Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লকডাউন কার্যকর করার দায়িত্ব সকলের

সুলেখা প্রয়াসী | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউনলকডাউনের আক্ষরিক অর্থ, জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের গতিবিধি বন্ধ করে দেয়া। বর্তমানে আমাদের দেশে যে লকডাউন জারি আছে তা সতর্কতামূলক লকডাউন। সোজা কথায়, জনগণের স্বার্থেই প্রশাসন চাইছে, যাতে অপ্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে পা না রাখে। ফলে এই লকডাউন আতঙ্কের নয় বরং প্রয়োজনের। আর এই সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে পুলিশ। তবে সরকারি এ আদেশ বাস্তবায়নের সময় পুলিশের হয়রানির কথা উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমেও। অতিমারির শুরু থেকেই সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ডাক্তার ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সময় কারা বাইরে বেরোতে পারবে, কারা বেরোতে পারবে না, এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আর যারা সম্মুখযোদ্ধা, তাদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক। কিন্তু, লকডাউনের প্রথমদিনেই দেখা গেছে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আটক করেছে পুলিশ। এমনকি জরিমানাও করা হয়েছে।


অনেকে অতি উৎসাহে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হচ্ছে শুধুমাত্র লকডাউন দেখতে, অনেকে মুভমেন্ট পাশের অপব্যবহার করছে বা যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারছে না বাইরে বের হওয়ার। ফলে পুলিশ অনেক সময় স্বাভাবিকের চেয়ে আরো কঠোর হচ্ছে। এই উত্তপ্ত গরম, রোজা আর ঠা ঠা পড়া রোদে তারা আমার আপনার জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেটা সকলকে বুঝতে হবে, হতে হবে আরো সহনশীল। এই অতিমারির সময় আমরা যেনো জনগণের বিপরীতে পুলিশ, আর পুলিশের বিপরীতে জনগণকে দাঁড় না করাই। আমরা পুলিশের বেপরোয়া আচরণ যেমন আশা করি না, তেমনি সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে নানান অজুহাতে বাইরে বের হবে সেটাও কাম্য নয়। আমাদের উচিত, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একে অন্যকে সহযোগিতা করে বর্তমান পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবো সম্মিলিতভাবে। পুলিশ, ডাক্তার ও জরুরি বিভাগের সকলে এক হয়ে কাজ না করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহতার দিকে চলে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতি সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া প্রায় অসম্ভব। তাই সাধারণ মানুষকেও নিয়ম নেমে সহযোগিতা করতে হবে সরকারকে।

বেশিরভাগ অফিস খোলা রেখে বন্ধ রাখা হয়েছে গণপরিবহন। সরকারি নির্দেশে অফিস কর্তৃক পরিবহন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ থাকলেও সে নির্দেশ মানছে না বেশিরভাগ অফিসই। ফলে অফিসগামী মানুষ প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে হয়রানির। বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশায়, পায়ে হেঁটে মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছে, পড়তে হচ্ছে পুলিশের জেরার মুখেও। পোশাক শিল্পের কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের পরিবহনের ব্যবস্থা না করে চালু রাখা হয়েছে কারখানা। বাড়তি ভাড়া দিয়ে কারখানায় পৌঁছে মাস শেষে বেতনের বড় অংশ বা প্রায় সবটাই চলে যাচ্ছে। আবার এই দুর্যোগের সময় পৌঁছতে একটু দেরি হলে কর্তন করা হচ্ছে বেতন। তবুও তারা শুধুমাত্র চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এক বিবৃতিতে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ জি-স্কপ বলেছে, করোনা পরিস্থিতি এই সত্যকে নতুন করে সামনে এনেছে যে, শ্রমিকরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের উৎপাদন, রপ্তানি তথা অর্থনীতির চাকা চালু রাখে। অথচ, সেই শ্রমিকের কপালে জোটে অনাহার, বিনা চিকিৎসা, হয়রানি আর নির্যাতন। করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি এবং লকডাউনের মধ্যেও বকেয়া বেতনের দাবিতে আশুলিয়া এবং গাজীপুরে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

অন্যদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র তথ্য বলছে, করোনায় শক্তি দেখিয়ে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। ধর্ষকরা বিভিন্ন কৌশলে এ ধরনের ঘৃণিত অবরাধ করছে, এমনকি এক জনকে ধর্ষণ করে অন্যজনকে হুমকি দিচ্ছে যে, তাদের কথা না শুনলে তার অবস্থাও এরকম হবে। পরিতাপের বিষয়, মৃত্যুর মিছিলও এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসছে না।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে যে লকডাউন চলছে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। লকডাউন হলে তা পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে। দারিদ্র্য আমাদের দেশে লকডাউনের বড় অন্তরায়। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন, চাপ পড়ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিসহ সব ধরনের ব্যবসায়ী ও খেটে খাওয়া মানুষের উপর। অর্থনৈতিক ক্ষতি শিকার করেও সরকার লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শুধু আমার আপনার জীবন বাঁচানোর জন্য। যদিও সরকারের কমবেশি ব্যর্থতা আছে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ের দুর্বলতা শুরু থেকেই আমরা দেখতে পেয়েছি। সিদ্ধান্তহীনতা আমরা দেখেছি প্রতি পদে পদে। সব সিদ্ধান্তই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আসতে হয়। যদি সব সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিতে হয় তাহলে উপর মহলের ব্যক্তিবর্গদের কাজ কী সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আসে। এগুলো মহামারি মোকাবিলায় অব্যবস্থাপনারই ইঙ্গিত। তবে আমরা কি শুধু সরকারের মুখের দিকে চেয়ে থাকবো? নানান অজুহাতে শুধু বাইরে বের হবো? যদি তাই করি, তাহলে করোনা মোকাবিলা করা আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না। মনে রাখতে হবে, জীবন আমার, পরিবার আমার, সেই জীবনকে, সেই পরিবারকে কীভাবে নিরাপদ ও সুন্দর রাখবো সেটার দায়িত্ব সর্বপ্রথম আমারই। তাই আমি আপনি বা আমার আপনার প্রিয় কোনো মানুষ যেন মৃত্যুর মিছিলে শামিল না হয় সেটার জন্য সচেতন থাকতে হবে, সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই। করোনা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এটা আমাদের মানতে হবে। একটু কষ্ট শিকার করে হলেও অবাদে চলাচল বন্ধ করতে হবে। আর দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের পাশে সাধ্য অনুযায়ী সবাইকে দাঁড়াতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষকে যাতে খাবারের অভাবে বাইরে যেতে না হয় তার জন্য আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর শুরু থেকেই একের পর এক এসেছে দুর্যোগ, দুর্বিপাক, মহামারি ও মৃত্যুর তান্ডব। আবার তা কেটেও গেছে।
লেখিকা: প্রাবন্ধিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লকডাউন

৭ এপ্রিল, ২০২২
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন