Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কাল ঈদুল আযহা

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৪৮ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : বছর ঘুরে বাংলাদেশের মুসলমানদের দুয়ারে আত্মত্যাগ ও খুশির বার্তা নিয়ে আবারো হাজির হয়েছে অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। বিশ্ব মুসলিমের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি ঈদুল আযহা। আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদার মধ্যদিয়ে উদ্যাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ মোবারক! পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও পৃথক পৃথকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং তারই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে পালিত হয়ে আসছে ঈদুল আযহা। হযরত ইবরাহিম (আ.) এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানি প্রচলিত হয়েছে। যাকে কেন্দ্র করে ঈদুল আযহার এই উৎসব। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর পূর্বে হযরত ইবরাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.)কে কোরবানি করার ঘটনার স্মরণে কোরবানি প্রচলিত হয়। পুত্র কোরবানির পরীক্ষায় হযরত ইবরাহিম (আ.) উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে খলিলুল্লাহ উপাধি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন প্রতিবছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহপাকের আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আদিষ্ট হয়ে প্রতিবছরই পশু কোরবানি করেছেন এবং তার উম্মতের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব তাদের জন্য কোরবানি করা বাধ্যতামূলক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যাদের ওপর ওয়াজিব তারা কোরবানি না করলে যেন ঈদগাহে গমন না করে। তিনি আরও বলেছেন, কোরবানির দিন কোনো ব্যক্তির কোরবানির পশুর রক্ত ঝরানোর মতো আল্লাহপাকের কাছে অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজ আর কিছু নেই।
কোরবানিকে আল্লাহ এবাদত হিসেবে নির্দেশ করেছেন। পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রদর্শন করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করাটাই উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য যথাযথভাবে অর্জিত হলে কোরবানি করা সার্থক হয়ে থাকে। আল্লাহপাক সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এর (পশুর) গোশত ও রক্ত বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ কোরবানির জন্য হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের আদর্শ। তিনি পুত্র ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করতে উদ্যত হলে আল্লাহপাক তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে হযরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে হযরত জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে দুম্বা উপস্থিত করেন এবং দুম্বা জবাই হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে যে নজির হযরত ইবরাহিম (আ.) রেখে গেছেন, মানব ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ মিল্লাতে ইবরাহিমের জন্য এক মহান আদর্শ, এ গৌরবের স্তম্ভ। এ উৎসবে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য যেমন রয়েছে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক নানা কল্যাণকর দিকও রয়েছে। সৌভ্রাতৃত্ব, ঐক্য সংহতি, বন্ধুত্ব, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা সহানুভূতি প্রকাশের এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় এই ঈদ।
কোরবানি অর্থ ত্যাগ এবং ত্যাগের মহিমার মধ্যদিয়ে সামর্থ্যবানরা পশু কোরবানি করেন। এই কোরবানির একটি অংশ দরিদ্রদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। ধনী-দরিদ্র সকলেই যাতে সমভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, সেজন্য ইসলামে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। কোরবানির গোশতের ভাগ বাটোয়ারা করার ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মানতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মুসলমান অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যে অসহায় অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে। ইরাক-আফগানিস্তানসহ বহু দেশে মুসলমানরা সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। তাদের কাছেও ঈদুল আযহা উপস্থিত। কোরবানির শিক্ষা নিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ব মুসলিমকে আরও সচেতন হতে হবে, সক্রিয় হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং আত্মরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কামিয়াবি হাসিল করা সম্ভব। পশু কোরবানির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মুসলমানের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি করে আল্লাহর পথে, আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও অনুগ্রহ লাভের জন্য সর্বোচ্চ নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে।
ঈদুল আযহা উপলক্ষে আজ রোববার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত ৪ দিনের সরকারি ছুটি শুক্র, শনিসহ মোট ছুটি ৬ দিন। ঈদ উপলক্ষে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে, রেডিও বিটিভি এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ৩ দিন এবং কোনো কোনো চ্যানেল ৫/৭ দিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। ঈদের দিনে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক এবং সড়কদ্বীপসমূহ ঈদ মোবারকখচিত পতাকা ও জাতীয় পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হবে। সরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঈদের দিনে কারাগারসমূহ, বিভিন্ন হাসপাতাল, এতিমখানা, ভবঘুরে কেন্দ্র ও দুঃস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাদ্য পরিবেশিত হবে। এ দিনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকিটে শিশুপার্কে প্রবেশ করতে পারবে। ঈদ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসবে এবং ঈদের র‌্যালি বের করা হবে।
সরকারি কর্মসূচি
ঈদের দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল শিশুপার্কে ও সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিনা টিকিটে ঢাকা জাদুঘরে প্রবেশ এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
জাতীয় পর্যায়ের সাথে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনসমূহে দেশব্যাপী ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তা ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল আযহা উদযাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঈদের শুভেচ্ছা
ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমাদের শান্তির স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসলামের শাশ্বত বিধানের দিকে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে, তাহলেই আমরা দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতে সীমাহীন নিয়ামতের অংশীদার হতে পারব ইনশাআল্লাহ। এছাড়া আরো যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারা হলেন-ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি মো. রেজাউল করিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান।

বেগম জিয়ার বাণী
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের দিকে সাহায্য ও সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করার জন্য বিত্তবান ও সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার এক লিখিত বাণীতে তিনি এ শুভেচ্ছা ও আহ্বান জানান।
গণমাধ্যমে পাঠানো বাণীতে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে প্রতি বছর ঈদুল আজহা আমাদের মাঝে ফিরে আসে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানির প্রধান শিক্ষা। কোরবানির প্রকৃত রূপ হলো মনের গভীরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাকওয়া নিয়ে প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। তাই উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা ইত্যাদি গৃহপালিত চতুষ্পদ পশু ও কোরবানির মধ্যে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-ক্রোধকে পরিহার করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিবেদিত হওয়া মানুষের কর্তব্য উল্লেখ করে বাণীতে বলা হয়, কোরবানির যে মূল শিক্ষা তা ব্যক্তিজীবনে প্রতিফলিত করে মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ সম্ভব।
এছাড়া ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারন সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, ন্যাপ-ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি দেশবাসী ও বিদেশে বসবাসরত এবং কর্মরত প্রবাসী কর্মীসহ চট্টগ্রামবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছ জানিয়েছেন। ঈদের আরো শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খেলাফতে ইসলামীর আমীর ও ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাল ঈদুল আযহা

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ