Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এবার লকডাউনে দেশ

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার আজ থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে। গত কয়েকদিন ধরে লকডাউনের বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল বিভিন্ন মহলে। এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী মতামত ছিল। একপক্ষ দেশব্যাপী লকডাউনের পক্ষে অন্যপক্ষ লকডাউনের বিপক্ষে ছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার লকডাউনের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১ এপ্রিল সরকারগঠিত কোভিড- ১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করে। এর আগে ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর দফতর ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়, যার মধ্যে অর্ধেক জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনা করা, জনসমাগম সীমিত করা, গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা ইত্যাদি ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার আগেই সরকার দেশব্যাপী লকডাউনের পথই বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যেভাবে পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ করছিল, তাতে বোধহয় সরকার বাধ্য হয়ে এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। লকডাউনের সময় জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান, পণ্যবাহী যানবাহন, গার্মেন্টসহ শিল্পকারখানা, সীমিত পরিসরে ব্যাংক ও শেয়ারবাজার খোলা বা চালু থাকবে। এছাড়া যেসব অফিস চালু রাখার প্রয়োজন রয়েছে, তাদের সীমিত জনবল দিয়ে চালাতে হবে। পক্ষান্তরে বন্ধ থাকবে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী ট্রেন, যাত্রীবাহী নৌযান ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশংকা করা হচ্ছিল আগে থেকেই। তা যে এত তাড়াতাড়ি আসবে এবং সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল এত দ্রুত এত দীর্ঘ করে দেবে, সেটা অনেকেরই আন্দাজের মধ্যে ছিলনা। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারের যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না। একটা সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই আরেকটি সিদ্ধান্ত নেয়া থেকেই সেটা বুঝা যায়। যা হোক, সংক্রমণ ও মৃত্যু রোখাই মূল কথা এবং সেক্ষেত্রে লকডাউন যে অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায় বা পদ্ধতি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, গত বছর দেশব্যাপী ঘোষিত লকডাউন ছিলনা। রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় আংশিক বা এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হয়। তবে ২৩ মার্চ প্রথমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এই ছুটি পরবর্তীতে কয়েক দফা বাড়ানো হয় এবং দীর্ঘ ৬৬দিন বহাল থাকে। ছুটির সময় অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সেটাও আসলে লকডাউনের মতই ছিল। তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া ধীরে ধীরে সব কিছুই খুলে যায়। অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে জীবনধারা। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে গতিশীলতা লাভ করে। অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, দেশ আবারো একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হতে যাচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষতি ও বিপর্যয় বাড়ার সমূহ আশংকা করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবারের বিশেষ ইতিবাচক দিক হলো, অফিস-আদালত, বেসরকারী অফিস-প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানার উৎপাদন এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা বা চালু রাখা। গত বছর এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখার কোনো বিকল্প নেই। সরকার শিল্প-ব্যবসা, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিপুল অংকের প্রণোদনা দিয়েছে। বার বার এই প্রণোদনা দেয়া আমাদের অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব নয়। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, প্রণোদনা দিতে হবে। দরিদ্র্য কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের মানুষের আর্থিক ও পণ্যসহায়তা দেয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, করোনাকালে অফিস-আদালতের কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাদান, আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি অনেক কিছুই অনলাইনে হয়েছে। অনলাইন শপিং ও হোম ডেলিভারি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখনো আমাদের অনলাইনের ওপর যতটা সম্ভব ভরসা করতে হবে, নির্ভর করতে হবে।

লোক সমাবেশ ও মানুষের স্পর্শ এড়িয়ে চলা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি বড় উপায়। এ জন্য বাইরে না বেরিয়ে ঘরে থাকাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। লকডাউনের লক্ষ্যও মূলত এটাই। নিতান্ত জরুরি প্রয়োজন না হলে কেউ যাতে ঘরের বাইরে না আসতে পারে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। কোনো ব্যাপারেই শৈথিল্য দেখানো যাবে না। মাস্ক ছাড়া একেবারেই বাইরে না আসা, কোথাও প্রবেশের ক্ষেত্রে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদির ব্যাপারে প্রত্যেকের সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে। যতই লকডাউন করা হোক, নিয়মবিধি ও নির্দেশনা দেয়া হোক, তা কাঙ্খিত সুফল এনে দেবে না, যদি ব্যক্তির মধ্যে যথাযথ সচেতনতা অনুপস্থিত থাকে। ব্যক্তির সচেতনতা ও সাবধানতা করোনার সংক্রমণ কমাতে সবচেয়ে বড় সহায়তা ভূমিকা পালন করতে পারে। যারা সংক্রমণের শিকার হচ্ছে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনে নেয়া, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাখা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি ও অত্যাবশ্যক। এতে অন্যরা সংক্রমিত হওয়া থেকে রেহাই পাবে। এজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা ও চিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ভ্যাকসিনেশন জোরদার করতে হবে। ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে যে অনিশ্চয়তার কথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তা যে কোনো মূল্যে দূর করতে হবে। স্বল্পতম সময়ে দেশের সকল নাগরিককে ভ্যাকসিন দিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন