Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, কলকারখানা, যোগাযোগ, বিনোদন, সংবাদমাধ্যম, অর্থনীতিসহ প্রাত্যাহিক জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি যেমন উৎকর্ষ লাভ করছে, তেমনি এর দ্বারা মানুষ উপকৃত হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে বেগবান করেছে এবং করছে। এক সময় যে কাজ করতে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যেত, এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে তা নিমেষেই সম্পন্ন করা যাচ্ছে। পৃথিবীর কোথায় কি ঘটনা ঘটছে বা পরিবর্তন হচ্ছে, তা মুহূর্তে মানুষ জানতে পারছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আবার কোনো ঘটনা বা তথ্য সম্পর্কে কারো জানার আগ্রহ থাকলে ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই তা হাজির হয়ে যাচ্ছে। শুধু নির্দিষ্ট তথ্যই নয়, একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। এসবই সম্ভব হচ্ছে, মানুষের উদ্ভাবিত নির্দিষ্ট সফটওয়্যার বা অ্যাপের মাধ্যমে। এসব সফটওয়ার বা অ্যাপকে বলা হয় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অনুসন্ধিৎসু ও উদ্ভাবনীশক্তির অধিকারী মানুষই তার বুদ্ধি ও জ্ঞানের দ্বারা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করছে। জটিল কাজ নিখুঁতভাবে সমাধান এবং সহজ করার অভিপ্রায়ে মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন করে চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, যতই দিন যাবে, ভবিষ্যত পৃথিবী প্রযুক্তি ও যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়বে, যেখানে মানুষ তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সৃষ্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু করবে। প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষ মানুষের প্রভূত কল্যাণ করলেও, এর অকল্যাণ বা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এই অকল্যাণ রোধ এবং প্রতিকারের বিষয়টি এখনও পুরোপুরিভাবে কার্যকর নয়।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিগত একদশকে আমাদের দেশে ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, যোগাযোগব্যবস্থা, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সর্বত্র প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে। এখন দেশে যেকোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা, সুসংবাদ-দুঃসংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষ তা জানতে এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারছে। তার ইচ্ছামতো যেকোনো তথ্য জানতে ও শুনতে পারছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগের বিস্তারিত বিবরণ দ্রুত জানতে পারছে। সে অনুযায়ী, চিকিৎসা নিতে পারছে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা লেনদেন করতে পারছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। শিল্পকারখানায় অটোমেশন চালু হচ্ছে। এর মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে তা প্যাকেটজাত হয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মকান্ড সম্পাদিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির মাধ্যমে। এতে মানুষের সরাসরি কায়িক পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ছে না। এমনকি উন্নত বিশ্বে এখন জটিল অপারেশনের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে। মুমূর্ষূ রোগীকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লাইফসাপোর্টের মাধ্যমে বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে। ঘরের কাজ রোবটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। দুর্ধর্ষ অপরাধীদের শনাক্ত ও ধরতে প্রযুক্তির নিখুঁত ব্যবহার হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ড্রোন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে হামলা চালাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই ভবিষ্যৎদ্বাণী করেছেন, আগামীতে যুদ্ধ হলে তা হবে ‘প্রযুক্তিযুদ্ধ’ যাতে মানুষের অংশগ্রহণের তেমন প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। যুদ্ধ করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট কিংবা যুদ্ধাস্ত্র। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রযুক্তির এই অভাবনীয় অগ্রগতি মানুষের জীবন যেমন সহজ করেছে, তেমনি এর অপব্যবহারও জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তারা বলছেন, বিজ্ঞানের এই রকেটগতির সাথে তাল মিলিয়ে এর ক্ষতির দিকটি তেমনভাবে আমলে নেয়া হচ্ছে না। উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে মানুষের সদিচ্ছা প্রবল হলেও ‘ইভিল জিনিয়াস’ বা ক্ষতিকর বুদ্ধিও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেক নিউজ বা গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ লুটে নেয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। এসবের যথাযথ প্রতিকারের উপায়ের অভাবে নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট, যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য প্রযুক্তি কখনোই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে অতিক্রম করতে পারে না। এসবের যে বুদ্ধি তা মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি দ্বারাই নির্মিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষ পরিচালনা করলেই এগুলো পরিচালিত হয়। ফলে এগুলোর ভাল-মন্দ ব্যবহার মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হয়, মানুষের কল্যাণে। অকল্যাণেও আবিষ্কার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র কখনোই মানুষের কল্যাণের জন্য নয়। আবার নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য এগুলোর প্রয়োজন রয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রসরতা মানুষ কখনোই অস্বীকার করে না এবং করার উপায়ও নেই। তবে এর আবিষ্কার ও অগ্রসরতার সাথে সাথে ক্ষতিকর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের আবশ্যকতা রয়েছে। তা নাহলে, এর অপব্যবহারের ফলে মানবসভ্যতায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ইতোমধ্যে এ ধরনের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় উন্নত বিশ্বে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে বিভিন্ন আইন রায়েছে। আমাদের দেশে তথ্য ও মত প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলেও প্রযুক্তির অন্যান্য অপব্যবহার নিয়ে নির্দিষ্ট আইন নেই। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ধরণ অনুযায়ী আইন থাকা জরুরি। ব্রিটেনে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে অভিজ্ঞতা, দক্ষ জনবল এবং এ সম্পর্কিত আইন রয়েছে। এ আইনের সাথে আমাদের দেশের আইনের মিল রয়েছে। এ আইনের সহায়তায় নতুন আইন করা যেতে পারে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির অসীম জগত সম্পর্কে জ্ঞান রাখা এবং এর পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দক্ষ লোকবল তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রযুক্তির অপব্যবহার
আরও পড়ুন