Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক-মহাসড়কে উন্নতমানের উপকরণ ব্যবহার করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের বড় অংশই ব্যয় করা হয় সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে। এ খাতে ব্যয়িত টাকার কত অংশ টেকসই উন্নয়নে, কতটা অপচয় লুটপাটে চলে যায় তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সড়ক-মহামড়ক ও সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় বাংলাদেশে। বছরের পর বছর ধরে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে নিম্নমানের অবকাঠামো। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানি রির্পোটের পরও এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। সড়ক-মহাসড়কে এখনো নিম্নমানের কাজ ও উপকরণ ব্যবহারের ধারাবাহিক প্রবণতা রয়ে গেছে। সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ বিটুমিনের সঠিক মান নিশ্চিতকরণে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় এবং অবাধে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করে তার সাথে ভেজাল মিশিয়ে ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ না হওয়ায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মানের পর বছর না ঘুরতেই খানাখন্দক সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে।

গতকাল একটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে অবাধে ভেজাল ও নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি ও অবাধ ব্যবহারের তথ্য উঠে এসেছে। এতে যেমন মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রার অপচয় ও মানিলন্ডারিং হচ্ছে, তেমনি টেকসই উন্নয়ন ব্যহত, উন্নয়ন খাতের টাকা অসাধু ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের পকেটে চলে যাচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা কাটানো যাচ্ছে না। অল্পদিনে রাস্তা ভেঙ্গে খানাখন্দক সৃষ্টি হওয়ায় জনদুর্ভোগ এবং দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী আমদানি, ভেজাল মিশ্রণ ও ব্যবহার বন্ধে পণ্য আমদানি, খালাস ও ব্যবহারের প্রতিটি ধাপে যথাযথ ল্যাবরেটরি টেস্ট ও মাননিয়ন্ত্রণের কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করে মাসের পর মাস ধরে খোলা স্থানে ডাম্পিং করে রাখা হচ্ছে। মানহীন এসব বিটুমিন ধূসর রঙের হওয়ায় রঙ কালো ও ঘন করতে গিলসোনাইড মাটির মিশ্রন যোগ করা হয়। এছাড়া আমদানি করা বিটুমিন গলিয়ে ভেজাল মিশিয়ে রি-প্যাক করার কারণেও বিটুমিনের স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরণের বিটুমিন ও মানহীন বালি ও পাথর ব্যবহারের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক-মহাসড়ক ৬ মাসের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ গ্রামীণ রাস্তা থেকে শুরু করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ অন্যান্য মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেখা যায়, অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো ভেঙ্গে বেহাল হয়ে পড়ছে। এতে জনগণের অর্থের অপচয় হলেও সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী হচ্ছে না।

নি¤œমানের বিটুমিন আমদানি ও যথাযথ মাননিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত এবং উন্নত মানের উপকরণ ব্যবহার বন্ধ না করলে নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণের প্রবণতা রোধ করা অসম্ভব। বলা বাহুল্য, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়টি ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের যোগসাজসে কিংবা ঘুষ বাণিজ্যের কারণে টেকসই সড়ক নির্মাণ ব্যহত হচ্ছে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের ফলে কিছুদিন না যেতেই সড়ক ভেঙ্গে যায় এবং পুনরায় তা মেরামতের প্রয়োজন পড়ে। সাধারণত কোনো সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত মেরামতের প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে সড়ক নির্মাণের সাথে জড়িতরা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় তা অল্প সময়ে বেহাল দশায় উপনীত হচ্ছে। নতুন করে সংস্কারের প্রয়োজন পড়ছে। সড়কগুলো যেন অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। নিম্নমানেরবিটুমিন ব্যবহার বন্ধে ২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের তরফ থেকে একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছিল। প্রজ্ঞাপণে সড়ক-মহাসড়ক নির্মানে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহারের কথা বলা হলেও এর মান নিশ্চিত করতে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের সময় বিটুমিন, পাথর, বালির যথাযথ মান এবং ব্যবহারের পদ্ধতি ঠিক রাখতে যথাযথ তদারকি ও মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে টেকসই সড়ক নির্মাণ সম্ভব। এক্ষেত্রে নি¤œমানের বিটুমিন ও উপকরণ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিটুমিনে ভেজাল মেশানোর যেসব কারখানা গড়ে উঠেছে সেসব বন্ধ করতে হবে। সড়কের পাথর, বালি ও বিটুমিনের যথাযথ অনুপাত ও পুরুত্ব নিশ্চিত করতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়া সড়ক-মহাসড়ক প্রকল্পের সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও মানহীন কাজের প্রমান পাওয়া গেলে জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে মানসম্মত বিটুমিন, পাথর, বালি, সিমেন্ট ও রড ব্যবহারের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় ও জনদুর্ভোগ বন্ধ করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • Dadhack ২১ মে, ২০২১, ২:৩৪ পিএম says : 0
    No matter how many time you people write in the newspaper nothing will happen, We need to rule by Qur'an then all these criminal will not dare to commit any crime.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন