Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা

| প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনাকারণে বিপর্যয়ের শিকার নিম্ন আয়ের প্রায় ৩৫ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণীঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ পরিবারকে দেবেন ৫০০০ টাকা করে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব একথা জানিয়ে বলেছেন, এ জন্য সরকারের ব্যয় হবে ৯৩০ কোটি টাকা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বহু মানুষ কর্ম হারিয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ আরো বিপাকে পতিত হয়েছে। এই দরিদ্র, অসহায়, অবলম্বনহীন ৩৫ লাখ পরিবারকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান তাদের বিশেষ উপকারে আসবে, তাতে সন্দেহ নেই। এ অর্থ এমন বেশি কিছু নয়, কিন্তু এটা দুস্থ পরিবারগুলোকে এই মর্মে আশ্বস্থ করবে যে, সরকার তাদের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। এতে তাদের মনোবল বাড়বে। একইভাবে সম্প্রতিক প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ কৃষকও কিছুটা স্বস্তি অনুভব করবে। তাদের মনোবলও চাঙ্গা হবে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩৬টি জেলার ৩০ লাখ ৯৪২৪৮ হেক্টর জমির মধ্যে ১০৩০১ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ এবং ৫৯৩২৬ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত এক লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা গেছে, করোনায় বিপন্ন নিম্ন আয়ের ৩৫ লাখ পরিবারের তালিকা এবারও তৈরি করবে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। পক্ষান্তরে কৃষকদের তালিকা করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউন কার্যকর করায় দিন মজুর, শ্রমিক, গৃহকর্মী, মোটরশ্রমিক ইত্যাদি গভীর সংকটে পড়েছে। তাদের আর্থিক ও পণ্যসহায়তা দেয়ার তাকিদ উচ্চারিত হচ্ছিল বিভিন্ন মহল থেকে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার প্রয়োজনীয়তাও বিশেষভাবে অনুভূত হচ্ছিল। এমতাবস্থায় ৩৬ লাখ পরিবারকে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই।

গত বছরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকারণে দরিদ্র, অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ৫০ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এজন্য বরাদ্দ ছিল ১২৫০ কোটি টাকা, যার মধ্যে এ যাবৎ ৯১২ কোটি দেয়া সম্ভব হয়েছে। ৩৬ লাখ ৭৮৭২ পরিবারকে সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক তথ্য হলো, পাঠানো টাকার মধ্যে ১০১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফেরৎ এসেছে। অর্থাৎ ৪ লাখ ২১৬৮টি পরিবার টাকা পায়নি। এই টাকা এখন বিকাশ, নগদ, রকেট ও শিউরক্যাশের কাছে পড়ে আছে। এসব তথ্য পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে। খবরে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রমিক প্যাকেজের জন্য যে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল তার মধ্যে মাত্র ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। সব মিলে বরাদ্দ ছিল ২৭৫০ কোটি টাকা। তার মধ্যে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা বিতরণই হয়নি। কেন গরীব, অসহায় ও কর্মহীন শ্রমিক পরিবার বরাদ্দকৃত অর্থপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলো, সেটা অবশ্যই এক বিরাট প্রশ্ন। গত বছরের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী এই সহায়তাকর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর এতগুলো মাস চলে গেল অথচ অনেক পরিবারই তাদের সহায়তার অর্থ এখনো পায়নি। এনিয়ে অনেক কথাই শোনা গেছে। তালিকা করার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। টাকা প্রদানের ক্ষেত্রেও নানা দুর্নীতির কথা শোনা গেছে। এসবের প্রতিকার হয়েছে কিনা কেউ বলতে পারে না। বিকাশ, নগদ, রকেট ও শিউরক্যাশের কাছে পড়ে থাকা এত অর্থ কোষাগারে ফেরৎ নেয়ার কাজটিও এখন পর্যন্ত হয়নি। এর কী জবাব হবে আমাদের জানা নেই। সরকারের একটি মহৎ কাজ ঠিকমত সম্পাদিত হয়নি, উপকারভোগীরা বঞ্চিত হয়েছে। এরচেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে!

সন্দেহ নেই, আগের চেয়ে এবারের অবস্থা আরো খারাপ। দেশব্যাপী লকডাউন দু’ সপ্তাহ ধরে চলছে। তা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, দরিদ্র, কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ, অসহায়ত্ব ও বিপন্নতা আরো বাড়তে পারে। তাদের সংখ্যা স্ফীত হতে পারে। সেখানে যোগ দিতে পারে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও। করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের গবেষণায় উঠে এসেছে। অন্য এক তথ্য জানা গেছে, এই সময়ে দারিদ্র দ্বিগুণ হয়েছে। এই কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত না হয়ে পারা যায় না। সবচেয়ে বড়কথা এদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এই বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সহায়তার প্রয়োজন। সরকারকে এদের সবার কথা ভাবতে হবে। এদিকে নতুন উপসর্গ হিসাবে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ফসলহানি। এমনিতেই খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম ও হু হু করে বাড়ছে। ফসলহানি এ পরিস্থিতি আরো শোচনীয় করে তুলতে পারে। খাদ্যনিরাপত্তার হুমকি আরো বাড়তে পারে। গত বছর সচল ছিল কৃষি। এবার সেই কৃষিও আক্রান্ত। এমুহূর্তে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। প্রয়োজনে তাদের সহায়তা বাড়াতে হবে, যাতে তারা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে মেরুদন্ড খাড়া করতে পারে। পরিশেষে আমরা বলবো, দরিদ্র, কর্মহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা যেন অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত হয়। যথাসময়ে প্রাপকদের কাছে তা অবশ্যই পৌঁছাতে হবে। এব্যাপারে সক্রিয় তত্ত্বাবধান ও তীক্ষ্ণ নজরদারির বিকল্প নেই।

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ২২ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৩৬ পিএম says : 0
    Whose money she is giving, this money belongs to us, our hard earned tax payers money... 2500/5000 taka is nothings... Our Tax payers money from pm to all government employee they get their salary and they live like king and Queen.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন