Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলনাঞ্চল থেকে চামড়া পাচারের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক/আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা এবছরও অসাধু ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে কোণঠাসা। চাহিদা ও সুবিধামত চামড়া কিনতে পারেননি তারা। ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছেন, চামড়া পাচারের আশংকা নেই। অপরদিকে, খুলনায় খুব কম দামে বিকিকিনি হয়েছে কোরবানীর চামড়া।
‘চার মণ গোশত হয়েছে গরুর, সেই চামড়াটার দাম দিয়েছে ৭০০ টাকা। গত বছরও একই ওজনের গরুর চামড়াটার মূল্য দিয়েছিল ১৬০০ টাকা। চামড়ার পুরো টাকাটাই তো মাদ্রাসায় দান করে দিবো; তাই ও নিয়ে আর যাচাই-বাছাই করিনি।’ নগরীর আহসান আহমেদ রোডের বাসিন্দা প্রবাসী এম. শাহিন আহমেদ উপরোক্ত কথাগুলো বললেন।
এতো কমমূল্যের বিষয়ে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আমানুল্লাহ আমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়-ই ইনি ফড়িয়া বা মৌসুমী ঠকবাজ ক্রেতাদের কাছে চামড়াটি বিক্রি করেছেন। একইভাবে ৪ মণ গোশতের একটি গরুর চামড়ার আকার ২৮ থেকে ৩০ বর্গফুট হতে পারে। প্রতি বর্গফুট ৪০ টাকা হিসাবে যা এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ১২০ টাকা হবার কথা। খুলনার ব্যবসায়ীরা এবছরও অসাধু ফড়িয়া ও মৌসুমী ঠকবাজ ব্যবসায়ীদের কাছে কোণঠাসা ছিল। চাহিদা ও সুবিধামত চামড়া কিনতে পারেনি। ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই পার্শ্ববর্তী দেশে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। খুলনার স্থায়ী ব্যবসায়ীরা চামড়া পাচার করার রেকর্ড নেই। আর এবার চামড়ার মূল্য কম হওয়ায় পাচারের আশঙ্কা বেশিই।’
সরেজমিন দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার ঈদ-উল-আযহায় খুলনায় অর্ধেক দামে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমী ক্রেতারা এসেছিল খুলনায়। তারা ভ্যানে ও টলি যোগে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে কমমূল্যে চামড়া কিনেছে তারা। এমনি অভিযোগ করে খুলনার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন- দাম কম হওয়াতে এবার চামড়া পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।
নগরীর শেখপাড়ার শহীদুল লেদারের স্বত্বাধিকারী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগেও ৭৫ টাকা দামে চামড়া কিনেছি। ঈদ উপলক্ষে ট্যানারী থেকে চামড়া ৪০ টাকা দরে কেনার জন্য বলে দেয়। আর ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকাও দেননি। এ কারণে চামড়ার দাম কমেছে। বাজারে চামড়ার দাম কম থাকলে তা পাচারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। মূলধন সংকট ও মূল্য ব্যবধানের কারণে স্থানীয় স্থায়ী ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে না পারায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া একটু দাম দিয়ে কিনে নিচ্ছে।
মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা মোঃ ইয়াসিনুল হক বলেন, গত বছর গরুর চামড়া এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলাম। কিন্তু এ বছর গরুর চামড়া বিক্রি করে ৫০০ টাকাও পাওয়া গেল না। এটা কেমন হল?
জয় মা লেদারের স্বত্বাধিকারী মনু দাশ বলেন, গত বছর তিনি ৭০০টি চামড়া কিনেছিলেন। কিন্তু এবার মাত্র ৩০০ চামড়া কিনেছেন। এবছর চামড়ার দাম অনেক কম। কিন্তু লবণের দাম দ্বিগুণ। একেকটি চামড়ায় ৭ কেজি থেকে ৮ কেজি লবণ লাগে। ৩০০ চামড়ার জন্য ইতোমধ্যে ২৪ বস্তা লবণ দেয়া হয়ে গেছে। চামড়া শুরু কিনলে হয় না; ওটা প্রক্রিয়াজাতকরণ করার খরচের হিসাবটাও মাথা রাখতে হয়।
মোহাম্মদ লেদারের স্বত্বাধিকারী মোঃ নসিম উদ্দিন বলেন, গত বছর ২ হাজার ৫০০ চামড়া কিনেছিলাম। এবছর দেড় হাজার চামড়া কিনেছি। ট্যানারিতে গত কোরবানির চামড়ার টাকা আটকে আছে। অর্থ সঙ্কটের কারণে এবার চামড়া কিনতে পারছি না। প্রতিটি ব্যবসায়ীর একই অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, খুলনায় গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানির হার বেড়েছে। আর ব্যাপারীরা চামড়া কিনতে না পারার কারণে তা চলে যাচ্ছে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে বাছাইকৃত ভাল ও বড় চামড়াগুলো পাচার হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি।
খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এবার খুলনার ফুলতলার একটি ট্যানারী কর্তৃপক্ষ সরাসরি মাঠ পর্যায়ের থেকে চামড়া কেনায় পেশাদার ব্যবসায়ীরা বড়ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। ট্যানারী কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত মূল্যে খুলনার অন্তত ৫০ শতাংশ চামড়াই কিনে নিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া মূল্যের অতিরিক্ত দিয়েই চামড়া কিনতে হয়েছে অনেকের। এতে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, শেখপাড়া চামড়া পট্টির আমান লেদার কমপ্লেক্স, মুনদাস লেদার, শফিকুল লেদার, কার্ত্তিক ঘোষ লেদার, নূর আমিন, আইয়ূব আলী কসাই, বাহার লেদার ও সেলিম কসাইসহ খুলনার সব ব্যবসায়ীরা মিলে ৮ থেকে ৯ হাজার পিস চামড়া কিনতে পেরেছেন। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেক। বিগত বছরগুলোতে অন্তত ২০ হাজার চামড়া কিনতো বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর ট্যানারি মালিকদের দুই সমিতি ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে চামড়ার দর ঘোষণা করে। নির্ধারিত দর অনুযায়ী ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর হবে প্রতি বর্গফুট ৪০টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০, বকরির চামড়া ১৫ ও মহিষের চামড়া ২৫ টাকা দরে কেনার কথা। ২০১৩ সালে ঢাকা প্রতি বর্গ ফুট গরুর চামড়ার দর ছিল ৮৫-৯০ টাকা, ২০১৪ সালে ৭০-৭৫ টাকা, ২০১৫ সালে ৫০-৫৫ টাকা ও এবার ৫০ টাকা।
খুলনার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আমানুল্লাহ আমান বলেন, সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প রক্ষায় এখনি সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। ট্যানারি মালিকদের কাছে ব্যবসায়ীদের পাওয়া পরিশোধ, স্বল্প সুদে চাহিদা মোতাবেক ব্যাংক ঋণ সুবিধা এবং চামড়ার বাস্তবসম্মত বাজার নির্ধারণ করতে না পারলে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার ঠেকানো কষ্টকর। এছাড়ায় খুলনায় চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট বাজার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
র‌্যাব-৬ পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, খুলনাঞ্চল থেকে চামড়া পাচারের সম্ভাবনা নেই। তবুও সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনাঞ্চল থেকে চামড়া পাচারের আশঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ