Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাগাতার অনাবৃষ্টি আর অত্যাধিক তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবনসহ পরিবেশ

ফসল উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশংকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২১, ৭:৩৬ পিএম

লাগাতার অনাবৃষ্টির সাথে স্মরনকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত দক্ষিনাঞ্চলের জনজীবন। মাঠে থাকা বিপুল পরিমান রবি ফসলে এখনো সংকট সৃষ্টি না হলেও উৎপাদন নিয়ে ইতোমধ্যে ঝুকির সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক বৃষ্টির অভাবের সাথে উজানে প্রবাহ হ্রাসের কারনে নদ-নদীতে সাগরের জোয়ারে নোনা পানি উঠে আসায় ফসল আবাদ ও উৎপাদনে নানামুখি সংকটের সাথে পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে পাড়তে যাচ্ছে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল।
আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে জানুয়রী মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ৮.৯ মিলিমিটার হলেও কোন বৃষ্টি হয়নি। ফেব্রুয়ারীতে ২৭ মিলিমিটারের স্থলে ১ মিলি বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। আর গত মার্চে ৫৭.১ মিলির স্থলে মাত্র ০.৩ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। যা ছিল স্বাভাবিকের ৯৯.৫% কম। চলতি মাসেও বরিশাল অঞ্চলে ১৩২.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার কথা থাকলেও ১৬ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি।
লাগাতর স্বাভাবিক বৃষ্টি অভাবের সাথে উজানের প্রবাহ হ্রাসের কারনে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে মিঠা পানির প্রবাহে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। স্বাদু পানির সংকটে দেশের মৎস্য সম্পদের অন্যতম আঁধার দক্ষিনাঞ্চলের নদ-নদীতে মাছের অবাধ বিচরনও কিছুটা বাধাগ্রস্থ হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞগন। সাথে অত্যাধীক তাপ প্রবাহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশকে অনেকটাই বিপন্ন করে তুলেছে।
ইতোমধ্যে বরিশালের কির্তনখোলা সহ বিভিন্ন মিঠা পানির নদ-নদীতে লবনক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করেছে। ফলে এ অঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া তরমুজ ছাড়াও প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজী ও দেড় লক্ষাধীক হেক্টরের বোরো ধানের উৎপাদন বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে কৃষি সম্প্রসরন অধিদপ্তর সহ কৃষি গবেষনা ইনস্টিউট ও ধান গবেষনা ইনস্টিউট।
গত ডিসেম্বরের পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে লবনাক্ততার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। মার্চ থেকে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে শুরু করেছে। এপ্রিলের শুরু থেকে বরিশালে কির্তনখেলায় লবনাক্ততার মাত্রা ১ হাজার পিপিএম অতিক্রম করেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা গেছে। ইতোমধ্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম বিষয়টি নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। সে আলোকে ইতোমধ্যে মন্ত্রীর কাছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এমনকি অনাবৃষ্টির সাথে অত্যাধীক তাপপ্রবাহ দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা রবি ফসলের জন্য ক্রমাগত হুমকি সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ সর্বকালের রেকর্ড ছাপিয়ে ৩৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়সে উঠেছে গত ২২ মার্চ। যা ছিল স্বাভাবিকের ৫.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী। ২৫ ও ২৭ মার্চও তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ মার্চ মাসে বরিশাল অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩২.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত ১ এপ্রিলও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৬.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যায়। যা ছিল স্বাভাবিকের ২.৮ ডিগ্রী বেশী। শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে চলতি মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ৩৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
তবে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বভাসে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার কথা বলা হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিন বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। দক্ষিণাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত শিলা বৃষ্টির সম্ভবনার কথা আবহাওয়া বিভাগ থেকে জানান হলেও বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত সে ধরনের কোন পরিস্থিতি লক্ষণীয় ছিলনা দক্ষিণাঞ্চলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ