ কাজ চলায় পুরো নগরজুড়ে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নগরীর শামসুর রহমান রোড, হাজী মহসিন রোড, আহসান আহমেদ রোড, বাবু খান রোড, কেডিএ এভিনিউ, সাউথ সেন্ট্রাল রোডে চলছে ড্রেন প্রশস্তকরণ ও সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। সবখানেই ধীরগতিতে কাজ চলছে। এ কাজ কবে শেষ হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ করতে না পারলে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠবে।

কেসিসি সূত্র জানিয়েছে, সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে এডিপির ১৪৩১ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ অর্থবছরে প্রকল্প দুটিতে ১৮০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। পানিবদ্ধতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ৯টি প্রধান সড়কের পাশে ৬২ কিলোমিটার প্রাইমারি ড্রেন ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১২৮ কিলোমিটার সেকেন্ডারি ড্রেন সংস্কার করা হবে। অন্যদিকে, সড়ক মেরামত ও উন্নয়নে ৬০৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। মহানগরীর ৭৮ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং, ১৫১ কিলোমিটার সড়ক আরসিসি ঢালাই ও ৩৩ কিলোমিটার সড়ক সিসি ঢালাই দেয়া হবে। ২০টি গুরুত্বপূর্ণ মোড় উন্নয়ন, সৌন্দর্য্যবর্ধন ও কিছু যানবাহন কেনার প্রস্তাব রয়েছে প্রকল্পে।

নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, ব্যস্ত সড়কগুলোতে প্রতিদিনই ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় এবং ফেরার পথে দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। যার কারণে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রিকশাচালক হুমায়ুন জানান, বছর তিনেক ধরে দেখছি কেডিএ এভিনিউতে কাজ চলছে। এই কাজ কবে শেষ হবে? শুধু কেডিএ না, সব সড়কের ড্রেন খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে যে, এক ঘণ্টা আগে যে রাস্তায় রিকশা চালিয়েছি, এক ঘণ্টা পর সেই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে ঘুরে ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

শামসুর রহমান রোডের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রায় দুই মাস হলো দোকান ঠিকমতো খুলতে পারছি না। দোকানের সামনে মাটি, বালি রেখে কাজ চলছে। ব্যবসার অবস্থা খুবই নাজুক।

জানা গেছে, খুলনা মহানগরের সড়কগুলোতে খুব শিগগিরই আবার খোঁড়াখুঁড়ি করবে পিডিবি। খালিশপুর থেকে নতুন রাস্তার মোড়, সেখান থেকে মুজগুন্নী মহাসড়ক হয়ে বয়রা মোড়, বয়রা মোড় থেকে জলিল স্মরণি হয়ে মোস্তর মোড়, সেখান থেকে রূপসা শহর বাইপাস হয়ে জিরো পয়েন্ট, সেখান থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক দিয়ে হোগলাডাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক খোঁড়া হবে।

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব জানান, ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে উঠিয়ে রাখা, নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় রাখা, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে। যানজট ও ধুলাবালিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়েছে। স্বস্তির খুলনা শহর এখন অবর্ণনীয় ভোগান্তির নগরে পরিণত হয়েছে। উন্নয়ন কাজের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর সমন্বয় জরুরি। সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে কাজের ব্যয়ও কমে যাবে, নগরবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগও কমবে।
কতগুলো ড্রেন ও সড়কে কাজ চলছে এবং কবে নাগাদ শেষ হতে পারে তা জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ও ড্রেনেজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. এজাজ মোরশেদ চৌধুরী জানান, আগামী জুন মাস নাগাদ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

কেসিসির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক জানান, পানিবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণ, সংস্কার ও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমান সরকার খুলনার উন্নয়নে খুবই আন্তরিক। দ্রæত এ সকল কাজ শেষ করতে রাতদিন কাজ চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ