Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্ট্রোক হতে পারে অল্প বয়সেও

| প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৭ এএম

অনেকের ধারণা স্ট্রোক শুধু বয়স্কদেরই হয়। এই ধারণা ভুল। স্ট্রোক বয়স্কদের বেশী হয়। তবে বর্তমানে কম বয়সীদেরও অনেকের স্ট্রোক হতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিবছর স্ট্রোকের কারণে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। অনেকে অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারায়। অথচ দেখা গেছে কিছু কিছু স্ট্্েরাক আমাদের ভুলের কারনেই হচ্ছে, অর্থাৎ এটা প্রতিরোধ করা যেত। স্ট্রোক হয়ে গেলে সে ব্যক্তির এবং পরিবারের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। তাই প্রতিরোধের দিকে সবার নজর দেয়া দরকার। অল্প বয়সে স্ট্রোক হলে সমস্যা বেশী। রোগীর যে সময় কর্মক্ষম থাকার সময় সে সময় কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং সবসময় আতংকের মধ্যে থাকতে হয়।

মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে বা হঠাৎ রক্ত বের হয়ে কোনো এলাকা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার নাম হলো স্ট্রোক। ফলে শরীরের এক দিক বা কোনো অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কথা জড়িয়ে যেতে পারে বা একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। স্ট্রোক হলে খাবার গ্রহণে অসুবিধা হয় এবং অনেক সময় প্রস্রাব ও পায়খানার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেতে পারে। তবে সবার একই লক্ষণ থাকবে তা নয়। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক লক্ষণ থাকে। ব্রেনের কোন এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে সমস্যা দেখা দেয়।

অল্প বয়সে স্ট্রোকের বিভিন্ন কারণ আছে। বয়স্কদের স্ট্রোকের কারণ আর অল্প বয়সে স্ট্রোকের কারণের মধ্যে পার্থক্য আছে। অল্প বয়সে যেসব কারণে স্ট্রোক হতে পারে তার মধ্যে আছেঃ

১। বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ। অল্প বয়সে স্ট্রোকের ২৫ শতাংশের কারণ নানা ধরণের হৃদরোগ।

২। জন্মগত ত্রুটির জন্য মস্তিষ্কের রক্তনালি হঠাৎ ছিঁড়ে যাওয়া। এই ধরণের ঘটনা অল্প বয়সেই সাধারণত বেশি ঘটে।

৩। বিভিন্ন ধরণের ভাস্কুলাইটিস। কম বয়সে এসব সমস্যা বেশী হয়।
৪। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। ৪৫ বছর পর মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তখন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আর ব্যবহার করতে হয়না। তবে অল্প বয়সে স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি।

৫। যারা নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করেন, তাঁদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক। অল্প বয়সীদের মধ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা বেশী ।

৬। কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা। আর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ।

৭। বর্তমানে ফাস্টফুড গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে রক্তে চর্বি। রক্তে চর্বির আধিক্যও অল্প বয়সে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

৮। বর্তমানে কায়িক পরিশ্রমের প্রতি প্রায় সবারই অনীহা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে স্থুলতা। গবেষণায় দেখা গেছে স্থূলদের স্ট্রোক বেশী হয়।

৯। মানসিক চাপ, মাইগ্রেন অল্প বয়সীদের বেশী হয়। এসব স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

অল্প বয়সে স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্যে সচেতন হতে হবে। সাবধান হয়ে চললে অনেকটাই প্রতিরোধ সম্ভব। ডায়াবেটিস স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে। কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা। আর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। আবার নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকি অনেক অনেক কমে যায়। পরিশ্রম না করলে বা বেশি তেল চর্বি খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ে, ওজন বাড়ে । এর ফলে স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত ব্যয়াম করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমে আসে। বর্তমানে তরুণদের ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তেল চর্বি কম খেলে স্ট্রোক ও হৃদরোগ অনেক কম হয়। শাকসবজি ও ফলমূল প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। চর্বি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্ট্রোক কম হবে। লবণ কম খেতে হবে। লবণ কম খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। হার্টের অসুখ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে, বাদ দেয়া যাবেনা। অল্পবয়সে যেসব কারণে স্ট্রোক হয় সেসব কারণ থেকে দূরে থাকলে অল্প বয়সে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা অনেকটাই সম্ভব।

ডাঃ মোঃ ফজলুল কবির পাভেল



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন