Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান সর্বোত্তম নেক আমল

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম

হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে। (সহিহ বুখারী) ।

সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নেককাজের পুরস্কার দশগুণ থেকে সাতশ’গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়, কেবল রোজা ব্যতীত। রোজার পুরস্কার কেবল আল্লাহ জানেন। আল্লাহ্ একে কতগুণ বর্ধিত করবেন, আর কী পুরস্কার দেবেন, সেই জ্ঞান আল্লাহ তাঁর নিজের কাছে রেখেছেন, প্রকাশ করেননি। (মুসলিম) ।
এই হাদিসে নেক আমলসমূহকে দশ থেকে সাতশ’গুণ বর্ধিত করার কথা বলা হয়েছে, আর সাওমের ব্যাপারে বলা হয়নি। এ থেকে বোঝা যায় ইনশাআল্লাহ রোজার প্রতিদান সাতশ’গুণের চেয়েও অনেক বেশি দেয়া হবে। আল্লাহর কসম, এই ব্যাপারটা যে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারবে, সে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় রমজানের মতোই কাটাবে।

যখন এই দুনিয়ার কোনো বাদশাহ বা প্রভাবশালী ব্যক্তি কাউকে পুরস্কৃত করেন, তখন তাঁর পুরস্কার এমন হয় যাতে নিজের মর্যাদা প্রকাশ পায়। তাহলে চিন্তা করুন। বাদশাহের বাদশাহ আল্লাহ যখন নিজে সাওমের প্রতিদান দেবার প্রতিশ্রুতি দেন, তখন সেই প্রতিদান কত বেশি হতে পারে!

চলমান রমজানে নতুন রূপ নিয়ে করোনা এসেছে। প্রতিদিন মৃত্যুর হার বাড়ছে। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। দয়াকরে আপনার আত্মীয়, প্রতিবেশী, নিকটবর্তী, চেনাজানা এক বা একাধিক পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চালানোর চেষ্টা করুন। যারা পারেন আরো বেশী পরিবারকে সাহায্য করেন। বেশি কিছু করার সঙ্গতি না থাকলে কিছুটা হলেও সহযোগিতার হাত বাড়ান।

ইফতার রাতের খানা ও সাহরিতে যাদের পারেন শরিক করেন। আসুন, নিজেরা সংযম ও পরিমিতি অবলম্বন করে কিছু পানাহার অপরকে করাই। নবী করিম (সা.) বলেছেন, একজনের খানা দু’জনের, দু’জনের খানা তিনজনের, তিনজনের খানা চারজনের জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে।

৫ কোটি মানুষ আর ৫ কোটি মানুষকে সাহায্য করলে আল্লাহর রহমতে অল্প দিনের মধ্যেই অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জাকাত সদকা দানেরও এখনই সেরা সময়। লকডাউন উঠে গেলে সবার কষ্ট আরো কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন : যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)।

দানের দ্বারা জ্বরা ব্যাধি মৃত্যু অভাব অনটন দুর্ভিক্ষ বিপদ আপদ গজব কেটে যায়। নবী করিম (সা.) বলেন, তোমরা একটু পানি, একটুখানি খেজুর, সামান্য কিছু খাবার, যার প্রয়োজন তাকে দান করে হলেও দোজখের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচাও। (আল হাদীস)

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে কর এবং তা অভাবগ্রস্তদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭১)।

রমজান মাস হলো মুমিনের জন্য আমলের বসন্তকাল। এ মাসে যত আমল করবে তার পরকালীন ভান্ডার ততই সমৃদ্ধ হবে। আর রমজানের অন্যতম আমল হলো দান-সদকা। গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।

পবিত্র রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মাঝে অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট অনুভব করা। যারা প্রাচুর্যের মাঝে জীবনযাপন করেন তারা সারাবছর ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা না বুঝলেও রমজানে কিছুটা বোঝেন।

নবি করীম (সা.) রমজানে মাসে বেশি বেশি দান করতেন। এবং সাহাবাদের এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো সবচেয়ে উত্তম সদকাহ কী? তিনি বললেন, রমজান মাসের সদকা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র রমজান মাসে বিপুল পরিমাণে দান করতেন। (তিরমিজি)।



 

Show all comments
  • Md. Abdur Rahim ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
    যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত বা সৃষ্টির সেরা করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তিনি মানব জাতিকে একে অপরের কল্যাণ সাধনের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র, ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্য দান করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Badal Sikdar ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫১ এএম says : 0
    ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের খাদ্য দানের গুরুত্ব ব্যাপক। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে এ ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Baadshah Humaun ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫২ এএম says : 0
    গরীব, অসহায় ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্য দানকারী ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর অনুগত্যকারী ব্যক্তি বলে গণ্য হবেন। কেননা রাসূল (ছাঃ) ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • বদরুল সজিব ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
    ‘নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয় যে নিজে পেট পুরে আহার করে কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে’।-- আল হাদিস
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৩ এএম says : 0
    ক্ষুধার্তকে দান করে নিঃস্ব মুসলিম ভাইয়ের অভাব পূরণের চেষ্টা করলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আর এতে আল্লাহর বিশেষ সাহায্য লাভ করা যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • হাদী উজ্জামান ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৪ এএম says : 0
    ক্ষুধার্তকে খাদ্য মহান আল্লাহর ভালবাসা পাবার লক্ষ্যে দুস্থ-গরীবের প্রতি খাদ্য দানকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সে জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মতরাজি ভোগ করতেই থাকবেদান করলে মহান আল্লাহ খুশি হন। এ
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফ আহমেদ ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
    মানুষের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম হচ্ছে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্য দান করা। ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাদ্যদানের গুরুত্ব অপরিসীম।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Anisur Rahman ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ১১:০৪ এএম says : 0
    ALHAMDULILAH
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন