Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৬৮ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত বেড়েছে

কোটিপতি বেড়েছে করোনার বছরেও : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ : বিবিএস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) তথ্যমতে, করোনা মহামারিতে দেশে মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনাকালীন সময়ে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছেই।

বিবিএস বলছে, ২০২০ সালের ১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর বিবিএস ৯৮৯টি পরিবারের ওপর টেলিফোনে এক জরিপ চালায়। সেই জরিপে দেখা গেছে, করোনার আগে গত মার্চ মাসে প্রতি পরিবারে মাসিক গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা। আগস্ট মাসে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৯২ টাকা। অপরদিকে, করোনার বছরে ব্যাংক খাতে ১০ হাজার ৫১টি নতুন কোটিপতির ব্যাংক হিসাব যোগ হয়েছে। সেই সঙ্গে কোটিপতি হিসাবগুলোতে জমা আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কোটিপতি সংখ্যার মধ্যে ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট যেমন রয়েছে, তেমনই প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। আর প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টের পেছনে কোনও না কোনও ব্যক্তি রয়েছেন। তারা বলছেন, ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আছে এমন আমানতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানেই দেশে নতুন করে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত জমা থাকা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০টি। এই হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। যা দেশের ব্যাংকগুলোতে জমা থাকা মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি হিসাবগুলোতে মোট ৫ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা জমা ছিল। যা ছিল ওই সময়ের মোট আমানতের ৪৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সেই হিসেবে গত এক বছরে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবগুলোতে আমানত বেড়েছে ৬৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে খোলা মোট হিসাব সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৫৮ লাখ ১২ হাজার ৯৬৬টি। সেই হিসেবে কোটি টাকার বেশি জমা থাকা ব্যাংক হিসাবের হার শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
গত সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাব ছিল ৮৭ হাজার ৪৯০টি। এতে আমানত জমা ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে কোটিপতি হিসাব বেড়েছিল ১১ শতাংশ বা ৮ হাজার ২৭৬টি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশে ১ কোটি বা তারচেয়ে বেশি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭৫ হাজার ৫৬৩। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে কোটিপতি সংখ্যাবৃদ্ধির এ হার ইঙ্গিত দেয়, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, আর গরিবরা আরও গরিব। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ও সামাজিক ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই জাতীয় বৈষম্য দেশের প্রাথমিক উন্নতির সময়ে বাড়তে থাকে, যা পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে কমে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ১২ বছরে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০০৯ সালের মার্চে দেশে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ জন। ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৫ জন, যা ১৯৭৫ সালে ৪৭ জনে উন্নীত হয়। দেশে কোটিপতিদের সংখ্যা ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২ জন, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩ জন ছিল।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পরে শহুরে বস্তিবাসী এবং গ্রামীণ দরিদ্রদের গড় আয় ৮০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এমন জনগোষ্ঠীর ৬৩ শতাংশ যারা বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তারা অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৩ হাজার ৮৭৫টি। বছরের ব্যবধানে এ অঙ্কের হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৯৫৬টি। এছাড়া ডিসেম্বর শেষে ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে ১০ হাজার ৪৭২টি ব্যাংক হিসাব, ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে ৩ হাজার ৫০৭ জন, ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৬৩২টি, ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ১৩৩টি, ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ৭২৫টি, ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩৮৪টি এবং ৩৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে ২৯৪টি আমানতকারী হিসাব রয়েছে। এছাড়া ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭৮টি, যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিল ৩৮৪টি। আলোচিত সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাব সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৩৯০টিতে উন্নীত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ