Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষমতার শীর্ষ ইউরেশিয়াকে নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভরশীল

আমেরিকার ক্ষমতা বিভ্রম ২

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

ট্রাম্প প্রশাসনের অবিশ্বাস্য রকমের ভ্রষ্ট পররাষ্ট্র নীতি সত্তে¡ও দৃঢ়ভাবে চীনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াটা আশ্চর্যজনকভাবে যুক্তিযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ.আর. ম্যাকমাস্টার তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন যে, ওয়াশিংটন ‘এমন একটি দেশকে ক্ষমতা প্রদান করেছে যার নেতারা কেবল এশিয়াতে আমেরিকাকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই নয়, সেইসাথে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও শাসনের ক্ষেত্রে একটি প্রতিদ্ব›দ্বী মডেলকে তুলে ধরতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

একইভাবে, ট্রাম্পের স্বরাষ্ট্র বিভাগ হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, বেইজিং বিশ্বজুড়ে শীর্ষশক্তি হিসাবে আমেরিকাকে স্থানচ্যুত করার লক্ষ্যে ‘আধিপত্যের উচ্চাকাঙ্খা’ পোষণ করছে। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত দমে যান। ২০২০ সালের জানুয়ারীর মধ্যে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ আমেরিকার কৃষিজাত রফতানির ব্যাপক ক্ষতি করে এবং তার বাণিজ্যিক সরবরাহে ব্যবস্থায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটায় এবং হোয়াইট হাউসকে আরও আমেরিকান পণ্য কিনতে বেইজিংয়ের প্রতিশ্রæতির বিনিময়ে সেই শাস্তিমূলক কিছু শুল্ক রদ করতে বাধ্য করেছিল। হোয়াইট হাউসের উদযাপিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সত্তে¡ও এই চুক্তি আত্মসমর্পণের চেয়ে বেশি কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে।

এখনও, গত ২০ বছর দ্বিপক্ষীয় এই ব্যর্থতার পরেও ওয়াশিংটনের আধিপত্যের বিভ্রম বজায় রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এবং এর অভ্যন্তরীণ-বেল্টওয়ের পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, চীন কোভিড-১৯ এর মতোই একটি সমস্যা যা ট্রাম্পহীন করে দিলেই সহজভাবে সমাধান হতে পারে। গত ডিসেম্বরে, ফরেন এফেয়ার্স পত্রিকার লেখক দু’জন অধ্যাপক বলেছিলেন, ‘আমেরিকা একদিন চীনকেও সেভাবে দেখবে, এখন সোভিয়েত ইউনিয়নকে দেখছে। অর্থাৎ, একটি বিপজ্জনক প্রতিদ্ব›দ্বী হিসাবে, যার স্পষ্ট শক্তিমত্তা স্থবিরতা এবং দুর্বলতা ঘেকে দিয়েছে।’

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের মাসগুলিতে ওবামার স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন কর্মকর্তা জ্যাক সুলিভান বলেছিলেন, ‘যদিও চীন স্পষ্টতই নিজেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে, আমেরিকা এখনও সেই প্রতিযোগিতায় তার বেশি কিছু করার ক্ষমতা রাখে।’ যেমন প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সুলিভানের দৃষ্টিভঙ্গি তার বস জো বাইডেনের সাথে মিলে গেছে। ২০২০ সালের নির্বাচনী প্রচারে তার প্রধান পররাষ্ট্র নীতি ইশতেহারে প্রার্থী বাইডেন যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘ভবিষ্যতে চীনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা জিততে আমেরিকাকে তার উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে তীক্ষœ করতে হবে এবং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অর্থনৈতিক শক্তিকে একজোট করতে হবে।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার শীতল যুদ্ধের অগ্রনীদের স্পষ্ট ধারণা ছিল যে, তাদের বৈশ্বিক শক্তি যেমনটি আগে ব্রিটেনের ছিল, তা ইউরেশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার উপর নির্ভর করবে। বিগত ৪ শ’ বছর ধরে প্রতিটি বিশ্ব শাসনকারী সাম্রাজ্যকে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৬শ’ শতাব্দীর শেষদিকে পর্তুগাল লিসবন থেকে মালাক্কা প্রণালী (যা ভারত মহাসাগরকে প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে) পর্যন্ত ৫০ টি দুর্গম বন্দরের (ফেইতোরিয়াস) মাধ্যমে মহাদেশীয় উপক‚লরেখাগুলিকে চিহ্নিত করেছিল, ঠিক যেমন ১৯ শ’ শতাব্দীর শেষদিকে গ্রেট ব্রিটেন স্কটল্যান্ডের স্কাপা ফ্লো থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত প্রসারিত নৌ ঘাঁটির মাধ্যমে রাজত্ব করেছিল। সূত্র : দ্য নেশন। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমেরিকা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ