Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অপর্না মোহনাদের পথ চাওয়া

প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অপর্না উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত জীবনে প্রতিষ্ঠিত একজন মহিলা। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। এই অপর্নার বিয়ে হয়েছিল লেখাপড়া শেষ করে ব্যাংকে জয়েন করার পর। তবে সেই বিয়ে ছিল সাতদিনের কাগজের বিয়ে। ওর নিজের কোন পছন্দ ছিল না তাই আব্বা আর বড় ভাইয়ের পছন্দ করা পাত্রের সাথে বিয়ে হয়। দুই পক্ষের যৌথ আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় তিন মাস পরে অনুষ্ঠান করে ওকে তুলে নিবে। তাই বরকনে কেউ কারো সাথে পরিচিত হয়নি। অথচ বিয়ের এক সপ্তাহ হয়নি তার মধ্যেই ভদ্রলোক অপর্নার ব্যাংকে এসে হাজির। অপর্না আশ্চর্য হলেও প্রকাশ করল না। স্মিত হেসে বলল আপনি ব্যাংকে আসবেন জানতাম নাতো। ভদ্রলোক বলল না জানিয়ে আসলে অসুবিধা আছে? অসুবিধা কিছু নেই তবে জানিয়ে আসলে সময় দিতে পারতাম। যাকগে বলুন চা চলবে তো। না চা লাগবে না, তুমি কি খুব ব্যস্ত? ব্যাংকের চাকরি প্রত্যেকেই ব্যস্ত আমিও। ব্যাপার কি অপর্না আমাকে আপনি আপনি করছ। অপর্না মাথা নিচু করে বলল আপনার সাথে প্রথম দেখা ও কথা বলা তাই।
ঠিক আছে তুমি হাতের কাজ শেষ করো তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। ব্যাংক আওয়ারে বেড়াতে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমি বন্ধুকে কথা দিয়েছি তোমাকে নিয়ে ওর বাসায় যাব। ক্ষমা চাই আমার হাতে অনেক কাজ পারব না। তাছাড়া সময়মত বাসায় না ফিরলে সবাই চিন্তা করবে। আমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে অন্যদিন আসুন। আমার সাথে বেড়াতে গেলে তোমার ভাইয়ের অনুমতি লাগবে কেন? আমাকে এখনোই আপনার হাতে তুলে দেয়া হয়নি তাই। তোমার আমার বিয়ে হয়েছে? জি, হয়েছে তবে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়নি। আমি কিন্তু বন্ধুকে কথা দিয়েছি। আমাকে না জানিয়ে করেছেন, অতএব আমার করার কিছু নেই। সারাদিন যখন বাহিরে সময় কাটাও তখন বাসায় চিন্তা করে না? আপনি কি বলতে চান বুজিয়ে বলুন। কিছুই বলতে চাই না, তুমি যাবে কিনা বলো। না আজ কোথাও যেতে পারব না। তা পারবে কেন ঘুরার মানুষের তো অভাব নেই। আপনি যা খুশি ভাবতে পারেন। অপর্না চাকরি করো কত বছর। বছর দুই হবে। টাকা পয়সা কেমন জমা করেছ। এখন বেতন কেমন পাও। বেতন ভালোই পাই। তবে জমা করা হয় না। জমা হয় না কেন? ভাইবোন নিয়ে খরচ করি তাই। যা হবার হয়েছে, এখন থেকে একটি পয়সাও খরচ করবে না। অপর্না মøান হেসে উত্তল দিল আমার পয়সা আমি কি করব সেটা একান্তই আমার ব্যাপার। আমি তোমার স্বামী, আমার কথায় তোমাকে চলতে হবে। অবশ্যই স্বীকার করছি তবে এখন না আপনার বাড়িতে আসি তারপর। আর কিছু বলার আছে আপনার। হ্যাঁ, তোমার আব্বাকে বলো টিভি, ফ্রিজ, ফার্নিচার, অলঙ্কার সব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করতে, তোমাকে এখানে বেশি দিন রাখা যাবে না। অপর্না জানতে চাইল এসব দেয়ার কথা ছিল কি? কথা থাকতে হয় না এমনিতেই দিতে হয়। আর শোন আমি এলাকার জনপ্রিয় লোক, বিয়ের অনুষ্ঠান বড় করে করতে হবে তা না হলে আমার সম্মান থাকবে না। সব কথা আব্বাকে জানাব। তিনি নিশ্চয় তার জনপ্রিয় জামাতার পছন্দ মতই কাজ করবেন। তবে আমার ভাবনা হচ্ছে সেই অনুষ্ঠানে আপনি কি ভদ্রচিতভাবে আসতে পারবেন। বিয়ের সময় তো খুব সুন্দর একটি তামার আংটি দিয়েছিলেন। এ রকম হলে কিন্তু আপনাকে গেইট থেকে ফিরে যেতে হবে। একথা বলা মাত্রই স্বামী ভদ্রলোকটি অপর্নাকে লাথি মারল। অপর্না রাগে ওঠে দাঁড়িয়ে বলল সামান্য একটি কাগজের অধিকারে আমাকে লাথি মারলেন। সংসার জীবনে কি করবেন আমাকে এখন সেটাই ভাবতে হবে। শুনুন মি. ভদ্রলোক আপনার লাথির জবাব দিতে পারতাম, কিন্তু এটা অফিস। আপনি এই মুহূর্তে চলে যান না হয় দারোয়ান ডাকতে বাধ্য হব। শুনে যান সাতদিনের মধ্যে জবাব পেয়ে যাবেন। আপনাকে কষ্ট করে আর এখানে আসতে হবে না। তারপর অপর্নার ফ্যামিলির পক্ষ থেকেই বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়া হয়। সেই থেকে শুরু অপর্নার একা একা পথ চলা। যে পথের শেষ নেই, কেবলই অন্তহীন পথ চলা।
য় সরকার মীনা
৪/১ কাটাসুর, মোহাম্মদপুর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অপর্না মোহনাদের পথ চাওয়া

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন