Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঘরমুখো মানুষের অশেষ দুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত বৃহস্পতিবার ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের আনন্দযাত্রার প্রথম দিন। পরিবার-পরিজন নিয়ে লাখ লাখ মানুষের এই যাত্রা বিষাদে পরিণত হয়। মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজটে পড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে পড়ে অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হয়। প্রধান প্রধান মহাসড়কের যে রুটেই যারা যাত্রা শুরু করেছেন, সে রুটেই তীব্র যানজটে আটকা পড়ে তাদের দিন পার করতে হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-পাটুরিয়া, ঢাকা-সিলেটসহ প্রায় সব রুটেই ছিল অসহনীয় যানজট ও সীমাহীন দুর্ভোগ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ৬৫ কিলোমিটার, গুলিস্তান থেকে চট্টগ্রামের পথে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার ছিল যানজট। বলাবাহুল্য, এসব মহাসড়কের যে কোনো একটিতে যানজট দেখা দিলে তার প্রভাব বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। যখন সবগুলোতে যানজট সৃষ্টি হয়, তখন কী অবস্থা হয়, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রার এই ভোগান্তি ও কষ্ট নতুন নয়। এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই। ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘেœ ঈদযাত্রার বিষয়টি স্বপ্নই রয়ে গেছে।
কিছুদিন আগেও সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বেশ আশার কথা শুনিয়েছিলেন। জোর দিয়ে বলেছিলেন, এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ হবে। যাত্রীদের সমস্যা হবে না। তার এ কথায় ভরসাও পাওয়া গিয়েছিল। যেভাবে তিনি বছরের পর বছর ধরে সড়ক-মহাসড়ক চষে বেড়িয়েছেন এবং সংস্কার কার্যক্রম সরেজমিনে তদারকি করেছেন, তাতে আশান্বিত হওয়ারই কথা। গত সপ্তাহেও তিনি এই আশার কথা বলেছেন। সপ্তাহ না পেরুতেই, তার এই কথার ফল পায়নি ঘরমুখো মানুষ। গতকাল প্রায় প্রত্যেকটি দৈনিকে সড়ক-মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের অশেষ দুর্ভোগের চিত্র থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের আশাহত হয়ে পথে পথে দুঃখ-কষ্ট সইতে হয়েছে। আশা করার ক্ষেত্রে যেমন কারণ থাকে, তেমনি আশাভঙ্গেরও ব্যাখ্যা দেয়া যায়। সড়ক ও সেতুমন্ত্রীও সড়ক-মহাসড়কে যানজটের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পশুর হাটগুলো রাস্তার পাশে থাকায় ও পশুবাহী গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলার কারণে যাত্রাপথে যানজট বাড়ছে। সদ্য উন্নীত হওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়কে যানজট হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেছেন, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হলেও এখানকার তিনটি সেতু কাচপুর, মেঘনা ও গোমতী দুই লেনেই রয়েছে। ফলে চার লেন সড়ক দিয়ে দ্রুতগতিতে আসা যানবাহন ওই সেতুগুলোর কাছে এসে থমকে যাচ্ছে। মন্ত্রীর এ ব্যাখ্যা ঘরমুখো মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য তা বিচার্য বিষয়। ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের কাছে তার এ ব্যাখ্যা অজুহাত হিসেবে গণ্য হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, মন্ত্রী নিশ্চয়ই সড়ক-মহাসড়কে কি কি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, তা বিবেচনায় রেখেই তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। এখন যাত্রীরা যদি মনে করে, কাজের চেয়ে কথা বেশি হয়েছিল, তাহলে তাদের দোষ দেয়া যাবে না। পর্যবেক্ষকরা মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণ হিসেবে, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এবং মাঝে মাঝে রাস্তায় যানবাহন বিকল হয়ে পড়াকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে হাইওয়ে পুলিশের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ৪৪ মহাসড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এসব মহাসড়কে ছোট ও মাঝারি সাইজের গর্ত রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কুমিল্লার পদুয়াবাজার, বাতিশা ও সানকোড়া বাইপাস, ফতেহপুর রেলগেট এলাকায় চার লেনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। সড়ক-মহাসড়কের এসব সমস্যা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে বাড়তি যানবাহন নামবে, এটা আগে থেকেই অনুমান করা যায়। তবে এসব যানবাহন কতটা চলাচলে উপযোগী, তা পরীক্ষা করার দায়িত্ব বিআরটিএ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। ঈদের সময় সড়কে গাড়ি বিকল হয়ে যানজট সৃষ্টি হবে, এটা কোনভাবেই বরদাশত করা যায় না। এ ব্যাপারে আগেভাগে সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। চার লেন সড়ক সরকারের গর্বের বিষয়। এখন দেখা যাচ্ছে, এ সড়ক পথেও যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই এবং তা কাজে আসছে না। ধারণা করা হয়েছিল, সম্প্রতি উদ্বোধন করা চার লেন ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ ও আরামদায়ক করবে। তা যে হয়নি, পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীদের অকল্পনীয় দুর্দশার চিত্রই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
এবারের ঈদযাত্রা অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় নির্বিঘœ ও আনন্দদায়ক হবে, তা সকলেই আশা করেছিল। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর আশ্বাস এবং যে হারে সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে, তাতে এ আশা করাই সঙ্গত। দুর্ভাগ্যের বিষয়, মানুষের এ আশা পূরণ হয়নি। যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তার মাধ্যমে কিছুটা হলেও সুফল পাওয়ার কথা। এক্ষেত্রে তা না হওয়ার কারণ, সড়ক-মহাসড়কে সমন্বয়হীনতা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবকেই দায়ী করা যায়। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, মহাসড়ক যথাযথ সংস্কারের অভাব ও দখল হওয়া যে অন্যতম কারণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া একশ্রেণীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। অথচ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পশুবাহী যানবাহন না থামানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এসব আদেশ-নির্দেশ উপেক্ষা করাও যানজটের অন্যতম কারণ। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, সবই মুখে মুখে বলা হচ্ছে, কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটছে না। বলা বাহুল্য, সড়ক-মহাসড়কে যে বিশৃঙ্খল ও সমন্বয়হীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে ঘরমুখো মানুষ ঈদের আনন্দে দুর্ভোগ সহ্য করে বাড়ি গেলেও, ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময় একই পরিস্থিতির শিকার হবে। আমরা শুধু এটুকুই আশা করতে পারি, যাত্রীদের এই দুর্ভোগ কমানোর জন্য অবিলম্বে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘরমুখো মানুষের অশেষ দুর্ভোগ

আরও পড়ুন