Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রমজানে রোজাদারের দোআ

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.)-এর একটি বর্ণনা হতে জানা যায় যে, রমজান মাসের প্রতি রাতে একজন আহ্বানকারী এই বলে আহ্বান করে, হে কল্যাণ অনুসন্ধানকারীগণ! বস, কর এবং চোখ খুলো। অতপর ফেরেশতা বলেন, মাগফিরাত প্রার্থী কেউ আছে কি, যাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে, তওবাকারী কেউ আছে কি, যার তওবা কবুল করা হবে, কোনো দোআ প্রার্থনাকারী আছে কি, যার দোআ কবুল করা হবে, কোনো সাওয়ালকারী আছে কি, যার সাওয়াল পূরণ করা হবে। অর্থাৎ এগুলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার, প্রর্থনা করার বিষয়, চাইলে আল্লাহতাআলা তা দান করবেন। এখানে আল্লাহর কাছে রমজান মাসের রাতগুলোতে দোআ করার জন্য আল্লাহর ফেরেশতা আহ্বান জানান এবং সে দোআ কবুল হওয়ার আশা করা যায়। ফেরেশতার এ আহ্বান রমজান মাসের রোজাদারের প্রতি। এতে রমজান মাসের বিশেষ মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রমাণ রয়েছে।

দোআ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, দোআ না করা, এর থেকে বিরত থাকা এবং এর থেকে বিমুখ হয়ে থাকা খুবই ক্ষতিকর। একটি বর্ণনায় আছে যে, রমজান মাসে আল্লাহতাআলা আহ্বানকারী ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ করেন যে, তোমরা নিজেদের এবাদত হতে বিরত থাক এবং রোজাদারগণের দোআয় আমীন বল। দোআর ন্যায় এমন একটি ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাবান বস্তুকে ছেড়ে দেয়া দুর্ভাগ্যের বিষয়। খোদ আল্লাহ বলেছেন : তোমরা আমার নিকট দোআ প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব।

এখানে প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহ কি সকলের প্রার্থনা কবুল করবেন? এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম লিখেছেন যে, দোআ কবুল হওয়ার কতিপয় শর্ত আছে। এগুলো পালন করা না হলে দোআ কবুল হয় না। এমন বহু দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত লোক আছে যারা আকাশের দিকে হাত তুলে দোআ করে এবং ইয়া রব, ইয়া রব বলে প্রার্থনা করে। কিন্তু তাদের খাদ্য হারাম, পান করা হারাম এবং পোশাক হারাম। এমন অবস্থায় তাদের দোয়া কিভাবে কবুল হয়?

আর যাদের রোজাই হয় না, রমজানের মতো ফজিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত মাসে তাদের দোআ কিভাবে কবুল হবে? এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : এমন বহু রোজাদার আছে যারা রোজার সুফলগুলোর মধ্যে ভুখা থাকা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারে না এবং বহু রাত জাগা লোক এমন আছে যারা জাগ্রত থাকার কষ্ট ব্যতীত আর কিছুই লাভ করতে পারে না। (ইবনে মাজা, নাসায়ী)

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম বলেছেন প্রথমত এতে সেই ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে দিনে রোজা রেখে হারাম মাল দ্বারা ইফতার করেছে। এতে রোজার সাওয়াবের চেয়ে গুণাহের পরিমাণ অনেক বেশি, হারাম মাল খাবার কারণে এবং সারাদিন অভুক্ত থাকা ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, সেই ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে রোজা রেখে পরনিন্দা (গীবত) করে। তৃতীয়ত, রোজারত অবস্থায় যে ব্যক্তি গুনাহের কাজ হতে বিরত না হয়। এমন রোজাদারের দোআ কিভাবে কবুল হবে?

রমজানের রোজার ফজিলত মর্যাদা যেমন অপরিসীম, তেমনি রোজার শর্তাবলীও কঠিন। বিশেষত: রোজা পালনের শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করা না হলে রোজা শুদ্ধ না হওয়ার আশংকাই থেকে যায়। তাই হারাম খাদ্য ও গীবত রোজা বিনষ্টের জন্য যথেষ্ট। অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে হালাল জিনিসকেও হারামে পরিণত করা হয় এবং আচার-ব্যবহার, গীবত বা পরনিন্দা রোজাকে বিনষ্ট করে। এমতাবস্থায়, এই ধরনের রোজাদার যত দোআ করুক না কেন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন না।

যারা হারাম খাদ্য গ্রহণ করে জানা বা অজানাভাবে, তারা যত বড় সাধকই হোন না কেন, তাদের দোআও কবুল হয় না।

সুতরাং রমজানে রোজাদারগণকে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। যারা সঠিকভাবে রোজা করেন, নির্দিষ্ট সময়গুলোতে দোআ করলে তাদের দোআ কবুল হওয়ার আশা করা যায়।



 

Show all comments
  • তানিম আশরাফ ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
    যে রমজান মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে- এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন আল্লাহ। রমজানে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • তপন ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    রোজাদারের জন্য দোয়া কবুলে একটি মুহূর্তের কথা বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া (আল্লাহর কাছে) ব্যর্থ হয় না। >> ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। >> ন্যায়বিচারক বাদশাহর দোয়া। >> মজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমদ)
    Total Reply(0) Reply
  • কুদ্দুস তালুকদার ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    ইফতারকারী রোজাদারের জন্য রমজানজুড়ে বিভিন্ন আবদার পাস করিয়ে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ হলো ইফতারের সময়
    Total Reply(0) Reply
  • বদরুল সজিব ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    ইফতারকারী ইফতার সামনে নিয়ে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে তিনি খালি হাতে ফেরত দেন না। এমনিতে মহান আল্লাহ বান্দাহকে খালি হাতে ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • হাদী উজ্জামান ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:২২ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব রোজাদারকে রমজানজুড়ে ইফতার সামনে নিয়ে তাসবিহ-তাহলিল ও দোয়া-দরুদ পড়ার মাধ্যমে ইফতারের অপেক্ষা করার তাওফিক দান করুন। ইফতারের সময় মনোবাসনা পূরণে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ আহমেদ ২০ এপ্রিল, ২০২১, ১:২৩ এএম says : 0
    ইফতার শুরু করার আগে, কিছুটা ইফতার করার পর কিংবা ইফতার শেষ করেও দোয়া করা যেতে পারে। হাত উঠিয়ে দোয়া করা যায়। হাত না উঠিয়েও দোয়া করা যায়। যে কোনোভাবে দোয়া করলেই হল। আল্লাহ কবুল করবেন। প্রকাশ্যে দোয়া এবং মনে মনে দোয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.+Raju+Ahamed ২০ এপ্রিল, ২০২১, ৩:০০ পিএম says : 0
    দোয়া কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত হালাল রুজি আহার করা। আপনি যে সময়ে ই দোয়া করেন না কেন হালাল রুজি আহার ছাড়া দোয়া কবুল হয়না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন