Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অনলাইনসেবা সহজ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনা অতিমারির কারণে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা ও মন্দা দেখা দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং নতুন করে লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে আবারো নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মার্কেটসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে অনলাইনে কেনাকাটা থেমে নেই। বিশেষ করে লকডাউনে ডিজিটাল এই প্ল্যাটফর্ম ব্যাপক গতি লাভ করেছে। ঘরে বসে মানুষ তার চাহিদামতো পণ্য অর্ডার করে কিনতে পারছে। বলা যায়, অনলাইন ব্যবসায় বিপ্লব ঘটে গেছে। স্মার্টফোন ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিস্তারের সাথে সাথে গত দশকেই সারাবিশ্বে অনলাইন ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম জনপ্রিয় হতে শুরু করে। আমাদের দেশেও অনলাইন ব্যাংকিং, লেনদেন ও পণ্য পরিষেবা শুরু হয়। বিশেষ করে শিক্ষিত শ্রেণীর কাছে ডিজিটাল এই বিজনেস প্ল্যাটফর্ম বেশ চাহিদাসম্পন্ন হয়ে ওঠে। গত বছরের শুরুতে করোনার কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও লকডাউনে সাধারণ মানুষও এই অনলাইন পরিষেবার উপর নির্ভরশীল হতে শুরু করে। এখন এই প্ল্যাটফর্মটি বিশাল বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তবে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ইন্টারনেটের ধীরগতির মত সমস্যা এক্ষেত্রে বাধা হয়ে আছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে উঠেছে। কেনাকাটা, ব্যাংকিং, টেলিমেডিসিন, অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, আদালত ও পুলিশি সেবার ক্ষেত্রে অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের দিকে বেশি ঝুঁকছে। এক দশক আগেও আমাদের দেশের মানুষ এ ধরনের সেবার সাথে পরিচিত ছিল না। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে ক্ষমতায় আসার পর ২০২৫ সালের মধ্যে তা অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বছর আগেই এ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে করোনা মহামারি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। করোনার কারণে মানুষের চলাচল বন্ধ ও সীমিত হয়ে পড়ায় অসংখ্য মানুষ নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের সেবার জন্য অনলাইন ভিত্তিক সেবার দ্বারস্থ হয়। এটি এখন মানুষের কেনাকাটার নিত্যদিনের বাজারে পরিণত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, উপমহাদেশসহ সারাবিশ্বে মানুষ এখন অনলাইন পরিষেবা বা তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে অনলাইন ব্যাংকিং, মানি ট্রান্সফার, বাণিজ্য ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের লক-ডাউন ও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রমজান ও ঈদের কেনাকাটার ঝুঁকি এড়াতে সাধারণ মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় অধিক ঝুঁকেছে। শহরের মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা বেশি করলেও তা এখন গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ ক্ষেত্রে অনলাইন পরিষেবার সীমাবদ্ধতার কথাও বলা হয়েছে। ধীর গতির ইন্টারনেট ও ই-কমার্সে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার বিষয়গুলো এ প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনাকালীন বাস্তবতায় ঘরে বসে প্রায় সব ধরনের পণ্যের ব্যবসা খুলে আয় করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। এতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এর সম্প্রসারণের সাথে সাথে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এই সম্প্রসারণের সাথে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতারণামূলক ঘটনাও ঘটছে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ে ক্রেডিটকার্ড, সুইফ্ট কোড জালিয়াতির মত উচ্চপ্রযুক্তিগত ঝুঁকি ছাড়াও সাধারণ পণ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণা হতে দেখা যায়। অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করা, সময়মত পণ্য পৌঁছে না দেয়া, একটি পণ্যের ছবি ও বর্ণনা প্রচার করে নিম্নমানের ভিন্ন পণ্য সরবরাহের মত ঘটনা ঘটলেও এর সম্প্রসারণ থেমে নেই। সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়েই খাতটি এগিয়ে চলেছে। রমজান ও ঈদ সামনে রেখে অনলাইন পরিষেবা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করে তুলতে হলে এ খাতের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সহজলভ্য, সুলভ ও গতিশীল করার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধির পাশাপাশি অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টদের লেনদেনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি এ সময়ে নিবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ বজায় রাখা দরকার। করোনা মহামারি মোকাবেলায় মানুষকে ঘরে রাখা এবং জীবনযাপনের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে অনলাইন ও ডিজিটালাইজেশনের সুফল দেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। একজন অতি সাধারণ মানুষও যাতে এ সেবা এবং বিশাল অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত হতে পারে তা সহজ করে দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনলাইনসেবা
আরও পড়ুন