Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে করোনা আতংকের মধ্যেই ডায়রিয়ার ভয়াবহ বিস্তার

সরকারী হিসেবেই আক্রান্ত ২৬ হাজার মৃত্যু ৩

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৫ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৫৪ পিএম

করোনা ভাইরাসের মরন ছোবলের মধ্যেই সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল যুড়ে ডায়রিয়ার ব্যপক বিস্তার জনমনে নতুন শংকার সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলার ১৮টি ডায়রিয়া উপদ্রুত। সরকারী হিসেবেই ইতোমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ২৬ হাজার মানুষ । বেসরকারী মতে সংখ্যাটা অনেক বেশী। বরিশাল ও বরগুনাতে মৃত্যুবরন করেছেন ৩ জন। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায় ৭৩৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হবার পাশাপাশি বরিশালের বাকেরগঞ্জে এক শিশু সহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ অঞ্চলে গত একমাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৮৯৬ জন। আর গত একসপ্তাহে অক্রান্তের সংখ্যাটা ৪ হাজার ৫৭৭। শুধুমাত্র যেসব জটিল ও ঝুকিপূর্ণ ডায়রিয়ার রোগী সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছেন, তাদের সংখ্যাটাই স্বাস্থ্য বিভাগ নথিভ’ক্ত করে থাকে। মূলত এ অঞ্চলের সিংহভাগ রোগীই সরকারী হাসপাতালে না গিয়ে প্রাইভেট মেডিকেল প্রাক্টিশনার সহ নিজস্ব ব্যবস্থায় ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের কোন পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, গত মাসখানেক ধরে দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো জেলাতেই ডায়রিয়ার ব্যাপক বিস্তার ঘটতে শুরু করে। এরমধ্যে পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনার অবস্থা অপক্ষোকৃত খারাপ। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে স্বাস্থ্য বিভাগের ৪০৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানান হলেও এসব টিমের বেশীরভাগেই কোন চিকিৎসক নেই বলে মাঠ পর্যায় থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, একজন চিকিৎসকের তত্বাবধানে দু-তিনটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়া প্রতিটি টিমে একজন করে কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ’সেকমো’ কাজ করছেন। পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন সহ আইভি ফ্লুইড-এর সরবারহ রয়েছে বলেও দাবী করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মধ্যে ভেলাতে অক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। ইতোমধ্যে এ জেলায় সংখ্যাটা ৭ হাজার অতিক্রম করলেও সরকারীভাবে ৬,৬০৬ বলে জানান হয়েছে। পটুয়াখালীতেও ইতোমধ্যে আক্রান্তের সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশী। তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে সংখ্যাটা ৫,৯২০ বলে জানান হয়েছে। বরগুনাতেও ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৪০ বলে জানান হলেও বেসরকারীভাবে সংখ্যাটা ৫ হাজারের বেশী বলে জানান হয়েছে। এ জেলায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের। গতবছরও একই সময়ে বরগুনায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১০ জনের।
বরিশাল মহানগরী সহ জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৫ হাজার মানুষ ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন বেসরকারী সূত্রে বলা হলেও সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে সংখ্যাটা ৩,২১৭ বলে জানান হয়েছে। মারা গেছেন দুজন। পিরোজপুরের পরিস্থিতিও ভাল নয়। জেলাটিতে সরকারীভাবে আক্রন্তের সংখ্য ৩,৪৮৬ বলে জানান হলেও বাস্তবে তা ৫ হাজারের কম নয় বলে বেসরকারী সূত্রে বলা হয়েছে। চার উপজেলার ঝালকাঠীতেও করোনার মত ডায়রিয়া থাবা বিস্তার করেছে। এখানে সরকারীভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ২,৪২৪ বলে জানান হলেও বাস্তবে তা ৪ হাজারের কাছে বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি ক্রমশ দুুঃশ্চিন্তা বৃদ্ধি করছে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। বরিশাল মহানগরী ও সন্নিহিত এলাকায় ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় নগরীর জেনারেল হাসপাতালের ক্ষুদ্র ওয়ার্ডে স্থান সংকুলন হচ্ছে না। ফলে খোলা মাঠে তাবু খাটিয়ে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালের বাকেরগঞ্জের দাড়িয়ালে ৫ বছরের শিশু আলতাফ ফরাজী ও ভরপাশাতে ৩০ বছরের শাহাবুদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোপূর্বে বরগুনাতেও একজন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ভোলাতে ১৮০, পটুয়াখালীতে ১৬০, বরিশালে ১৪৭, ঝালকাঠীতে ১০৯, বরগুনাতে ৮০ ও পিরোজপুরে ৬১ জনের ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর দিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।
এব্যাপরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার সাহা’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বৃষ্টির অভাবের সাথে দুঃসহ গরমের পাশাপশি খাবার দাবারের ক্ষেত্রে অসতর্কতার জন্য মৌসুমের এসময় ডায়রিয়া সহ নানা ধরনের পেটের পীড় দেখা দেয়। তিনি সকলকে পানি সহ সবধরনের খাবারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়ে যেকোন উপসর্গ দেখা দিলে সরকারী হাসপাতাল সহ চিকিৎসকের স্মরানাপন্ন হবারও পরামর্শ দেন। প্রতিটি সরকারী হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান বিভাগীয় পরিচালক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ