Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তরমুজের আবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না

দেশে মোট আবাদও উৎপাদনের ৬৫ ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২১, ৩:৩৬ পিএম

সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও তরমুজের আবাদ ও উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হারে বাড়লেও এখন পর্যন্ত কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছে না। এবারো দেশের মোট আবাদ ও উৎপাদনের প্রায় ৬৫ ভাগ তরমুজই দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় সম্পন্ন করেছেন কৃষিযোদ্ধাগন। তবে এবার মাঠ পর্যয়ে এক কেজি তরমুজ বিক্রী হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায় । অথচ কয়েক হাত ঘুরে সে তরমুজ ভোক্তাদের হাতে পৌছছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। দক্ষিনাঞ্চল সহ সারা দেশের বাজারেই ইতোমধ্যে রসালো ও সুমিষ্ট ফল তরমুজ বিক্রী হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এখন পর্যন্ত উৎপাদনও ভাল। তবে আগামী দিন পনেরর মধ্যে বৃষ্টি না হলে এ রসালো ফলের গুনগত মান কিছুটা ব্যাহত হবার শংকা রয়েছে।
কুমড়া পরিবারের সুমিষ্ট রসালো ফল তরমুজ উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়িয়ে এখন বাংলাদেশ সহ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই আবাদ হচ্ছে। খুব দ্রুত এ ফল আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মূলত মৌমাছির সাহায্যে পরাগায়িত হয়ে এ ফলের উৎপাদন নিশ্চিত হয়। এর গাছ বর্ষজীবী, দিবস দৈর্ঘ নিরপেক্ষ ও লতানো প্রকৃতির। বেলে দো-আঁশ থেকে এটেল দো-আঁশ পর্যন্ত সব ধরনের মাটিতে তরমুজের চাষ হচ্ছে। এমনকি নদ-নদীবহুল দক্ষিনাঞ্চলের নোনা পানিমূক্ত চরাঞ্চলের পলি মাটিতেও তরমুজের ভাল ফলন হচ্ছে। ফলে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর চরাঞ্চলে তরমুজের ভাল আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। মুলত ৫.৫ থেকে ৭.০ পিএইচ মাত্রার জমি সুমিষ্ট এ রসালো ফসলের জন্য উপযোগী। তবে কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত লবনাক্ততা সহ্য করতে পারেনা। খরা প্রতিরোধক ফসল তরমুজ অপেক্ষাকৃত শুষ্ক পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে।
চলতি মৌসুমে দেশে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হলেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে এ রসালো সুমিষ্ট ফলের আবাদ হয়েছে বলে ডিএই জানিয়েছে। অধিদপ্তরের মতে গত বছর দেশে ৩৮ হজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে প্রায় হাজার প্রায় ১৬ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। এর মধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবার প্রায় ১১ লাখ টন তরমুজের উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। আবাদ গত বছরের প্রায় সমান হলেও এবার দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন কিছুটা বেশী হবে বলে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। তবে এবার দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ মূল লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর কম। মূলত গতবছ র ছোট ও মাঝারী মাত্রার কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় পটুয়াখালী ও ভোলতে এবার বর্ধিত আবাদ লক্ষ্যমাত্রার কিছুটা পেছনে থাকায় মূললক্ষ্যে পৌছান সম্ভব হয়নি।
দেশে সদুর অতীত থেকে ‘পতেঙ্গা’ ও ‘গোয়ালন্দ’ জাতের কালচে এবং নীলাভ গোলাকৃতির তরমুজের আবাদ হত। এসব ফল ওজনে ৮Ñ১০কেজী হলেও তার মিষ্টতা বর্তমান প্রজন্মর তরমুজের চেয়ে ছিল কিছুটা কম। অধীক ফলন, মিষ্টতায় পরিপূর্ণ উৎকৃষ্ট গুনের কারনে আধুনিক জাতের তরমুজের জনপ্রিয়তা আমাদের দেশও ক্রমে বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ইউরোপীয়, প্রাচ্য ও গ্রীষ্ম মন্ডলীয় ‘টপইল্ড, গ্লোরী, কঙ্গো, চার্লসটনÑগ্রে, ইমিরিয়েল, জুবলী, সুপার ডেলিকেট, সুপার বেবী, সুইট ফেস্টিবল ও ফ্লোরিডা জয়েন্ট’ নামের একাধীক উন্নত জাতের তরমুজের আবাদ হচ্ছে। আমাদের কৃষিগবেষনা ইনষ্টিটিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল সুমিষ্ট তরমুজের জাত উদ্ভাবন করেছেন। দক্ষিনাঞ্চলে বর্তমানে তরমুজের হেক্টর প্রতি ফলন ৪২ টনের মত । কিন্তু বারি নির্দেশিত সুষম সার প্রয়োগ সহ আবাদ কৌশল অনুসরন করলে এর উৎপাদন সহজেই ৫০ টনে উন্নীত করা সম্ভব বলেও মনে করছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
কৃষি ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে তরমুজের খাদ্যগুন খুব একটা উন্নত না হলেও এতে যথেষ্ট পরিমান ভিটামিন-এ, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন ও পেপটিন বিদ্যমান রয়েছে। চীনা ভেষজবীদদের মতে তরমুজের রস রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে। পাকা তরমুজের রসালো শাস স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হবার পাশাপাশি তা অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক ও তৃষ্ঞা নিবারক। উন্নত বিশ্বে তরমুজ দিয়ে নানা ধরনের সরবত, জ্যাম,সিরাপ, গুড় ছাড়াও এ্যালকহল পর্যন্ত তৈরী হচ্ছে। এমনকি সইট্রেন শ্রেণীর তরমুজ দিয়ে জেলীও তৈরী হচ্ছে বলে জনা গেছে।
তবে আমাদের দেশ তরমুজ প্রক্রিয়াজাত করে কোন ধরনের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতের উদ্যোগ নেই। বরিশালে দীর্ঘদিন যাবতই একটি ‘কৃষি ও মৎস ভিত্তিক রফতানী প্রক্রিয়াকরন এলাকা’ প্রতিষ্ঠার দাবী করে আসছে সাধারন মানুষ। এঅঞ্চলের ইলিশ মাছ ছাড়াও উন্নতমানের পেয়ারা ও তরমুজ সহ অন্যন্য ফল ও ফসলকে কেন্দ্র করে একটি রফতানী প্রক্রিয়াকরন এলাকা প্রতিষ্ঠিত হলে তা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থায় যথেষ্ঠ ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশাবাদী অর্থনীতিবীদগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাষাবাদ

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
২ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ