Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তর ‘অস্থির’ সেঞ্চুরি

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

আগে বহুম্যাচ খেলেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। দলটি সম্পর্কে আছে ভালো জ্ঞ্যান। বর্তমানে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হিসেবে আছেন পাল্লেকেলে টেস্টে। সাবেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার রাসেল আর্নল্ডের একটি কথাইা যেন খুঁজে পাওয়া গেল দিনের সরমর্ম। নাজমুল হোসেন শান্তর রক্ষণাত্মক কৌশলের প্রশংসা করেন তিনি বলছিলেন, ‘নাজমুলের সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে যেই বিষয়টি সেটি হলো তার রক্ষণাত্মক কৌশল। কোনো ভুল শট খেলেনি পুরো ইনিংসে। কোনো সুযোগ দেয়নি।’ প্রথম দিন শেষে এই বাণীই হয়ে রইলো বাংলাদেশ দলের পাথেয়।

গতকাল সকালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের শুরুতেই ফিরলেন ওপেনার সাইফ হাসান। তার ছাপ না ফেলে দুর্দান্ত সব শটের পসরা সাজিয়ে তামিম ইকবাল এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিন অঙ্কের দিকে। তবে ধৈর্যহীন বাজে এক শটে শেষ হয় তার লড়াই। মাত্র ১০ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় দেশসেরা ওপেনারকে। সেই ধৈর্য্যরে অমোঘ সূধা পান করে ঠিকই দেখালেন এই উইকেটে টিকে থাকলে সম্ভব। পাল্লেকেলেতে তামিম ‘নড়বড়ে নব্বইয়ে’র শিকার হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে একের পর এক ব্যর্থতায় যিনি ‘নড়বড়ে’ করে ফেলেছিলেন নিজের অবস্থান, সেই নাজমুল ঠিকই আদায় করে নিলেন সেঞ্চুরি। তামিম, নাজমুলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও। ব্যাটিং অর্ডারে শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে পাল্লেকেলে টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ একটা দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে ২ উইকেট ৩০২ রান টেস্টে সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বিচার করলে যথেষ্ট স্বস্তিদায়কই বলা চলে।

নাজমুলকেই গতকাল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ম‚ল চালিকাশক্তি বলা যেতে পারে। সেঞ্চুরি পেয়েছেন, সেই সেঞ্চুরির ধরনটাও দারুণ। ২৮৮ বলে ১২৬ রান করে দিন শেষে তিনি অপরাজিত। দলীয় মাত্র ৮ রানে সাইফ হাসানের ফেরার পর ঠিক যে ধরনের ব্যাটিং দরকার ছিল, নাজমুল আজ ঠিক সে ধরনের ব্যাটিংই করেছেন। তামিমের ছায়ার আড়ালে থাকলেও ধীরে ধীরে নিজেকে খোলস ছাড়া করেছেন। প্রথমে তামিমের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৪ রানের জুটি ও দিন শেষে মুমিনুল হকের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৫০ রানের জুটিতে তিনি নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন।

তামিমের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নাজমুলের শান্ত, ভেবেচিন্তে খেলার ব্যাপারটি ছিল দুর্দান্ত। মোট কথা নাজমুল এদিন ঠিক সেই ধরনের ব্যাটিংই করেছেন, যেটি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সবাই দেখতে চায়। তামিম ৯০ রানে দিনের দ্বিতীয় সেশনে আউট হয়ে ফিরে গেলেও নাজমুল নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি। মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের কাজটি ঠিকই করে গেছেন। আঁটসাট ব্যাটিংয়ে লঙ্কান বোলারদের খাটিয়ে মেরেছেন। ব্যক্তিগত ২৮ রানের মাথায় শ্রীলঙ্কান উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলার ব্যর্থতা জীবন পাওয়া নাজমুল দিনের দ্বিতীয় আর শেষ সেশনে লঙ্কান বোলারদের আর কোনো সুযোগই দেননি। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে ইনিংসের ৭৪তম ওভারে ২৩৫ বল খেলে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটি পেয়ে যান এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। নাজমুলের ইনিংসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, ইনিংসে কোনো ভুল শট না খেলা।

সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান হিসেবেই জাতীয় দলে এসেছিলেন। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকটা হয়েছিল হঠাৎ করেই। অভিষেক ইনিংসে সম্ভাবনা দেখালেও এরপর কেন যেন নিজের মতো করে খেলতেই পারছিলেন না। সমালোচনা হচ্ছিল ব্যর্থতার পরেও নাজমুলকে তিন নম্বরে খেলিয়ে যাওয়া। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা ছিল তার প্রতি। গতকাল পাল্লেকেলেতে সেই আস্থারই প্রতিদান দিয়েছেন তিনি। অধিনায়ক মুমিনুল ১৫০ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত। তিনি জুটির গোটা সময়টাতেই নাজমুলকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন দারুণভাবে। তার কাজটা আসলে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছিল নাজমুলের ব্যাটিংই। শান্তর সঙ্গে মুমিনুলের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১৫০। দেশের বাইরে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের যা সর্বোচ্চ জুটি।

তার আগে এই ম্যাচেই তামিম-শান্তও জুটি দিয়ে প্রায় এক যুগ পর বিদেশের মাঠে দ্বিতীয় জুটিতে সেঞ্চুরি পেল বাংলাদেশ। সবশেষ সেঞ্চুরি জুটিতেও ছিলেন তামিম, ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে। সেবার আরেক বাঁহাতি জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে তামিমের জুটি ছিল ১৪৬ রানের। সেই টেস্টের পর থেকে এই টেস্টের আগ পর্যন্ত দেশের বাইরে ৫৬ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি ছিল তামিম ও ইমরুল কায়েসের ৭০। সেটিও সেন্ট ভিনসেন্টে, ২০১৪ সালে।

টেস্ট ক্রিকেটে দিন শেষে এমন স্বস্তির দেখা খুব কমই পেয়েছে বাংলাদেশ। তামিম আউট হয়ে যাওয়ার পর যে হতাশাটা, সেটি দিন শেষে দারুণভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন নাজমুল-মুমিনুল। এ মুহ‚র্তে স্কোরবোর্ডের যে চেহারা, তাতে বাংলাদেশ এই টেস্ট জয়ের জন্য বড় একটা সংগ্রহে চোখ রাখতেই পারে। এখনো পর্যন্ত পাল্লেকেলেতে উইকেট পুরোপুরি কথা বলেছেন ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। এই উইকেটে স্থিতধী ব্যাটিংয়েই ফল মিলেছে বাংলাদেশের। আজ দ্বিতীয় দিনেও পাল্লেকেলের ব্যাটিং সহায়ক পরিবেশের সুযোগটা কোনোভাবেই ছাড়তে চাইবেন না বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। চাওয়ার তালিকায় নিশ্চিতভাবেই থাকবে শান্তর আরও বড় ইনিংস, দেশের বাইরে মুমিনুলের প্রথম সেঞ্চুরি, দলের রান পাহাড়।
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ৩০২/২ (তামিম ৯০, সাইফ ০, শান্ত ১২৬*, মুমিনুল ৬৪*; লাকমল ১৮-৭-৫৫-০, বিশ্ব ১৭-২-৬১-২, কুমারা ১৯-২-৬৩-০, ম্যাথিউস ৫-১-৮-০, ধনাঞ্জয়া ১৬-১-৭১-০, হাসারাঙ্গা ১৫-১-৩৪-০)। * প্রথম দিন শেষে

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রিকেট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ