Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মেসির জার্সি, চীনা টিকা ও বিতর্ক...

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

লা বোম্বোনেরা আর মারাকানা স্টেডিয়ামের পাশাপাশি উরুগুয়ের রাজধানী মন্তিভিদিওর এস্তাদিও সেন্তেনারিও-ও বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ও প্রাচীন ফুটবল স্টেডিয়াম। প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ এখানেই হয়েছিল। এ ছাড়া কোপা আমেরিকা আর কোপা লিবের্তাদোরেসের কতশত ম্যাচ যে হয়েছে এখানে, ইয়ত্তা নেই। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ফুটবল খেলা নয়, বরং অনন্য এক কারণে খুলেছিল এই এস্তাদিও সেন্তেনারিওর দরজা।
বোস্টন রিভার আর চেরিতো ক্লাবের খেলোয়াড়েরা সেদিন ম্যাচ খেলতে নয়, বরং এস্তাদিও সেন্তেনারিওতে প্রবেশ করেছিলেন ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য। এই আশায় যে হয়তো ভ্যাকসিন নিলে মহামারি করোনাভাইরাসের কবল থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। শুধু এই দুই ক্লাবের খেলোয়াড়েরাই নন, বরং দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবলের অধীনে খেলা প্রতিটি দল ও ক্লাবের খেলোয়াড়দেরই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
চীনা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক কনমেবলকে ৫০ হাজার ভ্যাকসিন দিয়েছে। ফুটবল খেলোয়াড়দের ও খেলাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পেছনেই এই ভ্যাকসিন ব্যয় করা হবে। উরুগুয়ের এস্তাদিও সেন্তেনারিওর মতো প্যারাগুয়েতেও দেখা গেছে একই দৃশ্য, সেখানে ভ্যাকসিন নিয়েছেন স্পোর্তিভো লুকেনো ক্লাবের খেলোয়াড়েরা।
খেলোয়াড়দের জন্য কনমেবলের টিকার সংস্থান করার কারণ একটাই, সামনে কোপা আমেরিকা। গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশীয় ফুটবলীয় শ্রেষ্ঠত্বের এই আসর এমনিতেই এক বছর পিছিয়েছে, আর পেছাতে চায় না কনমেবল। যেখানে ফাইজার কিংবা অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো কোম্পানি কনমেবলকে এত টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানেই সফল হয়েছে সিনোভ্যাক। পৃথিবীর আর কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এত বেশি টিকা পায়নি, কনমেবল যা পেয়েছে। সিনোভ্যাককে তাই ধন্যবাদ দিয়ে তিনটি সই করা জার্সি পাঠিয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তবে সিনোভ্যাকের এই ‘বদান্যতা’র পেছনে অবদান আছে কনমেবলের সভাপতি আলেহান্দ্রো দমিঙ্গেজ ও উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট লুই লাকাল পউয়েরও।
তবে মেসি ধন্যবাদ দিলেও মেসির সতীর্থরাই এই টিকা পাচ্ছেন না আপাতত। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পেরু ও ভেনেজুয়েলা- এই চার দেশে এখনো সিনোভ্যাকের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন নেই। তাই চাইলেও এই চার দেশের খেলোয়াড়েরা এই টিকা নিতে পারছেন না। কনমেবলের অন্তর্ভুক্ত মাত্র ছয়টি দেশ সিনোভ্যাকের টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। যে কারণে গত বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনার দুই ক্লাব লানুস ও রিভার প্লেটের খেলোয়াড়েরা টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যদিও তারা কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন অন্য কিছু। দ্বিতীয় ডোজের টিকা সময়মতো পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে তারা সন্দিহান। ফলে প্রথম ডোজের টিকা নিতে চাননি এই দুই ক্লাবের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা।
তবে টিকা যাঁদের বেশি দরকার, তাঁদের না দিয়ে প্রথমে খেলোয়াড়দের দেওয়ার ব্যাপারটা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে বেশ। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও নিউরোবিজ্ঞানী মিগুয়েল নিকোলেলিস যেমন, গোটা ব্যাপারটার কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না, ‘বিশ্বাস করা যায় না। ফালতু একটা ব্যাপার। ফুটবলের মানুষজন মনে করে তারা যেকোনো আইনকানুন ও নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে। যারা ফুটবল পছন্দ করে না, তাদের কাছে ব্যাপারটা মনে হবে পেটে লাথি খাওয়ার মতো।’
পাশাপাশি সিনোভ্যাকের টিকার কার্যকারিতাও প্রশ্ন তুলছে। ইউনিভার্সিটি অব চিলির প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সিনোভ্যাকের টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ১৫ দিন পর মাত্র ৩ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। দুই ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর এই হার বেড়ে হয়েছে ৫৬.৫ শতাংশ, যা ফাইজার-বায়োএনটেক কিংবা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তুলনায় কম।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় বসবাসরত আর্জেন্টাইন বায়োটেকনোলোজিস্ট এরনেস্তো রেসনিক তাই গোলডটকমে বলছিলেন, ‘সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন বেছে নেওয়ার ব্যাপারটাও চোখে লাগার মতো। কাগজে-কলমের হিসাবে এটিই সবচেয়ে কম কার্যকরী ভ্যাকসিন। হ্যাঁ, দুই ডোজ নেওয়ার পর এর কার্যকারিতা মোটামুটি ঠিক আছে, কিন্তু প্রথম ডোজের পর এটা যথেষ্ট ভালো কাজ করে না।’ পুরো ব্যাপারটাকেই কনমেবলের লোক দেখানো কাজ বা ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’ মনে হচ্ছে তার, ‘এটাকে যে অনেকে পাবলিসিটি স্টান্ট বলছেন, সেটার সঙ্গে আমিও অনেকটা একমত। কনমেবল তার খেলোয়াড়দের জন্য কিছু একটা করছে, এটা দেখানোর জন্যই এমনটা করা হচ্ছে।’
এই টিকা দেওয়ার ম‚ল উদ্দেশ্য অবশ্য করোনায় আক্রান্ত হলেও যাতে কেউ হাসপাতালে ভর্তি করার মতো অবস্থায় না যান, সেটা নিশ্চিত করা। এদিক থেকে বিশ্বে এখন চালু অন্য সব টিকার মতোই কাজ করছে সিনোভ্যাক। কিন্তু এখানেও বিতর্ক আছে। এখনো খেলছেন, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে কারও করোনায় আক্রান্ত হয়ে খুব বেশি জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে—এমন উদাহরণ বিরল। সে ক্ষেত্রে অনেক কম প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার পর খেলোয়াড়েরা করোনাসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে একটু উদাসীন হয়ে পড়েন কি না, এমন শঙ্কা থাকছেই। সে ক্ষেত্রে কোপা আমেরিকার সময়ে পুরো টুর্নামেন্টকে ঘিরেই করোনার সংক্রমণের শঙ্কা বেড়ে যাবে। আর তা হলে এই যে এত আয়োজন, তার পুরোটাই পড়ে যাবে প্রশ্নের মুখে।
তা সবাই টিকা পাচ্ছেন, মেসি-নেইমাররা কখন পাবেন? গোলডটকম জানাচ্ছে, কোপার আগে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুই রাউন্ড খেলতে যখন দেশে যাবেন মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ, হামেস রদ্রিগেজের মতো তারকারা, তখন তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীনা টিকা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ