Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বরতা বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

গত সপ্তাহে আল আকসা মসজিদে পবিত্র জুমাতুল বিদা আদায়কে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। ইসরাইল সেখানে ফিলিস্তিন মুসলমানদের ওপর হামলা করে। এ থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। হামাসের ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের জের ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিনে বিরামহীনভাবে ক্ষেপনাস্ত্র ও বিমান হামলার মাধ্যমে এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একের পর এক হামলায় ফিলিস্তিনের নিরীহ ও সাধারণ মানুষ নিহত এবং আহত হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৯ শিশুসহ ১৪০ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শত শত। ফিলিস্তিনে নিরস্ত্র জনগণের ওপর দখলদার ইসরাইলের টানা ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্বিচারে বোমা হামলা, গণহত্যা এবং ইসরাইলি জবরদখল বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলছে বিক্ষোভ। ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়াতে রাজপথে নেমে আসছে মানুষ। এ প্রসঙ্গে জর্ডান, লেবানন, পাকিস্তান, তুরস্ক, কাতার, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্কের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনকি ইরাইলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষও ফিলিস্তিনীদের পক্ষে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ইসরাইলের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইসরাইলি হামলা বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের দাবী জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের ওপর এমন বর্বর হামলা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। এ যুগে এমন বর্বরতা অবিশ্বাস্য বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা এ গণহত্যা ও শিশু হত্যার তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে হত্যা ও জুলুম বন্ধের দাবি জানাই।

ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইহুদী এ রাষ্ট্রটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা বরাবরই পেয়ে আসছে। এবারও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করেছে। জো বাইডেন এক বিবৃতিতে ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইলেরও আছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে, সেই রাষ্ট্রটি ইসরাইলের পাখির মতো গুলি করে এবং ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করার নিন্দা জানায়নি বরং ইসরাইলেরই পক্ষাবলম্বন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র উইঘুর মুসলমানদের উপর চীনের নির্যাতনের বিষয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা অতি উৎসাহ নিয়ে বললেও ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে তার মানবাধিকার যেন অন্ধ হয়ে রয়েছে। পর্যবেক্ষরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ইহুদীদের মানবাধিকার আছে, ফিলিস্তীন বা অন্য কারো কি মানবাধিকার নেই? যুক্তরাষ্ট্র কি তা দেখছে না? তার এই দ্বৈত নীতি কেন? অন্যদিকে জাতিসংঘসহ ওআইসি এবং বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ অনেকটা লিপসার্ভিস দিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। জাতিসংঘ উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার কথা বলে প্রাথমিক বিবৃতি দিয়েছে। এতে বর্বর ইসরাইলের তেমন কিছু যায় আসছে না। সে তার মতো করেই গুলি ও বিমান হামলা অব্যাহত রেখে নিরস্ত্র ও নিরীহ ফিলিস্তিনীদের হত্যা এবং বিভিন্ন স্থাপনা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। পশ্চিমা বেশিরভাগ গণমাধ্যম যখন এ নিয়ে দ্বৈত নীতি অনুসরণ করছে তখন পুরো ঘটনা মিনিটে মিনিটে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছিল বিশ্বখ্যাত সংবাদ চ্যানেল আল জাজিরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইসরাইল গাজায় অবস্থিত একটি বহুতল ভবনে হামলা চালিয়েছে। সেখানে আল জাজিরা, এপি সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের অফিস ছিল। আল জালা নামের ওই ভবনটিতে বোমা হামলা চালিয়ে তা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ফিলিস্তিনে ইসরাইল কোনো ধরনের বাছ-বিচার না করে নারী-শিশুসহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর যে নারকীয় গণহত্যা চালাচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদেশগুলোর প্রশ্রয়ের কারণেই। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন, ফিলিস্তিনীদের অধিকার রক্ষায়ও একই ভূমিকা পালন করতে পারতেন। তা না করে তিনি তার পূর্বসূরী ট্রাম্পের ভয়াবহ ইসরাইল নীতি অবলম্বন করে চলেছেন। তারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরাইলের প্রতি একচোখা নীতি অবলম্বন না করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভূমিকা পালন করে তবে এ সমস্যার সমাধান অচিরেই সম্ভব।

ফিলিস্তিনে নতুন করে ইসরাইলের বর্বর হামলা ও হত্যাযজ্ঞ কবে বন্ধ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর সমাধানেও জাতিসংজ্ঞসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোরও কার্যকর কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মিয়ানমার সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের হত্যা ও বিতাড়নের ক্ষেত্রেও আমরা তাদের একই আচরণ দেখেছি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো মুখে মুখে হম্বিতম্বি করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। মিয়ানমার তাদের এই হম্বিতম্বিকে থোড়াই কেয়ার করে রোহিঙ্গা গণহত্যা চালিয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে, বিশ্বে মুসলমানদের উপর হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন নেমে এলে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো নির্বিকার থাকে। তাদের আচরণে প্রতীয়মান হয়, মুসলমান নিধন করলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না, কিংবা স্বার্থ বিবেচনায় প্রতিবাদ করে ক্ষান্ত হয়। ফিলিস্তিনীদের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ভুলুণ্ঠিত হলেও তাতে তাদের কিছু যায় আসছে না। আমরা মনে করি, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কার্যকর প্রতিবাদ ও প্রতিকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই। ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানে টু স্টেট বা দুই রাষ্ট্রের যে পলিসি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করলে পারস্পরিক সহাবস্থান ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ধরি মাছ না ছুঁই পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর একচোখা নীতি পরিহার করতে হবে। আমরা অবিলম্বে সংঘাতের অবসান চাই। আশা করি, ইসরাইল যেমন হামলা ও হত্যাকান্ড বন্ধ করবে তেমনি হামাসও তার হামলা বন্ধ করবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইল


আরও
আরও পড়ুন